ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা কাপ ফুটবল

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি আজ ব্রাদার্স-শেখ রাসেল

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি আজ ব্রাদার্স-শেখ রাসেল

রুমেল খান ॥ একদিকে ২০০৫ আসরের রানার্সআপ ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড। অন্যদিকে ২০১২ আসরের চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র লিমিটেড। কে জিতবে আজ বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত ‘স্বাধীনতা কাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে? প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের দশম আসরের। সেই সঙ্গে জমেও উঠেছে আসরটি। একাধিক ম্যাচে বেশকিছু উঁচুমানের এবং দৃষ্টিনন্দন গোল হয়েছে। খেলার মানও বেশ আক্রমণাত্মক এবং সন্তোষজনক। বিদেশী ফুটবলারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশী ফুটবলাররা গোল করছেন, গোল করাচ্ছেন। আজকের প্রথম সেমির ম্যাচেও এমন কিছু চাক্ষুস করা যাবে বলেই মনে করছেন ফুটবলপ্রেমীরা। শক্তির বিচারে শেখ রাসেলের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ব্রাদার্সকে একেবারেই অগ্রাহ্য করা যাবে না। ক্লাবটির বয়স নেহায়েত কম নয়। প্রতিষ্ঠার সময় সেই ১৯৪৯ সালে, গোপীবাগে। ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’ খ্যাত ব্রাদার্স তাদের দীর্ঘ ৬৯ বছরের যাত্রাপথে মোট শিরোপা জিতেছে ৮টি। এগুলো হলো : প্রিমিয়ার ডিভিশন লীগ দু’বার (২০০৩-০৪ এবং ২০০৫), ফেডারেশন কাপ তিনবার (১৯৮০, ১৯৯১, ২০০৫), আগা খান গোল্ড কাপ একবার (১৯৮১-৮২), বরদুলই ট্রফি একবার (২০০৪) এবং জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ একবার (২০০৪)। ঘরোয়া আসরে তারা কেবল দুটি ট্রফিই এখন পর্যন্ত হাসিল করতে পারেনি। সুপার কাপ এবং স্বাধীনতা কাপ। তবে ২০০৫ সালে স্বাধীনতা কাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল গোপীবাগের দলটি। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়াতে সেবার তারা ফাইনালে ০-২ গোলে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ মুক্তি-যোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের কাছে। একযুগেরও (১৩ বছর) বেশি সময় পর আবারও স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের ফাইনালে ওঠার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে তাদের। তবে সে জন্য আজ তাদের হারাতেই হবে শেখ রাসেলকে। ব্রাদার্সের মূলশক্তি তাদের অভিজ্ঞ-বর্ষীয়ান-তারকা কোচ ভারতের সৈয়দ নাঈমউদ্দিন। বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি ব্রাদার্সের হাল ধরেছেন। তার হাত ধরেই ব্রাদার্স ২০০৫ সালে লীগ ও ফেডারেশন কাপ জেতার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। গত মৌসুম অবশ্য নাঈমউদ্দিন ব্রাদার্সের কোচ ছিলেন না। তার পরিবর্তে দু’জন বিদেশী কোচ এনেও প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি ক্লাবটি। ‘পুরনো চালে ভাত বাড়ে’... হয়তো এই প্রবাদটির মর্মার্থ বুঝতে পেরেই ব্রাদার্স আবারও ফিরিয়ে এনেছে নাঈমউদ্দিনকে। তিনি কোচ হয়ে আসার পরেই বেশ ভাল খেলছে ব্রাদার্স। এবারের আসরে তারা ছিল ‘সি’ গ্রুপে। সেখানে তারা মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে পরের ম্যাচে শক্তিশালী ফেবারিট ঢাকা আবাহনীকেও রুখে দেয় গোলশূন্য ড্র করে। গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে পা রাখে শেষ আটে। সেখানে তারা এই আসরের সেরা ম্যাচটি খেলে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, গতিশীল, শ্বাসরুদ্ধকর এবং উপভোগ্য ম্যাচে তারা টাইব্রেকারে (সাডেন ডেথে) ৪-৩ গোলে হারায় গত আসরের চ্যাম্পিয়ন আরামবাগ ক্রীড়া সংঘকে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট এবং অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে উভয় দলই ৩-৩ গোলে ড্র করে। ব্রাদার্সের কৃতিত্ব ছিল ওই ম্যাচে তারা দশজন নিয়ে খেলেও ম্যাচটি টাইব্রেকার পর্যন্ত নিয়ে যায়। যে দল গতবারের শিরোপাধারীদের বিদায় করে দিতে পারে, সেই দলকে সমীহ করতে বাধ্য শেখ রাসেল। ক্লাবটির জন্ম ১৯৯৫ সালে। ২৩ বছরের ইতিহাসে ‘বেঙ্গল ব্লুজ’ খ্যাত রাসেলের অর্জন হচ্ছে তিনটি শিরোপা জয় এবং সবগুলোই ২০১২ সালে। ১৯৮২ সালে মোহামেডানের পর রাসেল দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে ওই ঐতিহাসিক ‘ট্রেবল’ জেতে। শিরোপাগুলো হলো : প্রিমিয়ার লীগ, ফেডারেশন কাপ এবং স্বাধীনতা কাপ। ছয় বছর পর আবারও স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে ওঠার পথে আজ ব্রাদার্সকে হারানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই রাসেলের। দলের কোচ সাইফুল বারী টিটু। টিটুর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছেÑ রক্ষণাত্মক স্টাইলে দলকে খেলানোর মানসিকতা। ব্রাদার্সের সঙ্গে আগে গোল করে লিড নিয়ে যদি টিটু আবারও দলকে ডিফেন্সিভ খেলান তাহলে সেটা দলের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে বলে ধারণা ক্লাবটির সমর্থকদের। এই আসরে ‘ডেথ’ গ্রুপে ছিল রাসেল। বসুন্ধরা কিংস এবং শেখ জামাল ধানম-ি... দুটি দলের সঙ্গেই গোলশূন্য ড্র করে তারা। পাশাপাশি ‘ডি’ গ্রুপ থেকে কোন জয় না পেয়ে ও কোন গোল না করেও গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে তারা নাম লেখায় কোয়ার্টারে। সেখানে তারা গত আসরের রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারায় ২-০ গোলে। এখন দেখার বিষয়, আজকের খেলায় জিতে কাক্সিক্ষত ফাইনালে নাম লেখায় কারাÑ নাঈমউদ্দিন নাকি টিটুর শিষ্যরা।
×