ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম টি২০ ম্যাচে টাইগারদের হার ৮ উইকেটে

বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

প্রকাশিত: ০৭:২০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

মিথুন আশরাফ ॥ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি২০তে ১৫০ রান করেও যেখানে জেতা যায় না, সেখানে ১২৯ রান করে কিভাবে জিতবে বাংলাদেশ? জিতেওনি। কিন্তু হার এত বড় ব্যবধানে হয়েছে যে উড়েই গেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি২০তে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে সাকিববাহিনী। টেস্ট ও ওয়ানডেতে ঝলক দেখানোর পর টি২০তে নড়বড়ে হয়ে গেছে। ৪ উইকেট নেয়া পেসার শেলডন কটরেলের গতির সামনে পড়ে কাত হয়েছে। ব্যাট হাতে টি২০তেও ঝড় তুলেন সাই হোপ (৫৫)। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি২০তে সবচেয়ে বড় জয়টিও তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই জয়টি পেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও এগিয়ে গেছে। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে। এই এগিয়ে যাওয়া তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় টি২০ এবং শনিবার তৃতীয় টি২০’র যে কোন একটি ম্যাচে জিতলেই টি২০ সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে যাবে। টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ হারের পর টি২০ সিরিজে সেই আশা জাগিয়ে ফেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ কী পারবে পরের টানা দুই ম্যাচে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রুখে দিতে? টি২০তে বাংলাদেশ সব সময়ই কেমন জানি দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে এই বাংলাদেশ দলটিই টি২০ সিরিজ ২-১এ জিতে এসেছে। তাতে আশাও দেখা হয়েছে। দেশের মাটিতে খেলা। তাহলে তো এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি২০ সিরিজেও উড়িয়ে দেবে বাংলাদেশ। কিন্তু উল্টো ফল মেলার দৃশ্যই যেন দেখা যাচ্ছে। প্রথম টি২০তেই যে হাল দেখা গেছে, তাতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কাছে না আবার স্বল্প ওভারের সিরিজ হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। সকাল থেকেই আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। কালো হয়ে এসেছে। তাতে ফ্লাডলাইটের ত্রুটির কারণে যে দিনের বেলাতেই খেলা শেষ করার হিসেব করে আয়োজকরা, তাতেও ভাটা পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। বৃষ্টি আসলেই যে খেলা প- হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি আসল না। তবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যে ব্যাটিং ব্যর্থতা দেখালেন, তাতে হতাশার বৃষ্টিই যেন ঘিরে ধরল। ৪৮ রান করতেই যখন তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীমের মতো গুরুত্বপূর্ণ চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ, তখনই ম্যাচের চিত্র যেন ফুটে উঠল। কটরেলের শর্ট বল খেলতেই ব্যর্থ হন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। একের পর এক ভুল আউটের খেসারত বাংলাদেশকে দিতে হয়। ৭৩ রানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও আউট হন। এরমধ্যে কটরেলই ৩ উইকেট শিকার করে ফেলেন। কী গতির ঝড় তুলেন এ পেসার। মাহমুদুল্লাহ আউটের পর বাংলাদেশ শেষপর্যন্ত ১০০ রান করতে পারবে কিনা, সেই শঙ্কাই জেগে যায়। তারপরও খানিক আশা থাকে। সাকিব আল হাসান, আরিফুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাইফউদ্দিন যে ব্যাটিংয়ে থাকেন। আর আবু হায়দার রনি ও মুস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে কিছু রান মিললেইতো কিছুটা দূর যাওয়া সম্ভব। সাকিব ও আরিফুল মিলেই শেষপর্যন্ত দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। সাকিব সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। তিনি যে টি২০র সেরা একজন, তা বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আরিফুল (১৭) বেশিক্ষণ আর টিকে থাকতে পারেননি। দলের ১০৩ রান হতেই এ্যালেনের বলে সাজঘরে ফেরেন আরিফুল। সাকিব ও আরিফুল যেভাবে এগিয়ে চলেছিলেন, তাতে কিছুটা বড় আশাও করা হচ্ছিল। কিন্তু আরিফুল আউট হওয়ার পর সেই আশা যেন আবার হতাশার মুখ দেখতে শুরু করে। এরপর একেকজন ব্যাটসম্যান আসেন। আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন। ১৯ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ১২৯ রানের বেশি করতেও পারেনি। সাকিব একাই হাল ধরেন। ৪৩ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৬১ রান করেন। কিন্তু সাকিবকেও আটকে দেন কটরেল। সাকিবকে আউট করে ৪ উইকেট নিয়ে টি২০ ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য দেখান কটরেল। তার বোলিংয়েই মূলত বাংলাদেশের ইনিংসে ধস নামে। এত কম রান করে সিলেটে টি২০তে জেতা সম্ভব নয়। যদি আহামরি কোন বোলিং না হয়। তা হলো না। এক সাই হোপ বাংলাদেশকে বারবার হুঙ্কার দিচ্ছেন। এবার তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কাছেই হার মেনেছে বাংলাদেশ। ২৩ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ৫৫ রান করে নিজ দলকে জেতার হোপ। হোপের সঙ্গে নিকোলাস পুরানের অপরাজিত ২৩ ও কিমো পলের অপরাজিত ২৮ রানে অনায়াসেই জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম উইকেট নিতেই বাংলাদেশ বোলারদের ৫১ রান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। যখন দ্বিতীয় উইকেট শিকার করা যায়, ততক্ষণে ৯৮ রানে চলে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর আর কোন উইকেটই ফেলা যায়নি। তিন পেসার নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ দল। অথচ এত কম রানের স্কোর করেও স্পিন দিয়ে শুরু করা হয়। সুযোগটি এমনভাবে কাজে লাগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাওয়ার প্লেতে ৯১ রান তুলে ফেলে রেকর্ড গড়ে। শেষপর্যন্ত ১০.৫ ওভারের বেশি খেলেওনি ক্যারিবীয়রা। ২ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান করে জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৯ ওভার বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে যায়। বাংলাদেশকে এবার উড়িয়ে দেয়। এই ম্যাচ হারায় তিন ফরমেটের কোন সিরিজের সব ফরমেটে জেতার আশায় খানিক হলেও বাধা পড়ল। এখন পরের দুই ম্যাচে না জিতলে এই ইতিহাস গড়া সম্ভব হবে না। কোন পূর্ণাঙ্গ সিরিজের তিন ফরমেটেই জেতার ইতিহাস বাংলাদেশের নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি২০ সিরিজে হারালে সেই ইতিহাস বাংলাদেশের হতো। এখনও আশা শেষ হয়ে যায়নি। তবে প্রথম টি২০তে যেভাবে উড়ে গেল বাংলাদেশ, তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে এ ফরমেটে কতটা শক্তিশালী দল, তাতো বোঝাই হয়ে গেছে। টি২০ সিরিজ হার এড়ানোইতো বাংলাদেশের সামনে কঠিন হয়ে পড়ল।
×