ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ওপার বাংলায় সাধনা আহমেদের দুই নাটকের প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

ওপার বাংলায় সাধনা আহমেদের দুই নাটকের প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দুই স্থানে একই দিনে দুটি আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের অন্যতম নন্দিত নাট্যকার সাধনা আহমেদ রচিত ‘দমের মাদার’ এবং ‘মাতব্রিং’ নাটক দুটি মঞ্চস্থ হবে। আগামীকাল ১৯ ডিসেম্বর নাটক দুটি মঞ্চস্থ হবে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে নাট্যকার সাধনা আহমেদ জানান, আগামীকাল রবীন্দ্র সদনে ঋত্বিক বহরমপুরের দেশ-বিদেশের নাট্যমেলায় বাংলাদেশের নাট্যম রেপার্টরির ‘দমের মাদার’ নাটকের পঞ্চাশতম প্রদর্শনী হবে। একই দিনে শান্তিপুরের আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে ‘মাতব্রিং’ নাটকটির মঞ্চায়ন করবে বিবর্তন যশোর। সাধনা আহমেদ আরও বলেন, এটা আমার জন্য একটি আনন্দের ও গর্বের বিষয়। আমি বাংলাদেশের দুটি দলকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি তারা ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুণœ রাখবে। বাংলাদেশের নাট্যদল ও নাট্যকর্মীদের নিয়মিতভাবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভারতের নাট্যকর্মী ও নাট্য সংগঠনগুলোর প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতা এবং অভিনন্দন। বাংলাদেশের অন্যতম প্রশংসিত নাট্যকার সাধনা আহমেদ। তার রচনায় ওপার বাংলায় মঞ্চস্থ হতে যাওয়া দুটি নাটকের মধ্যে ‘দমের মাদার’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ড. আইরিন পারভীন লোপা। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন শিশির রহমান, শুভাশিষ দত্ত তন্ময়, পারভীন আখতার পারু, শামীমা আক্তার মুক্তা, ফজলে রাব্বি সুকর্ণ, দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপি, তাহমিনা খানম, মনোহর দাস, অমিতাভ রাজিবসহ আরও অনেকে। পরিমল মজুমদারের সঙ্গীত পরিচালনায় নাটকে ব্যবহৃত বিভিন্ন গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শিশির রহমান। দৃশ্য ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন জুনায়েদ ইউসুফ। ‘দমের মাদার’ নাটকে নাট্যকার সাধনা আহমেদ জীবনের একটি নিগূঢ় সত্যকে অনুসন্ধান করেছেন আর নির্দেশক আইরিন পারভীন লোপা সেই সত্যের প্রাণবন্ত ছবি এঁকেছেন অভিনয়শিল্পী ও কুশলীদের দিয়ে। যুগে যুগে কালে কালে ধর্মকে নিয়ে চলেছে নানা ধরনের ব্যবসা। দেশে দেশে ধর্মকে নিয়ে চলছে রাজনীতি আলাদা হয়ে যাচ্ছে মানুষ মানুষের কাছ থেকে। এ যেন এক অন্ধ রাহুর গ্রাস আর এই রাহু গ্রাস যুগ থেকে যুগান্তরে সুন্দরকে, সত্যকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। কিন্তু অসুন্দর, অসত্য কখনও মানব কল্যাণের পথে বা মানবতার পথের অন্তরায় হতে পারে না। নাট্যকার সাধনা আহমেদ এমনই এক ভাবনাকে তার নতুন ছন্দে বেঁধেছেন দমের মাদার নাটকে। বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতির সব চাইতে সমৃদ্ধ আঙ্গিক বাংলার লোকপালাসমূহ। যা মূলত লোকমুখে প্রচার বা প্রসার লাভ করছে হাজার বছর ধরে। তেমনি একটি পালা মাদার পীরের আখ্যান। মাদার পীরের এক ভক্ত সম্প্রদায়কে ঘিরে গড়ে উঠেছে দমের মাদার নাটকের গল্প। আংশিক সত্য একটি ঘটনাকে আশ্রয় করে নাট্যকার সাধনা আহমেদ লোক আঙ্গিক রীতিতে নাটকটি রচনা করেছেন। কিন্তু আইরিন পারভীন লোপা সেই লোক আঙ্গিক থেকে সরে এসে নাগরিক পরিবেশন রীতিকে অবলম্বন করেছেন। তাই লোক নাটক পরিবেশন রীতিতে মঞ্চের যে নিরাভরণ রীতি সেটা এখানে পাওয়া যায় না। আবার অভিনয় রীতির ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। অন্যদিকে সাধনা আহমেদ রচিত বিবর্তন যশোরের ‘মাতব্রিং’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান অর্ক। নাটকটির সঙ্গীত পরিকল্পনায় ইউসুফ হাসান অর্ক, পোশাক পরিকল্পনায় আইরিন পারভীন লোপা। শাহীন রহমানের আলোক পরিকল্পনায় নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন নির্দেশক নিজেই। আর কোরিওগ্রাফি করেছেন অদিতি সরকার রুমা। মান্দি জনগোষ্ঠীর দুই নর-নারীর অনবদ্য প্রেমকাহিনীকে আশ্রয় করেই নাটকের গল্প রচিত হয়েছে। নাটকটিতে আদিবাসী মান্দি পল্লীর ভোজের উৎসব নাচ-গান-আচার-বিশ্বাসসহ নানা উপকথা ঠাঁই পেয়েছে। জঙ্গল এখন আর ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যায় না। জঙ্গলের মালিক সরকার। এই সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব বেশ-বসন ছেড়ে নগর জীবনে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এই বিষয়টিও নাটকে তুলে ধরা হয়েছে।
×