ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান রাখার প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান রাখার প্রতিশ্রুতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ পর্যন্ত বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য গড়ে সমালোচনার মুখে বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন রাজনৈতিক মোর্চায় কামাল হোসেনের দল ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতসহ সমমনা সকল মিত্র একই প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছে জামায়াত। তাদের সঙ্গে যুক্ত থেকে বিচার বানচালে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে বিএনপি। অথচ সেই জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের মধ্য দিয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। দুই দফা পেছানোর পর সর্বশেষ ফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে ইশতেহার উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরা হয়। এতে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, ঐক্যফ্রন্টের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি হাস্যকর। ইশতেহারে দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও গুম পুরোপুরি বন্ধ করা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনি¤œ ১২ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না থাকাসহ ৩৫ দফা প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে। এর মধ্যে ১৪টি বিষয়ে আমূল পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। ৩৫ দফা প্রতিশ্রুতির ৩২ নম্বরে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ে রয়েছে পাঁচটি পরিকল্পনার কথা। এর মধ্যে প্রথমটি হলো নির্বাচনে বিজয়ী হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান রাখা। অন্য চারটির মধ্যে রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলা হবে, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’দের তালিকা থেকে বাদ দেয়া ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ঐক্যের মধ্যে কামাল হোসেন তথা ঐক্যফ্রন্ট কতটুকু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারবে তাই এখন দেখার বিষয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গেলে ‘রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার’ প্রতিশ্রুতি এসেছে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে। বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে দুই মাস আগে গঠিত এই জোট বলছে, ২০১৪ সালে ‘নির্বাচনের নামে প্রহসনের’ মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণ হারিয়েছিল। সেই মালিকানা তারা ৩০ ডিসেম্বর ভোটে জিতে আবার ‘সকল জনগণের’ হাতে ফিরিয়ে দিতে চায়, যার মধ্যে পরাজিতরাও থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের ডান দিকে ছিলেন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বাঁ দিকে ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। কামাল হোসেন বলেন, এটা জনগণের ইশতেহার। জনগণের কল্যাণ, জনমতের ভিত্তিতে এটা তৈরি করা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণের ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা ভোটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে দেশে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাঁচ দলের মনোনীত প্রার্থীরা আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে। তিনশ আসনের মধ্যে ২৪২টি আসন বিএনপি নিজেদের জন্য রেখে জাতীয় যুক্তফ্রন্টের শরিকদের ১৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে গণফোরাম সাতটি, জেএসডি চারটি, নাগরিক ঐক্য চারটি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ চারটি আসন পেয়েছে। বাকি ৩৯টি আসন জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটকে দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াত অন্তত ২৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ৩৫ দফায় যা আছে ১. প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই লক্ষ্যÑ বিগত দশ বছরে কল্পনাতীত স্বেচ্ছাচারিতা এবং পুলিশকে দলীয় ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা, গুম, খুন, মামলার ঘুষ বাণিজ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় লাখো পরিবার ক্ষুব্ধ ও বিপর্যস্ত। এই সমস্যা সমাধান করে সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, আইনজীবী সমন্বিত সর্বদলীয় সত্যানুসন্ধান ও বিভেদ নিরসন কমিশন গঠন করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অতীতের হয়রানিমূলক মামলা সুরাহার লক্ষ্যে খোলামনে আলোচনা করে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সৃষ্ট সব ফৌজদারি মামলা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সৃষ্ট মামলা প্রত্যাহার করা হবে এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। * সকল জাতীয় বীরদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত করে স্কুল-কলেজে পড়ানো হবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করা হবে। * এক দলীয় শাসনের যেন পুনঃজন্ম না ঘটে তা নিশ্চিত করা হবে। ২. ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনি আইন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার: * রাষ্ট্রের মালিক জনগণের ভোটের অধিকার শতভাগ রক্ষা করার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় নাগরিকদের পছন্দের জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করার পূর্ণাঙ্গ অধিকার নিশ্চিত করা হবে। * সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান তৈরি করা হবে। * নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা দেয়া হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় তার কাজে সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকবে এবং তার স্বাধীন বাজেট থাকবে। * গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কার করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সহজ করা হবে এবং স্বতন্ত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনের বিধান বাতিল করা হবে। * প্রতিটি পর্যায়ের নির্বাচনে পেশিশক্তি, কালো টাকা এবং গণমাধ্যমের অপব্যবহার রোধ করার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হবে। ৩. মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ : * ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট বাতিল করা হবে। * মত প্রকাশের ক্ষেত্রে মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। গণমাধ্যমের ওপর কোন রকম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সরকারী নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। * সামাজিক গণমাধ্যমে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারী বিধিনিষেধ থাকবে না। * সরকারী পদক্ষেপ এবং পদধারীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা, এমনকি ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপেরও অধিকার থাকবে। এসব ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে মানহানির মামলা তার নিজেকেই করতে হবে (অন্য কেউ করতে পারবে না) এবং এ ধরনের মামলা কোনভাবেই ফৌজদারি মামলা হবে না। ৪. ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ: * দেশের বিচার ব্যবস্থা, বিশেষ করে নিম্ন আদালত এখনও কার্যত সরকারের অধীনেই আছে। সংবিধানের ১১৫ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্ন আদালতকে পুরোপুরি সুপ্রীমকোর্টের অধীনে দেয়া হবে। * সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুধু অনাস্থা ভোট এবং অর্থবিল ছাড়া অন্য যে কোন ক্ষেত্রে দলীয় সংসদ সদস্য দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও তাদের সংসদ সদস্য পদ শূন্য হবে না এমন সংশোধনী ৭০ অনুচ্ছেদে আনা হবে। * সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা হবে। সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উচ্চকক্ষের গঠন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে। * সকল সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য সুস্পষ্ট আইন তৈরি করা হবে। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিসহ সব সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য স্বাধীন কমিশন (বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিসহ) গঠন করা হবে। উক্ত কমিশন কর্তৃক প্রাথমিক মনোনয়নের পর নিয়োগের পূর্বে তাদের নাম জনগণের মতামতের জন্য প্রচার করা হবে। * সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উল্লেখযোগ্য পদ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হবে। * প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। মন্ত্রিসভাসহ প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হবে। পর পর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না। * সংসদের ডেপুটি স্পীকার বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হবে। * আইন এবং রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন এবং পর্যালোচনাই হবে সংসদ সদস্যদের মূল কাজ। খবরদারি নয়, সংসদ সদস্যগণ স্থানীয় উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সহায়তামূলক ভূমিকা পালন করবেন। * বিরোধী দলের সাংবিধানিক মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। রাষ্ট্রপরিচালনায় বিরোধী দলের মতকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হবে। ৫. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা এবং বিকেন্দ্রীকরণ: * দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ের দায়িত্ব থাকবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে। * বর্তমানে কমবেশি ৫ শতাংশ বাজেট স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয়ের পরিবর্তে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বাজেট স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয়ের বিধান করা হবে। * বাজেটে প্রতি জেলার জন্য জেলা বাজেট এবং সেটা পর্যায়ক্রমে নিচের দিকে স্থানীয় সরকারের মধ্যে বণ্টন করা হবে। * জেলা পরিষদ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে। * রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। * পৌর এলাকাগুলোতে সব সেবা সংস্থা মেয়রের অধীনে রেখে সিটি গবর্নমেন্ট চালু করা হবে। * স্থানীয় সরকারের দলীয় প্রতীকের ভিত্তিতে নির্বাচনের প্রথা বাতিল করা হবে। * ঢাকার কাছাকাছি বিভিন্ন জেলায় উন্নত নাগরিক সুবিধাসহ কয়েকটি শহর গড়ে তোলা হবে যেখান থেকে ঢাকায় খুব দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকবে। * জনকল্যাণে প্রশাসনিক কাঠামো প্রাদেশিক পর্যায়ে বিন্যস্ত করা এবং স্থানীয় সরকারের স্তর নির্ধারণের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করা হবে। ৬. তরুণদের কর্মসংস্থান: বেকার সমস্যার সমাধান হবে আমাদের সরকারের সবচেযে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের একটি। সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার ফলে ‘কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির’ দুষ্টচক্র থেকে তরুণ সমাজকে বের করে আনতে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। * পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী ব্যতীত সরকারী চাকরিতে প্রবেশের জন্য কোন বয়সসীমা থাকবে না। * সরকারী চাকরিতে শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ছাড়া আর কোন কোটা থাকবে না। * ত্রিশোর্ধ শিক্ষিত বেকারের জন্য বেকার ভাতা চালু করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা পরীক্ষা করে বাস্তবায়ন করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে। * আগামী ৫ বছরের মধ্যে সব সরকারী শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। * প্রতি জেলা-উপজেলায় তরুণদের কর্মমুখী করার