ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তীরন্দাজ রোমান সানার স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

তীরন্দাজ রোমান সানার স্বপ্ন

রুমেল খান ॥ আগে থেকেই তার আছে চোখ ধাঁধাঁনো পাঁচটি রেকর্ড : আন্তর্জাতিক আরচারিতে বাংলাদেশী আরচার হিসেবে এককে সবচেয়ে বেশি (৪টি) স্বর্ণপদক অর্জন, প্রথম ও একমাত্র আরচার হিসেবে টানা তিন বছর জাতীয় আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক অর্জন, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি (৪টি) স্বর্ণপদক, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৪) এককে (রিকার্ভ) সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জন (৩৩৫, আগের রেকর্ডÑ ২০১০ আসরে ইমদাদুল হক মিলনের ৩৩৩ পয়েন্ট) এবং জাতীয় আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৭) রিকার্ভ ডিভিশনের পুরুষ এককে ২০১৬ সালের ৬৫২ স্কোরের নিজ রেকর্ড ভেঙ্গে ৬৫৪ স্কোর করে নতুন জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি। যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি আর কেউ নন, রোমান সানা। বাংলাদেশ আনসারের ২৩ বছর বয়সী আরচার। মঙ্গলবার থেকে টঙ্গীর আরচারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে ‘তীর জাতীয় আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর দশম আসর (শেষ হবে ২০ ডিসেম্বর)। এখানেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান তীরন্দাজ রোমান। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে ৪০ ক্লাবের ১৬৫ আরচার (রিকার্ভ ডিভিশন-পুরুষ ৭৮ ও মহিলা ৩৩ এবং কম্পাউন্ড ডিভিশন-পুরুষ ৩৫ ও মহিলা ১৯)। প্রতিযোগিতার স্পন্সর সিটি গ্রুপ। প্রতিযোগিতার ডিভিশন ২টি (রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড)। প্রতিযোগিতার ইভেন্টগুলো হলোÑ রিকার্ভে পুরুষ একক, পুরুষ দলীয়, মহিলা একক, মহিলা দলীয় এবং মিশ্র দলীয়; কম্পাউন্ডে পুরুষ একক, পুরুষ দলীয়, মহিলা একক, মহিলা দলীয় এবং মিশ্র দলীয়। প্রতিযোগিতার পদ্ধতি হচ্ছে র‌্যাঙ্কিং রাউন্ড ও ইলিমিনেশন রাউন্ড। প্রতিযোগিতার শূটিং দূরত্ব হচ্ছে : রিকার্ভ ডিভিশন-৭০ মিটার ও কম্পাউন্ড ডিভিশন-৫০ মিটার। প্রতিযোগিতার মোট পদক সংখ্যা ৬০টি (২০ স্বর্ণ, ২০ রৌপ্য ও ২০ তাম্রপদক)। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে রোমান বলেন, ‘এবার আমি তিন ইভেন্টে (পুরুষ একক, পুরুষ দলীয় ও মিশ্র দলীয়) খেলব। অনুশীলন বেশ ভাল হয়েছে। এখন বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে। তবে আমি প্রতি ইভেন্টেই স্বর্ণ জিততে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করব।’ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে সোমবার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এটা যদি আজসহ আগামী তিনদিনই অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রতিযোগিতা আদৌ অনুষ্ঠিত হবে তো? এ প্রসঙ্গে রোমান বলেন, ‘এ রকম আবহাওয়া আসলেই আরচারির জন্য নেতিবাচক। দেখা যাক কি হয়। আজও (সোমবার) অনুশীলন করলাম। কিন্তু এমন বৃষ্টি¯œাত ঠা-া আবহাওয়ায় অনুশীলন করেও শরীর গরম করতে পারিনি। ঠা-া শরীরে খেললে মানসিকতায় তা প্রভাব ফেলে। ফলে পারফর্মেন্সও ভাল হয় না। তারপরও মানিয়ে নিতে হবে আর কি। যতদূর শুনেছি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, এমনকি ঝড়ো বাতাস বইলেও এর মধ্যেই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।’ জাতীয় আসরে ২০১৩, ১৪, ১৬ ও ১৭ সালের স্বর্ণপদকধারী রোমান। এবার কি পারবেন সাফল্যের ধারবাহিকতা বজায় রাখতে? ‘এবার সাফল্য পাওয়াটা খুব কঠিন হবে। অঘটন ঘটতেও পারে। কেননা রুবেল-ইব্রাহিমের মতো প্রতিভাবান-নবীনরা উঠে আসছে। আমি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শতাংশ আশাবাদী সাফল্য লাভের ব্যাপারে।’ জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণজয় ... এটা কি কখনও চাপে ফেলে দেয় রোমানকে? ‘মোটেও না। বরং আমার এই সাফল্যের পরিসংখ্যান জেনে প্রতিপক্ষই কিছুটা চাপে পড়ে যায়।’ রোমানের আত্মবিশ্বাসী জবাব। ২০০৮ সালে বিকেএসপিতে ক্যারিয়ার শুরু হয় রোমানের। এরপর ২০১২ সালে ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাব এবং ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ আনসার ও ভিপির হয়ে খেলে যাচ্ছেন। খুলনার ছেলে রোমান। বাগালির কয়রাতে তার গ্রামের বাড়ি। বাবা চাকরিজীবী আব্দুল গফুর সানা এবং গৃহিণী মা বিউটি বেগমের ২ ছেলে, ১ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট রোমান। জন্ম খুলনায়, ৮ জুন, ১৯৯৫ সালে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে পাস করা রোমান এবার জাতীয় আরচারিতে কেমন করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×