বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩০ তারিখে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার আওয়ামী লীগের বিজয়কে নিশ্চিত করার জন্য দেশবাসীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে বলেছেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেব। আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করব। বিজয়ের মাসে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বাঙালী জাতি এবার স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনবে- এ বিশ্বাস আছে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ।
এক দশকে সরকার পরিচালনায় কোন ভুল হয়ে থাকলে তা ‘ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে’ দেখার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে উদ্দেশে করে আরও বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কাজ করতে গিয়ে আমার, আমার সহকর্মীদেরও ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। আমি নিজের এবং দলের পক্ষ থেকে আমাদের ভুল-ভ্রান্তিগুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার জন্য দেশবাসীর প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা সাড়ম্বরে পালন করব। বাঙালী জাতির এই দুই মাহেন্দ্রক্ষণ সামনে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে। স্বাধীনতা-বিরোধী কোন শক্তি এ সময় রাষ্ট্র-ক্ষমতায় গেলে তা হবে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গ্লানিকর।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। বাবা-মা-ভাই, আত্মীয়-পরিজনকে হারিয়ে আমি রাজনীতি করছি শুধু জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য; এ দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। এদেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালভাবে বাঁচতে পারেন, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী হতে পারেন- তা বাস্তবায়ন করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। ভোটারদের উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করব। জাতির পিতার কাঙ্খিত ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ ‘টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। আমাদের এবারের অঙ্গীকার আমরা টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করব। এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জনগণ কিছু পায়। সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা ও সমৃদ্ধির সকল সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়।
‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই ইশতেহারে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত দুই মেয়াদে সরকারের সাফল্য এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের ইশতেহারে আওয়ামী লীগের ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার এসেছে, তার শুরুতেই রয়েছে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া এবং যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি। এছাড়া বিগত বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন, অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি, লুণ্ঠন এবং বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের কথাও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে অনুষ্ঠানের মঞ্চে এসে শেখ হাসিনা প্রথমেই স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লাখ নির্যাতিত নারী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানদের এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদেরও তিনি স্মরণ করেন।
সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রকাশের অনুষ্ঠান। শুরুতেই আওয়ামী লীগের শাসনামলের উন্নয়ন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি। আরও বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ছাড়াও কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ইশতেহার ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১০ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীকে লক্ষ্য করে আমরা নির্বাচনী ইশতেহার রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিলাম। যার মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করে রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছিলাম। আমরা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার পরিচালনার ম্যান্ডেট দিয়ে সেই রূপকল্প বাস্তবায়নের কর্মযজ্ঞকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। সাফল্যের সবটুকু আপনাদের অবদান। তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ আর্থিক দিক থেকে যেমন শক্তিশালী, তেমনি মানসিকতার দিক থেকে অনেক বলীয়ান। ছোট-খাটো অভিঘাত বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে পারবে না।
সরকার প্রধান বলেন, ২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা দিয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছে। মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৭৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ওপর। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। বিগত দশ বছরে বাংলাদেশের জিডিপি’র আকার প্রায় ৫ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি থেকে প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে ৩১তম। এইচবিএসসি’র প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ প্রায় ৭ দশমিক ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল মাত্র ১০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভূখ-ের যা কিছু মহৎ অর্জন ও প্রাপ্তি, সবকিছু অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধিকার এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার উৎখাত এবং ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার আগে তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পরবর্তী শাসকেরা বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল ভিক্ষুকের দেশে পরিণত করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল। এ সময়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবে। বাংলাদেশ মানেই ছিল বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, কঙ্কালসার মানুষের দেশ। একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। একুশ বছর পর আবার বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পায়, জনগণের সরকার পায়। তিনি বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল, এই ৫ বছর ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ। আর্থ-সামাজিক খাতে দেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করে। এ সময় আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি এবং ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি স্বাক্ষর করি। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করি এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করি।
তিনি বলেন, ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। ২০০১-পরবর্তী ৫ বছর ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য এক বিভিষীকাময় সময়। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে জনজীবন ছিল অতিষ্ঠ। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার, খুলনার এ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, নাটোরের মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। হাওয়া ভবন তৈরি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট এবং বিদেশে পাচার করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাভাই, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদসহ নানা জঙ্গীগোষ্ঠী সৃষ্টি করা হয়। যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠান, রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিস এবং পল্টনে সিপিবি’র সভায় বোমা হামলা, সিলেটে ব্রিটিশ হামকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ও আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বোমা হামলা করে হত্যার চেষ্টা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে প্রায় ৫শ’ স্থানে একযোগে বোমা হামলা, একই বছর গাজীপুরে বার ভবনে বোমা মেরে ১০ জন হত্যা, শরীয়তপুরে দুই বিচারক হত্যাসহ সারাদেশে অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে এসব জঙ্গী গোষ্ঠী।
তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগের র্যালিতে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালোনো হয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রাণে রক্ষা পেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং ৫০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়। আহতদের অনেকেই এখনও শরীরে অসংখ্য স্পিøন্টার নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় জীবনযাপন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা আবারও ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগান সংবলিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমরা আমাদের ইশতেহার এমনভাবে তৈরি করেছি যাতে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারি। একইসঙ্গে ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে।
সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোন আইনের অপপ্রয়োগ হবে না এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিথ্যা তথ্য প্রচার ও অনাকাক্সিক্ষত গুজব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা সমৃদ্ধ সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা হবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় সাংবাদিকদের উৎসাহ প্রদান ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। গণমাধ্যমবান্ধব আইন করা হবে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোন আইনের অপপ্রয়োগ হবে না। তবে সাংবাদিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের জন্য ফ্লাট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রস্তাবিত ২১তলা বিল্ডিং নির্মাণে সহায়তা প্রদান করা হবে।
ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির যেসব ধারা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমিতে প্রকৃতি স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনর্প্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও ব্যবস্থার অবসান করা হবে।