লক্ষ্যে কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। উদ্যোক্তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা ও স্বীকৃতি প্রদানের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বেকার তরুণদের উদ্যোক্তা করার প্রয়াসে বেসরকারী ঋণ প্রদান ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত) * বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রশাসনিক জটিলতা, ঘুষ-দুর্নীতি, রাজনৈতিক পোষকতা মুক্ত বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। * বয় নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশনের মতো বিভাগীয় শহরগুলোতেও নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সরকারী কর্মকমিশনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে জনবল বৃদ্ধি করে সরকারী সকল চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। প্রয়োজনে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা বোর্ড গঠন করা হবে...। * দেশে কাজ করা ওয়ার্ক পারমিটবিহীন অবৈধ সকল বিদেশী নাগরিকের চাকরি বন্ধ করা হবে। * সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় তরুণদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হবে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভাষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং চাকরি উপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদের বিদেশে কর্মসংস্থানের সহায়তা করা হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ব্যয় বর্তমানের তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। চূড়ান্তভাবে বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত হলে নামমাত্র সুদে ঋণ দেয়া হবে...। ৭. শিক্ষা: * কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। * সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হবে।* জাতির ভবিষ্যত যোগ্য নেতৃত্ব বিকাশের পথকে সুগম করার লক্ষ্যে প্রথম বছরেই ডাকসুসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা হবে। * পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হবে। * প্রকৃত দরিদ্র অসচ্ছল মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারীভাবে উপযুক্ত হারে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে এবং এই ক্ষেত্রে অর্থায়নের সাহায্যের জন্য সব বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সিএসআর বাধ্যতামূলকভাবে চালুর ব্যবস্থা করা হবে। * প্রশ্ন ফাঁস বিরোধী সেল’ গঠন এবং প্রশ্নফাঁস রোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন করা হবে। * বেসরকারী স্কুলগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা। * ধসে পড়া শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সকল পদক্ষেপ নেয়া। * সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি করা। * প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য নতুন ক্যাডার সার্ভিস চালু করা হবে। * শিক্ষার্থীদের ইংরেজী ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। * কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহীদের বৃত্তি প্রদান করা হবে...। ৮. দুর্নীতি দমন: বৃহৎ প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মুখোমুখি হওয়া বিভিন্ন সেবা খাতের দুর্নীতি দমনকে আমাদের সরকার অগ্রাধিকারের শীর্ষে রাখবে। * দায়িত্ব পাবার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বর্তমান সরকারের সব দুর্নীতির তদন্ত করে তার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। * সংবিধান নির্দেশিত পথে ন্যায়পাল নিয়োগ, কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিটি ইউনিটে ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে। * দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হবে। * দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা গ্রেফতারে সরকারের অনুমতির বিধান (সরকারী চাকরি আইন-২০১৮) বাতিল করা হবে। * স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য তথ্য অধিকার আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে...। ৯. স্বাস্থ্য: * দেশের সব ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহ স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন সরকারী কর্মকর্তার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। * ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট রূপান্তর করা, সব জেলায় একটি করে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনপূর্বক ৫০০ শয্যার হাসপাতাল গড়ে তোলা, সব জেলায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ, ১০ শয্যার এনআইসিইউ স্থাপন করা হবে। বেসরকারী পর্যায়ে একজন সার্জনকে ৫০ হাজার টাকা অপারেশন ফি দেয়ার পরও অঙ্গ প্রতিস্থাপন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকায় করা সম্ভব হবে। * বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অত্যাবশ্যকীয় ৪০০ অনধিক ওষুধের কাঁচামালের আমদানি শুল্কমুক্ত করা হবে। দেশে উৎপাদিত কাঁচামালের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাবহির্ভূত ওষুধের উৎপাদন ও আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য হবে। * সরকারী হাসপাতালসমূহে ক্যান্সার ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারী এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডের অপর একটি ইউনিট দ্রুত চট্টগ্রামে স্থাপন করা হবে । ১০. খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ: * বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ এর যুগোপযোগী সংস্কার করা হবে এবং এর কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্যে ভেজাল এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তির এক বছরের মধ্যে মানুষকে নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হবে...। ১১. মাদক নিয়ন্ত্রণ: * দায়িত্বপ্রাপ্তির প্রথম দিন থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণকে সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের তালিকায় আনা হবে। মাদক পরিবহন এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক চোরাচালান রোধে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহায়তামূলক সম্পর্ক জোরদার করা হবে। সিগারেট এবং সব তামাকজাত পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক ধার্য করা হবে...। ১২. