স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে থাকা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় তিন দিনের মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শককে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও দিয়েছে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বরাবর। অন্যদিকে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে আগামী ২৭ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মহানগর হাকিম জিয়াউর রহমান। দেশের সাধারণ ভোটারদের মনে সহানুভূতি সৃষ্টি করে ভোটের হাওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দিকে ঘুরিয়ে দিতেই পরিকল্পিতভাবে ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। হামলার বহিরাগত সন্ত্রাসী ও বঞ্চিত নেতাকর্মীদের কারও কারও জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা চলছে।
সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বরাবর। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন ও তার গাড়িতে হামলার ঘটনা তদন্ত করে আগামী তিন দিনের মধ্যে ইসি সচিবালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকার মহানগর হাকিম জিয়াউর রহমান সোমবার ড. কামাল হোসেনসহ নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের গাড়িবহরে ১৪ ডিসেম্বরে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৭ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। বিচারক সোমবার মামলার এজাহার গ্রহণ করে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার এসআই জোবায়ের হোসেনকে এ আদেশ দেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে দারুস সালাম থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে সোমবার বিকেল নাগাদ এ সংক্রান্ত কোন চিঠি পাননি। চিঠি না পেলেও তারা ওই ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কারণ এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
বিষয়টি সম্পর্কে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, যদিও তারা পুলিশ সদর দফতর থেকে কোন চিঠি পাননি, তারপরেও ঘটনাটি যেহেতু খুবই আলোচিত এজন্য তারা নজর রাখছেন। বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা হচ্ছে।
ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ পাওয়ার আগ থেকেই পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তরফ থেকে হামলার আদ্যোপান্ত উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। ওই দিনের ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই হামলার ঘটনার সময় ধারণকৃত ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া আশপাশের এলাকায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেসব ফুটেজের পর্যালোচনা চলছে।
তদন্তে এখন পর্যন্ত হামলাটি পরিকল্পিত বলে তথ্য মিলেছে। হামলার মূল কারণ ভোট। নানা কারণেই এবার ভোটের হাওয়া ক্ষমতাসীন দলের দিকে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা এবং বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা পেলে দেশে মারাত্মক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই সাধারণ ভোটাররা এবার ক্ষমতাসীন সরকারকেই বেশি পছন্দ করছেন। সাধারণ ভোটারদের এমন মনোভাবে ফাটল ধরাতেই এবং ভোটের হাওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দিকে ঘুরিয়ে দিতেই ওই হামলা চালানো হয়।
ড. কামাল হোসেনের মত খ্যাতিমান লোকের ওপর হামলা হলে এবং সেই হামলার দায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর চাপানো গেলে ভোটের হাওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া যেতে পারে। এমন ভাবনা থেকেই ওই হামলা হয়েছে বলে সার্বিক পর্যালোচনায় মনে হয়েছে। নির্বাচনে দেশের সাধারণ ভোটারদের মনে ড. কামাল হোসেন ও তার জোটের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করতেই পরিকল্পিতভাবে ওই হামলা করা হয়েছে। পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার পরপরই আওয়ামী, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠন ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে বলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। যাতে দেশের সাধারণ ভোটারদের আওয়ামী লীগ বা তাদের জোটের প্রার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ভোট না দেন। হামলার সঙ্গে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে কারও কারও জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ডিসেম্বর শুক্রবার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বের হওয়ার সময় ড. কামাল হোসেনের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত দশ জন আহত হন। এ ঘটনায় ১৫ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা-১৪ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে দারুস সালাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় দারুস সালাম থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা নাবিল খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাদল, ১২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগকর্মী সোহেল, থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ রাজন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুয়েল ও শেখ ফারুক, শাহআলী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির, সাধারণ সম্পাদক সৈকত, দফতর সম্পাদক রনি, ছাত্রলীগকর্মী শাওন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুল ইসলাম শুভকেও একই মামলায় আসামি করেন তিনি। এমন ঘটনায় গত ১৫ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা ড. কামাল হোসেনের ওপরে হামলার বিষয়টি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে ইসি
ভোটের হাওয়া ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নিতে ড. কামালের ওপর হামলা!
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: