ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর শেরেবাংলায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ও শনিবার তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচ

ঢাকায় টি২০ সিরিজ বাঁচানোর লড়াই টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ঢাকায় টি২০ সিরিজ বাঁচানোর লড়াই টাইগারদের

মিথুন আশরাফ ॥ টি২০ ক্রিকেট মানেই হচ্ছে চার-ছক্কার ফুলঝুরি। প্রথম টি২০’র আগে অনুশীলনে দুই দলের ব্যাটসম্যানরা সেই মহড়া দেখিয়েছেনও। কিন্তু প্রথম টি২০তে বাজিমাত করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ৫৫ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়ে সিরিজে এগিয়ে গেছে তা সাই হোপের ঝড়ো ইনিংসেই সম্ভব হয়েছে। সেই ঝড় বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানরা তুলতে পারেননি। অথচ অনুশীলনের সময় তামিম ও লিটনের ডাউন দ্য উইকেটে এসে শট মারা, সৌম্যের ‘পেরিস্কুপ’ শট, মুশফিকের ‘স্কুপ’, আরিফুলের ‘হেলিকপ্টার’ শট আকর্ষণ কুড়িয়েছে। কিন্তু খেলায় ব্যাট হাতে নেমে সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। সেই ব্যর্থতায় বাংলাদেশকেও এখন টি২০ সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে নামতে হবে। অথচ টি২০ সিরিজ শুরুর আগে তিন ফরমেটের সিরিজে প্রথমবারের মতো সব ফরমেটের সিরিজে জেতার আশা দেখা হচ্ছিল। সেই আশা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তবে পথটাতো অনেক কঠিন হয়ে পড়ল। প্রথম টি২০তে এক সাকিব ছাড়া আর কেউই ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। এমন যদি অবস্থা বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় টি২০তে অথবা শনিবার তৃতীয় ও শেষ টি২০তে হয়; তাহলেতো সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই হয়ে যাবে। তখন তিন ফরমেটেই প্রথমবারের মতো জেতার সুযোগ আবারও হাতছাড়া হয়ে যাবে। অবশ্য বাংলাদেশ এর আগেও সিরিজে পিছিয়ে গিয়ে জেতার ক্ষমতা দেখিয়েছে। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি২০ সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সেই সিরিজেই বাংলাদেশ প্রথম টি২০তে হেরে পিছিয়ে পড়ে। এরপর টানা দুই টি২০ জিতে সিরিজ জয় করে। সেই কথা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কার্লোস ব্রেথওয়েটও মনে করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, অনেক বড় জয়। তবে এটি প্রথম ম্যাচে জয়। আমরা ক্যারিবিয়ানেও প্রথম ম্যাচটিতে জিতেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিরিজে হেরেছি। সিরিজকে এখনও শ্রদ্ধা করতে হবে। আনন্দ উদযাপনের কথা বললে বলতে হবে সিরিজ এখনও শেষ হয়নি। ঢাকায় (মিরপুরে) উইকেট স্লো থাকবে। বাংলাদেশ এখন সেরা দলগুলোর একটি। পরের ম্যাচগুলোর দিকেই তাই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম টি২০তে জিতেই উৎসব করতে নারাজ। সিরিজ যে এখনও শেষ হয়নি। বছরের শেষ সিরিজটি জেতার আশার কথা আগে থেকেই বলে রেখেছেন ব্রেথওয়েট। সামনেই ক্রিসমাস। এর আগে দেশের মানুষকে সিরিজ জয় উপহার দিতে চান ব্রেথওয়েট। তিনি বলেছিলেন, ক্রিসমাসের একটা উপহার আমাদের কাছ থেকে ডিজার্ভ করে আমাদের দেশের জনগণ। আশাকরি টি২০ সিরিজ জিতে বছরটা শেষ করতে পারব। টি২০ আমাদের জন্য আদর্শ সংস্করণ। আমরা নিশ্চিতভাবেই সম্প্রতি ভাল কোন ফলাফল দিতে পারিনি। বছরটা জয়ে শেষ করার উপলক্ষ ভালভাবে কাজে লাগাতে চেষ্টা করব। সেই চেষ্টায় প্রথম টি২০তে সাফল্য পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোলিং ও ব্যাটিং; দুইদিকেই বাংলাদেশকে পেছনে ফেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার দ্বিতীয় টি২০তেই জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয়ার চেষ্টা করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু বাংলাদেশ কী তা করতে দেবে? প্রথম টি২০তে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতাই শুধু চোখে পড়েছে বাংলাদেশের। ১২৯ রানের বেশি করতে পারেনি দল। অথচ যে উইকেট তাতে ১৭৫ রান হতে পারত। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা অহেতুক শটে একের পর এক আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। তাতে ক্ষেপেছেন অধিনায়ক সাকিব। বলেছেন, টস ছাড়া কিছুই আমাদের (প্রথম টি২০তে) ঠিকঠাক হয়নি। আমরা ভাল ব্যাট করিনি। ভাল বল করিনি। উইকেট বেশ ভাল ছিল। অন্তত ১৭৫ রান করা উচিত ছিল আমাদের। অন্য ব্যাটসম্যানদের জিজ্ঞেস করা উচিত, কেন তারা ভাল ব্যাট করেনি। সবার হয়ে উত্তর আমি দিতে পারি না। কিছুই কাজে লাগেনি আজ। যেটাই চেষ্টা করেছি আমরা, সফল হইনি। এই ম্যাচ থেকে অনেক শেখার আছে। সাকিবের এমন জ্বালাময়ী কথায় যদি এখন ব্যাটসম্যান-বোলারদের মধ্যে জেদ কাজ করে। প্রথম টি২০’র ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি এখন বাকি ম্যাচগুলো কিছু করে দেখাতে পারেন ক্রিকেটাররা, তাহলেই জেতা সম্ভব। শেলডন কটরেল যদি বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস গুঁড়িয়ে দিতে পারেন, সাই হোপ যদি ১৬ বলেই ৫০ রান করার রেকর্ড গড়তে পারেন; তাহলে বাংলাদেশ বোলার-ব্যাটসম্যানরা কেন পারবেন না? তাদের সেই সক্ষমতা আছে। এখন তা মাঠে দেখানোর অপেক্ষা শুধু। জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে প্রথম টি২০তে হারের পর টানা দুই ম্যাচে জিতে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সেই সিরিজ থেকে প্রেরণা নিয়ে এখন এবারের সিরিজেও একই ফল করে দেখাতে পারলেই হয়। বাংলাদেশ কী পারবে তা করতে? খুবই সম্ভব। আর এই সম্ভব কাজটি হয়ে গেলেই নিজেদের ইতিহাসে একটি নতুন সাফল্যের পালক যুক্ত করবে বাংলাদেশ। টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৫১টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোন পূর্ণাঙ্গ সিরিজের তিন ফরমেটেই জেতার ইতিহাস নেই। এবার বাংলাদেশের সামনে সেই ইতিহাস গড়ার সুযোগ এখনও আছে। প্রথম টি২০তে হারলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০তে জিতলেই সেই ইতিহাস নিজেদের করে নিতে পারবে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত তিন ফরমেটের ১৭টি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। একটিও জিততে পারেনি। তবে জেতার সুবর্ন সুযোগ একাধিকবার হাতছাড়া করে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ফরমেটেরই পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে জেতা গেলেও টি২০ সিরিজে হেরে যায় বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে পাকিস্তানকে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজে হারানো গেলেও টেস্ট সিরিজে হার হয়ে যায়। এই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ জেতা গেলেও টেস্ট সিরিজে হার হয়। সেই দলের বিপক্ষেই এবার টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ জেতা হয়ে গেছে। এবার টি২০ সিরিজে পিছিয়ে থেকেও সিরিজ জেতা গেলে প্রথমবারের মতো সব ফরমেটের একটি সিরিজে জিতবে বাংলাদেশ। তার আগে আসলে বাংলাদেশকে সিরিজ বাঁচানোর কঠিন পরীক্ষাতেই যেন নামতে হবে।
×