স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি এই দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দায়ের করা তিনটি রিট আবেদনই খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। এর ফলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকল না বলে জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল । বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক বেঞ্চ (তৃতীয় বেঞ্চ) মঙ্গলবার খালেদার আইনজীবীদের আবেদন তিনটি খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে এ বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে যে আবেদন তারা করেছিলেন, তাও খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট।
এ আদেশের পর ইসির পক্ষের আইনজীবী এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ খারিজাদেশের ফলে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এর আগে তৃতীয় বেঞ্চের প্রতি খালেদার অনাস্থার আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। খারিজের পর রিট শুনানি করতে বললে খালেদার আইনজীবীরা তাতে রাজি হননি। পরে ইসির পক্ষে মাহবুবে আলম শুনানি করলে খালেদার আইনজীবীরা আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদেশের পর ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা হাইকোর্টের আদেশের পর পরবর্তী কি করণীয় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। সিনিয়র আইনজীবীগণ বসে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
১১ ডিসেম্বর বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ ও বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়ার রিট আবেদনে বিভক্ত আদেশ দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রুলসহ মনোনয়নপত্র গ্রহণের আদেশ দিলেও বেঞ্চের অপর বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবির তা নাকচ করেন। হাইকোর্টের দেয়া ওই বিভক্ত আদেশের কপি এবং সংশ্লিষ্ট নথি প্রধান বিচারপতির কাছে ওই দিনই পাঠানো হয়। পরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ১২ ডিসেম্বর বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করে দেন। ১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় ওই বেঞ্চে মামলা তিনটির শুনানি শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী মৌখিকভাবে অনাস্থা জানান। শুনানির শুরুতেই এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আপনার আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা নেই। এর পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, উনারা এ কথা এ আদালতে বলতে পারেন না। প্রধান বিচারপতিকে বলতে পারতেন। কালক্ষেপণের কৌশল থেকে এই অনাস্থা জানিয়েছেন। এ পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী বৃহস্পতিবার বিষয়টির শুনানি না করার আরজি জানালে আদালত তাতে সম্মতি দিয়ে সোমবার পর্যন্ত মুলতবি রাখেন। পরবর্তীতে লিখিতভাবে বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীগণ। এর পর মঙ্গলবার বিষয়টি শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়। মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত ওই রিট আবেদন খারিজ করে দেয়।
খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে তিন আসনের মনোনয়নপত্রই বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এর বিরুদ্ধে করা আপীলও গত ৮ ডিসেম্বর নামঞ্জুর করে ইসি। পরে ইসির সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে পৃথক তিনটি রিট করেন খালেদা জিয়া। দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির দুই মামলায় মোট ১৭ বছরের কারাদ- নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
৩০ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কারাবন্দী দুই আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের ১০ বছরের কারাদ- বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক থাকায় নি¤œ আদালতের দেয়া ১০ বছর করে সশ্রম কারাদ- বহাল রয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় প্রদান করেন।
অন্যদিকে ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াসহ চার আসামির সবাইকে সাত বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান করে আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াসহ প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদ-ের আদেশ দিয়েছে আদালত। মামলার অপর তিন আসামিকেও ৭ বছরের কারাদ-সহ প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদ- দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া ট্রাস্টের নামে কেনা ৪২ কাঠা জমি বাজেয়াফত করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে নেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এটিই সর্বোচ্চ শাস্তি। একই সঙ্গে দ-বিধির ১০৯ ধারায় আসামিদের শাস্তি দেয়া হয়। বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
সংবিধানেও স্পষ্ট বলা আছে, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কেউ নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর কাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে, তবে তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না।