ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফারাক্কা ব্রিজ সংস্কারে কমে এসেছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

ফারাক্কা ব্রিজ সংস্কারে কমে এসেছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ ভারতের অভ্যন্তরে ফারাক্কা ব্রিজ সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার ফলে ব্রিজের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাণিজ্য কমে যাওয়ায় তার প্রভাবে হিলি স্থলবন্দরের অধিকাংশ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা। অপরদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে লোকসানের শিকার হচ্ছে। একইভাবে সরকার প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট মহকুমার রফতানিকারক বিকাশ চন্দ্র রায় জানান, ৪ ডিসেম্বর থেকে ফারাক্কা ব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৩ মাসের মতো। এই ৩ মাস ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও হাকিমপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আজিজুর রহমান জানান, ভারতের অভ্যন্তরে ফারাক্কা ব্রিজ সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কমে গেছে। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ, পাথর, খৈল, চালসহ যে সমস্ত পণ্য ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি বা রফতানি হয়, ওইসব পণ্য ফারাক্কা ব্রিজের ওপর দিয়ে আনা-নেয়া করা হয়। বর্তমানে ব্রিজের সংস্কার কাজ চলার কারণে অনেক পণ্যবাহী ট্রাক আসতে পারছে না। তিনি জানান, পেঁয়াজসহ যেসব পণ্যের ওজন কম, শুধু সেসব পণ্য ফারাক্কা ব্রিজের ওপর দিয়ে আসছে। কিন্তু সেই সংখ্যা তুলনামূলক কম। আগে যে হিসেবে পণ্য আসত, বর্তমানে সে হিসেবে অনেক কম পণ্যবাহী ট্রাক আসছে। আগে বন্দর দিয়ে শুধু পেঁয়াজের ট্রাক আসত ৬০ থেকে ৭০টি। এখন সেখানে আসছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাক। এ কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কম হচ্ছে। ব্রিজের কাজ শেষ হলে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান তিনি। হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশীদ জানান, পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহৃত পাথরের মোট চাহিদার বেশিরভাগ পাথর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা হতো। বিভিন্ন আমদানিকারকরা সেসব পাথর আমদানি করতেন। কিন্তু হঠাৎ করে ভারতের অভ্যন্তরে ফারাক্কা ব্রিজের কাজ শুর হওয়ার কারণে ভারতীয় রফতানিকারকরা জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত তারা কোন পাথর রফতানি করতে পারবেন না। এতে আমদানিকারকরা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন বন্দর দিয়ে ১৫০ থেকে ১৭০ ট্রাক পাথর আমদানি হতো, এখন সেখানে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক পাথর আমদানি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট শাহিনুর রেজা শাহীন জানান, ভারতে ফারাক্কা ব্রিজ সংস্কারের কাজের কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি একেবারে বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি গাড়ির সংখ্যা কমে এসেছে। এর ফলে হিলি স্থলবন্দরের সবস্তরের সিএন্ডএফ এজেন্টদের ব্যবসায় ধস নেমে এসেছে। হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, ৪ ডিসেম্বর থেকে ভারতের অভ্যন্তরে ফারাক্কা ব্রিজ সংস্কারের কাজ শুর হওয়ায়, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। বিগত দিনে যেখানে বন্দর দিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি হলেও, বর্তমানে সে সংখ্যা কমে ১০০ থেকে ১১০ ট্রাকে দাঁড়িয়েছে।
×