ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নাট্যধারার ‘চার্লি’ ও পদাতিকের ‘গহনযাত্রা’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

নাট্যধারার ‘চার্লি’ ও পদাতিকের ‘গহনযাত্রা’ মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সকাল থেকেই মুখটি ভার করেছিল আকাশ। ঝরেছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। এমন বৃষ্টিভেজা দিনের বিকেল গড়ানো শীতল সন্ধ্যায় শিল্পরসিকরা খুঁজেছেন আনন্দের উৎস। সেই সুবাদে ছুটে গেছেন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায়। উপভোগ করেছেন মঞ্চনাটক। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা গভীর জীবনদর্শনের কথা বলা নাট্যধারার নাটক চার্লি। অন্যদিকে স্টুডি থিয়েটার হলে পরিবেশিত হয়েছে জঙ্গীবাদের বীভৎসতা তুলে ধরা পদাতিক নাট্য সংসদের নাটক চার্লি। নাট্যদল নাট্যধারার নতুন প্রযোজনা চার্লি। চলচ্চিত্রে যে চার্লি চ্যাপলিনকে দেখে আমরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি, তার রয়েছে এক গভীর জীবনদর্শন। জীবনের মানে খোঁজা প্রযোজনাটির রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন লিটু সাখাওয়াত। প্রযোজনাটিতে জীবনের মানে খোঁজার অভিযানে যোগ দিয়েছেন সক্রেটিস, লালন ও রবীন্দ্রনাথের মতো কিংবদন্তি মানুষরা। চার্লির দর্শনের সঙ্গে মিল রেখে নাটকে আগমন ঘটে একজন পতিতার। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত সেই পতিতার মুখ থেকে শোনা যায়, ‘চার্লি আমগো শেখায় হাজার কষ্টের মাঝে কেমন কইরা সুখে থাকতে হয়।’ ঘটনা পরম্পরায় সেই দর্শনকে তিন মনীষী নিয়ে যান আরেক ধাপ উপরে। একপর্যায়ে চার্লি অস্থির হয়ে পড়ে। তার মস্তিষ্কে ঘুরঘুর করে সক্রেটিস, লালন ও রবীন্দ্রনাথ। জীবনের বাঁকে বাঁকে তারা এসে দাঁড়ায় চার্লির সামনে। নাটকটির বিষয়ে নাট্যকার ও নির্দেশক লিটু সাখাওয়াত বলেন, আমাদের চার্লি আসলে এক অপূর্ণতা, যার পূর্ণতায় জীবনের মানে খুঁজে পাওয়া যাবে। আট আনার অর্থনৈতিক মুক্তি, আট আনার সাংস্কৃতিক মুক্তি, আট আনার সাম্প্রদায়িক মুক্তি আর আট আনার মানবিক মুক্তি। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন দীপান্বিতা ইতি, লিটু সাখাওয়াত,নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া, সব্যসাচী চঞ্চল, কামাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম, গাজী রহিসুল ইসলাম তমাল, হাফসা আক্তার, রবিন, মিরাজ, নাঈম, রুবেল, রাফসান, ইমরান, ছন্দা রিনা গীতিসহ দলের অন্য কর্মীরা। আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন হেন্ডরি সেন। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এজাজ ফারাহ্। মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন রফিকুল ইসলাম ও হেন্ডরি সেন। কোরিওগ্রাফি করেছেন লিটু সাখাওয়াত ও দীপান্বিতা ইতি। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে রুবাইয়াৎ আহমেদ রচিত পদাতিক নাট্য সংসদের নাটক গহনযাত্রা। উগ্রবাদের বীভৎসতা মেলে ধরা প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। নাটকের একক অভিনয় করছেন শামছি আরা সায়েকা। নাটকের কাহিনীতে উঠে আসে উগ্রবাদের কোন এক ভূখ-ের চিত্র। যেখানে উগ্রপন্থার অনুসারীরা বিপরীত সকল মতবাদ প্রত্যাখ্যান করে শুধু একটি মতবাদই প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এজন্য তারা ধ্বংসলীলা চালিয়ে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়, হত্যা করে অগণিত মানুষ, ধর্ষিত হয় অসংখ্য নারী। ভিন্ন মতাদর্শের এক ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের মানুষদের তারা ধরে নিয়ে বন্দী করে রাখে। বন্দীদশা থেকে পালাতে চায় অনেকে। কিন্তু মুক্তির বদলে মৃত্যুবরণ করতে হয় তাদের। বেঁচে যায় শুধু সালমা নামের একজন। সে ফিরে আসে মাঠে প্রান্তরে পড়ে থাকা লাশগুলো সমাহিত করতে। এই সময়ে সালমা নিজের অভ্যন্তরে টের পায় অপর কারও অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্ব হয়তো তারই বর্ধিত কোন রূপ কিংবা অপরূপে সে নিজেই কিংবা অন্যকিছু। সেই অস্তিত্ব তার সঙ্গী হয়। মৃতদের কবর দেয়ার পর সালমা খোঁজ করে তার প্রার্থিত পুরুষের। সালমা দেখতে পায়, ল্যাম্পপোস্টে ঝুলে আছে সেই পুরুষের ছিন্নমস্তক। উগ্রপন্থীদের হাতে ধরা পড়ে সালমা। তাকে ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এভাবে এগিয়ে যায় বিয়োগান্তক এ নাটকের কাহিনী। প্রযোজনাটিতে নির্দেশনা সহযোগী হিসেবে রয়েছেন সঞ্জীব কুমার দে। সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন সাইম রানা। সুদীপ চক্রবর্তীর মঞ্চ পরিকল্পনায় পোশাক ও রূপসজ্জা পরিকল্পনা করেছেন শামছি আরা সায়েকা।
×