ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাপানের নতুন উচ্চাভিলাষ

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

জাপানের নতুন উচ্চাভিলাষ

প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাপান। আগামী পাঁচ বছর দেশটি স্টেলথ জঙ্গী বিমান ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামাদি কিনবে। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের সামরিক প্রভাব বাড়ানোর ফলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। জাপানের সামরিক ব্যয় বাড়ানো মার্কিন বাহিনীর জন্য সহায়ক বলে দুটি নতুন জাপানের প্রতিরক্ষা নীতিতে একথা জানানো হয়েছে। গার্ডিয়ান। জাপানের মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার নতুন প্রতিরক্ষা নীতি অনুমোদন করেছে। জাপানের হাতে বর্তমানে হেলিকপ্টারবাহী রণতরী রয়েছে। টোকিও এ দুটোকে বিমানবাহী রণতরীতে রূপান্তরিত করতে ইচ্ছুক। দেশটির এ পদক্ষেপ স্বাভাবিকভাবেই চীনের উদ্বেগ বাড়াবে। জাপানের সামরিক দিক থেকে প্রভাবশালী হতে চায়। দেশটির সর্বশেষ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে। প্রতিবেশী চীন ও রাশিয়া যেভাবে সামরিক উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠেছে তার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক মিত্র জাপানের ওপর পড়বে, এটি অনেকটা অনুমান করা যায়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে মঙ্গলবার ১০ বছর মেয়াদী প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। আবে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। তবে আঞ্চলিক দেশগুলো যেভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে মনোযোগী হয়ে উঠেছে সেটি আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সক্রিয় শান্তিবাদী নীতির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আরও অবদান রাখতে পারব বলে আশা করছি। এটা আমাদের দেশের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা নীতির স্বচ্ছতা তুলে ধরেছে।’ চীন ও রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে আবে বলেন, এই দেশগুলোর কথা জাপানকে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। ওই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার কথা বিবেচনায় রেখে সর্বশেষ প্রতিরক্ষা নীতি ঠিক করা হয়েছে। জাপানের এ উদ্যোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বেজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়ং বলেন, ‘জাপান পুরনো দিনের বাঁশী বাজাতে শুরু করেছে এবং চীনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ‘কঠোর মন্তব্য’ করেছে। চীন জাপানের এ উদ্যোগে গভীর অসন্তোষ ও হতাশা ব্যক্ত করে। রাশিয়া সোমবার জানিয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে তারা জাপানের কাছ থেকে যে দুটি দ্বীপ অধিগ্রহণ করেছে সেখানে সামরিক ব্যারাক তৈরি করা হবে। জাপানের মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার যে নতুন প্রতিরক্ষা নীতি অনুমোদন করে তাতে ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ৪৫টি লকহিড মার্টিন কোর এফ-৩৫ স্টেলথ জঙ্গী বিমান কেনার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া পৃথকভাবে আরও ৪২টি ফাইটার জেট বিমানের অর্ডার দেয়া হবে। পূর্ব চীন সাগরে বিমানগুলো মোতায়েন করা হবে। প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। টোকিওর সামরিক দিকে মনোযোগ দেয়ার অন্যতম কারণ চীন। চীন ক্রমেই নিজের ক্ষমতার বলয় বাড়াতে থাকায় জাপানের উদ্বেগ বেড়েছে। পূর্ব চীন সাগরে বেশকিছু জনবসতিহীন দ্বীপের মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ চলছে। পাশাপাশি উত্তর কোরিয়াও জাপানের জন্য বড় হুমকি। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, টোকিও এমন একটি ‘গতিশীল যৌথ প্রতিরক্ষা বাহিনী’ গঠন করবে, কার্যকরভাবে বিমান, স্থল ও নৌবাহিনীকে সহায়তা করবে। গত এক দশক ধরে জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় হ্রাসের নীতি অনুসরণ করে। আগামী মার্চে শেষ হওয়া বর্তমান পাঁচ বছর মেয়াদে জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল ২৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন। এই পরিমাণ বাড়িয়ে আগামী পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য ২৪.৭ ট্রিলিয়ন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে ৭শ’ বিলিয়ন ইয়েন কাটছাঁট করতে পারবে।
×