ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কপ-২৪ সম্মেলনে ঐকমত্য

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

কপ-২৪ সম্মেলনে ঐকমত্য

পোল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কাতোভিচে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই সপ্তাহব্যাপী এক সম্মেলনে অংশ নেয়। কপ-২৪ নামের এই আয়োজনটি মূলত বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ২০০টি দেশের সম্মিলিত উদ্যোগের এক বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা। শনিবার ১৫ ডিসেম্বর এই মহতী অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্যায়ে জলবায়ু ভারসাম্যতায় সারাবিশ্বের উষ্ণতাকে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নামানোর সিদ্ধান্তে প্রত্যেক দেশই একমত পোষণ করে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে মূলত ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রাকে নির্ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। ২০১৫ সালে বিশ্বের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় কপ-২৩তম সম্মেলন। ৩ বছর আগে হয়ে যাওয়া এই আন্তর্জাতিক সমাবেশেও বিশ্বের দু’শ’টি দেশ যোগ দেয়। সাড়া জাগানো শিল্প বিপ্লব, যা কিনা জলবায়ুর ভারসাম্যতাকে নানামাত্রিকে বিপন্ন করে দেয়, সেখান থেকে অতি আবশ্যিকভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কমে নামিয়ে আনতে না পারলে আরও বিপর্যয় অপেক্ষা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই বার্ষিক সম্মেলনের ২৪তম সভায় পোল্যান্ডে জড়ো হওয়া এই আন্তর্জাতিক সমাবেশে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের যৌক্তিক নির্দেশিকা গ্রহণ করে এই কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন আশা প্রকাশ করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা যান্ত্রিক কলাকৌশল, প্রযুক্তিবিদ্যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে যে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয়, তাকেও নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তবে কার্বন বাজারের হুমকি সম্মেলনের ধারাবাহিকতাকে সাময়িক সমস্যায় ফেললেও মিলিত হওয়া প্রতিনিধিরা তাকে অতিক্রম করতে বিশেষ বেগ পায়নি। ফলে শেষ অবধি সমাপনী পর্যায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে। আলোচকরা বিভিন্ন অধিবেশনে কপ-২৩তম অনুষ্ঠানের জলবায়ু নির্ধারণের নীতিমালা নতুন করে পর্যালোচনা করে কর্মসূচী বাস্তবায়নের ওপর সবার সম্মিলিত অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে এত বড় আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয় সারাবিশ্বে উষ্ণতা প্রশমনে নিজেদের সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন। তবে এই আশঙ্কাও ব্যক্ত করা হয়, বৈশ্বিক তাপমাত্রার ভারসাম্য আনতে এমন পদক্ষেপও অনেক সমূহ বিপর্যয়কে সামলাতে পারবে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ জন্য সর্বক্ষণিক সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি জরুরী। জাতিসংঘের মহাসচিব এ্যান্তোনিও গুতেরেস আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেন বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে যে প্যারিস চুক্তি, তাকে যথার্থভাবে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে তা মূলত সবার জন্য আত্মঘাতী হবে। শুধু তাই নয়, চলতি এই কপ-২৪তম সম্মেলন তার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে না পারলে সবুজ অর্থনীতিকে ধরাও সুদূর পরাহত হবে। সুতরাং ক্রমবর্ধমান এই জলবায়ু বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে এটাই শেষ সুযোগ বলে মহাসচিব তার সুচিন্তিত মতামত প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি কিছুটা হতাশ হয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি এক সঙ্গে মিলিত হওয়া ছাড়া। সুতরাং আর সময় নষ্ট করা মানে মারাত্মক বিপদসমূহকে সাদরে বরণ করা। বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাও সতর্ক করে দেন সবাইকে এই বলে, জলবায়ুর লাগাম টেনে ধরার সর্বশেষ সুযোগ এই মুহূর্তে বর্তমান প্রজন্মের হাতে। আর এই প্রজন্ম যদি হাল ধরতে ব্যর্থ হয় তবে আমরাই হব সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। শুধু তাই নয়, এই কপ-২৪তম সম্মেলনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ১০ হাজার কোটি ডলারের একটি তহবিল প্রদানেরও আশ্বাস প্রদান করে।
×