ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল করতে চাই ॥ প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল করতে চাই ॥ প্রধান বিচারপতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, দেশের আদালতসমূহে মামলা দায়েরের পরিমাণ এখন আগের দশকের চেয়েও অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু যে হারে মামলার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সে হারে বিচারকের সংখ্যা বাড়েনি। বাড়েনি অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা। ফলে বিচারকদের মামলা নিষ্পত্তি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। এতে আরও বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন প্রমুখ। এসময় সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি থাকলেও অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি। প্রধান বিচারপতি বলেন, এখন আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সুপ্রীমকোর্ট ও অধস্তন আদালতসমূহের দৃঢ় অবস্থান জনগণের মধ্যে আদালত সম্পর্কে গভীর আস্থার সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে জনগণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি অধিকার সচেতন। আমরা সরকারের সহযোগিতা নিয়ে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল করতে চাই। যাতে বিচারপ্রার্থী জনগণের সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হয় এবং বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সুপ্রীমকোর্ট ও অধস্তন আদালতসমূহের দৃঢ় অবস্থান জনগণের মধ্যে আদালত সম্পর্কে গভীর আস্থার সৃষ্টি করেছে। এ দুয়ের কারণে দেশের আদালতসমূহে মামলা দায়েরের পরিমাণ এখন আগের দশকের চেয়েও অনেক বেড়ে গেছে। প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই অবস্থা হতে উত্তোরণের লক্ষে আমি অনেকগুলো ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। অধস্তন আদালতসমূহে মূলমামলার নিষ্পত্তি বৃদ্ধি কল্পে জামিন ও অন্তর্বর্তীকালীন বিষয়াবলী শুনানি দিবসের দ্বিতীয়ভাগে এবং মূলমামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ দিবসের প্রথমভাগে করার জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি। সুপ্রীমকোর্ট হতে এই বিষয়ে একটি সার্কুলার ইস্যু করা হয়েছে। ফলে মূলমামলার নিষ্পত্তি উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুপ্রীমকোর্টকে সংবিধান ১০৯ অনুচ্ছেদে যে ক্ষমতা প্রদান করেছে তদবুনিয়াদে সুপ্রীমকোর্ট হতে সব সময় মনিটর করা হচ্ছে যেন অধস্তন আদালতসমূহ তাদের কর্মঘণ্টার সবটাই বিচারিক কাজে ব্যবহার করে এবং অনর্থক যেন মামলার শুনানি মুলতবি না করে। আমার উদ্যোগের ফলে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে উচ্চ ও অধস্তন আদালতসমূহে মোট দায়ের হওয়া ১৩,৭১,৪৫৬টি মামলার বিপরীতে ৮৮৬,২৯৬টি মামলা ইতোমধ্যেই নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে মামলার ক্লিয়ারেন্স রেট ৬৪.৬২ শতাংশ। মাত্র ১৭০০ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ জুডিসিয়ারির জন্য এটি একটি মাইলফলক অর্জন বলে আমি মনে করি। হাইকোর্ট বিভাগে প্রতি বৃহস্পতিবার ১৪টি বেঞ্চে মিস মামলা শুনানির নির্দেশ দিয়েছি। এতে জমে থাকা মামলার পরিমাণ কমে যাবে এবং মূলমামলা নিষ্পত্তিতে অধিক সময় ব্যয় করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর তথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই শিক্ষা নিয়েছিলেন যে, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন শক্তিশালী, স্বাধীন ও জনগণের আস্থাশীল বিচার বিভাগ। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের পদে পদে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হলেও তিনি কখনও বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারান নি। আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল গভীর আস্থা। ছিল পরম শ্রদ্ধা। বিচার বিভাগের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ থেকেই তিনি বাংলাদেশ সংবিধানে বিচার বিভাগকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে গেছেন। তিনি ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই বছরেরই ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে সকালে কেক কেটে সুপ্রীমকোর্ট দিবস- এর উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি। সেইসঙ্গে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীরও উদ্বোধন করেন তিনি। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করে।
×