ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর নির্বাচনে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর নির্বাচনে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইসির নিবন্ধনহারা জামায়াতের ২২ নেতাকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক আর তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ছেন ২৫ জামায়াত প্রার্থী। ভোটে তাদের সুযোগ দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের শুনানি আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মূলতবি করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আজ নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে আদালতে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এ সংক্রান্ত রিটের আংশিক শুনানিতে সোমবার বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে থেকে বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হওয়ায় চার জনের প্রার্থিতা আপীল বিভাগে আটকে গেছে। আরেকজনের মনোনয়নপত্র স্থগিত করে হাইকোর্ট সোমবার রুল জারি করেছে। সোমবার আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগ এসব আদেশ দেয়। জামায়াতের ২২ নেতাকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক ও তিনজনকে আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে সুযোগ দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের শুনানি আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মূলতবি করেছে হাইকোর্ট। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমির। জামায়াতে ইসলামীর ২২ নেতার ধানের শীষ প্রতীক নেয়ার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে তথ্য গোপন করে স্বতন্ত্র তিন প্রার্থী আপেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এরা হলো জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম বুলবুল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), বাঁশখালী উপজেলা আমির জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৬) ও পাবনা-১ আসনেও যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে মৃত্যুদ-পাপ্ত নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার মজিবুর রহমান। ’১৩ সালে হাইকোর্টের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণার পাঁচ বছর পর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে ২৯ অক্টোবার ইসি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ফলে দলটি দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে আর ভোটে অংশ নিতে পারবে না জামায়াত। একটি সূত্র জানায়, কোন দলের নিবন্ধন বাতিল করলে সেই দলের নেতারাও নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে পড়ে। কারণ তিনি আগে ওই দলের নেতা ছিলেন। নিবন্ধন বাতিল হলে ঐ দলের নামে আর নির্বাচন করতে পারেন না। তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ চারজন নিবন্ধন হারানো বাংলাদেশ জামায়াতের ২২ নেতাকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে সুযোগ দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে নির্বাচন কমিশন, সিইসি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির, সেক্রেটারি জেনারেল ও মনোনীত ২২ প্রার্থীসহ মোট ২৯ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে রিটের পর বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চে এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪০ মিনিট শুনানি শেষে আদালত আজ মঙ্গলবার পরবর্তী শুনানির সময় ধার্য করেন। রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি সাবজুডিস ম্যাটার। এখন এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। উল্লেখ্য, নিবন্ধনহীন একটি দলের প্রার্থীরা কিভাবে সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হন- এ যুক্তিতে রিটটি দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিকেল চারটায় প্রায় ৪০ মিনিট শুনানি শেষে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মঙ্গলবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। দিনের শুনানিতে কেবল তানিয়া আমিরই বক্তব্য উপস্থাপন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০-দলীয় শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ২২ আসন দিয়েছে বিএনপি। যদিও জামায়াতকে আসন বণ্টনের শুরুতে ২৫ আসনে ছাড় দেয়ার কথা ছিল। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত এবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট করে দুটি আসনে জয়ী হয়। আর জোটের সিদ্ধান্তে দশম নির্বাচন বয়কট করে দলটি। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সংগ্রহ করে ইসির আইন শাখা। ওই রায়ের ভিত্তিতেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করার অনুমোদন চেয়ে কমিশনে ফাইল তোলা হয়। এরপরই তা অনুমোদন করে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারী মুদ্রণালয়ে পাঠানো হয়। ইসির প্রজ্ঞাপনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর ৬৩০/২০০৯ এর প্রদত্ত রায়ে আদালত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৯০(এইচ) এর উপধারা ৪ অনুযায়ী নিবন্ধন বাতিল করা হলো। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন পেয়েছিল। নিবন্ধন নম্বর-১৪। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন ব্যক্তি। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের রুল জারি করেন। এরপর ২০১৩ সালের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপীল করেছিল জামায়াত। ওই আবেদনের বিষয়টি এখন পর্যন্ত সুরাহা হয়নি। জামায়াতের এই ২২ প্রার্থী হলেন দিনাজপুর-১ আসনে মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ আসনে মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ আসনে মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ আসনে মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ আসনে অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আসনে আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ আসনে এ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আসনে অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ আসনে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ আসনে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ আসনে মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আসনে শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ আসনে ডাঃ শফিকুর রহমান, সিলেট-৬ আসনে মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ আসনে ডাঃ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ। নির্বাচন কমিশনকে তথ্য গোপন করে স্বতন্ত্র তিন প্রার্থী আপেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তার হলেনÑ জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম বুলবুল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), জামায়াতের বাশখালী উপজেলা আমির জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ( চট্টগ্রাম-১৬) ও পাবনা-১ এর যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার মজিবুর রহমান। ভোট করতে পারছে না ৪ প্রার্থী ॥ উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিএনপির মনোনয়নে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা তিনজনের প্রার্থিতা সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আটকে গেছে। এছাড়া আরেকজনের মনোনয়নপত্র স্থগিত করে হাইকোর্ট সোমবার রুল জারি করেছে। ফলে ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-২০ আসনে বিএনপির প্রার্থী ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, বগুড়া-৩ আসনের প্রার্থী আদমদিঘী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোহিত তালুকদার এবং বগুড়া-৭ আসনের প্রার্থী শাহজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার বাদল, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা খান রিতা আর ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।
×