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: * বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং গুম (এনফর্সড ডিসএ্যাপিয়ারান্স) পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। ইতোপূর্বে সংগঠিত এ ধরনের সব ঘটনার তদন্ত করা হবে। * মানুষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। * পুলিশ সকল অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে তদন্ত করতে বাধ্য থাকবে। চার্জশীট হলে আদালতে লিখিত অনুমতি দিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে, তার পূর্বে না। বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। * রিমান্ডের নামে পুলিশি হেফাজতে কোনও প্রকার শারীরিক নির্যাতন করা যাবে না। * পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে পুরোপুরি স্বাধীন করা হবে। * ৩৩ শতাংশ এসপি নিযুক্ত হবেন সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে চাকরি শুরু করা অফিসারদের মধ্য থেকে। * পুলিশ এ্যাক্ট রিভিউ করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।* বিভিন্ন জায়গায় এবং মহাসড়কে পুলিশের চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। * হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। * পুলিশ বাহিনীর ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে। ১৩. আদালত: * বিভাগীয় সদরে স্থায়ী হাইকোর্ট বেঞ্চ থাকবে। * হয়ারনিমূলক মিথ্যা মামলা করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। * মামলার জট কমানো, জামিনযোগ্য মামলায় জামিন না হলে বিচারের দিন এই নিম্ন আদালতের বিচারক লিখিত রায় দেবেন যাতে অভিযুক্ত ওই দিনই উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারেন। * হাইকোর্ট কাউকে জামিন দিলে এ্যাটর্নি জেনারেল আপীল করে কোর্টের সময় অপব্যয় করবেন না। সরকার উচ্চ আদালতে বিরোধিতা করতে চাইলে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকার কোর্ট ফি দিয়ে আপীল করবেন। আপীল ব্যর্থ হলে উক্ত কোর্ট ফি বিবাদী পাবেন। ১৪. কৃষি ও কৃষক: * ক্রমাগত কমতে থাকা কৃষি ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়িয়ে সার বীজ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা হবে। * সরকারী ব্যাংক থেকে খুব সামান্য সুদে কৃষকদের ঋণ দেয়া হবে। বেসরকারী ব্যাংকগুলোর ঋণের একটা নির্দিষ্ট অংশ কৃষকদের মধ্যে বিতরণে বাধ্য করা হবে। * ভূমিহীনদের মধ্যে সরকারের খাস জমি বণ্টন করা হবে। ১৫. এছাড়া শিল্পায়ন, শ্রমিক কল্যাণ, ব্যাংকিং খাত, শেয়ার বাজার, বাজেট, বিদ্যুত ও জ্বালানি, সামাজিক নিরাপত্তা, বায়োবৃদ্ধ, নারীর নিরাপত্তা এবং ক্ষমতায়ন, নিরাপদ সড়ক, যাতায়াত এবং পরিবহন, প্রবাসী কল্যাণ, গণমাধ্যম, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ২৮. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ, বর্তমান সরকারের সময়ের উন্নয়ন প্রকল্প, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও বিশদ পরিকল্পনা কথা ইশতেহারে তুলে ধরা হয়েছে। ২৬. সন্ত্রাসবাদ জঙ্গীবাদ:- ২০০১ সালে বিএনপিসহ চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর দেশে ব্যাপকভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের আবির্ভাব হয়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু একই দিতে দেশের ৬৩ জেলায় বোমা হামলার ঘটনা গোটা বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছিল। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের জন্মদাতা সেই বিএনপি জামায়াতসহ ঐক্যফ্রন্ট এবার এসব বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা নিয়ে এল! * তাদের ইশতেহারে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গীবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে। * জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে এসব বিষয়ে ছাত্রদের শিক্ষা পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সমাজের সব শ্রেণির জনগণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশের আলেম-ওলামাদের দ্বারা মোটিভেশন প্রোগ্রাম চালু করা হবে। ২৭. ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী: ২০০১ সালের এক অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী ক্ষমতার আসার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালগুদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার নির্যাতন নেমে আসে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে পূর্ণিমার গণধর্ষণের ঘটনা ও গোপালকৃষ্ণ মুহুরী হত্যাকা-সহ অসংখ্য সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা গোটা বিশ^ বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সেই বিএনপি-জামায়াত তথা ঐক্যজোট এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে সামনে এসেছে। * সংখ্যালঘুদের মানবিক মর্যাদা অধিকার নিরাপত্তা এবং সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। * সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় ন্যূনতম ঘাটতি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া। * সংখ্যালঘুদের ওপর যে কোন রকম হামলার বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। * পাহাড় এবং সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সংস্কৃতি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা হবে। ৩৫. অন্যান্য: * বঙ্গপোসাগরে নতুন ভূমি উদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে...।
×