ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সামিহা রহমান

বিজয়ের সাজ পোশাক

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

বিজয়ের সাজ  পোশাক

আধুনিকতা বলুন আর সচেতনতা বলুন, আমাদের সংস্কৃতির একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দিবসভিত্তিক সাজ- পোশাকের ব্যাপারটি। বিজয় দিবসও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের আবেগ, ভালবাসা, হাসি-কান্নার সবটুকু ঘিরে আছে যে শব্দের অবস্থান তা হলো আমাদের স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতার গৌরব আমরা ধারণ করেছি আমাদের হৃদয়ে। সেই গৌরব এবং ভালবাসার কিছু বহির্প্রকাশ ঘটে সাজে এবং পোশাকে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা লাল সবুজের পতাকা। এই এক টুকরো পতাকা মুক্ত আকাশে উড়ে জানান দেয় আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নাগরিক। বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি আমারই স্বাধীন দেশে। আর তাই হয়ত পতাকার রঙের প্রতি আমাদের আবেগের কমতি নেই। বিশেষ করে বিজয় দিবস এলে সে আবেগে পূর্ণ উদ্যমে ঢেউ খেলে যায়। আপামর জনতা উদ্বেলিত হয় পতাকার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে। এ দিনটি বাঙালীর কাছে উৎসবও বটে। আর উৎসবের দিন একটু সাজ সাজ রব না থাকলে কি চলে? মোটেও না। তাই তো স্বাধীনতার উৎসবে নিজেকে লাল সবুজে রাঙিয়ে নেয়া ছাড়া উপায় কি? এই দিনের পোশাকে থাকবে পতাকার রং লাল-সবুজের প্রাধান্য। পোশাকের সঙ্গে ওড়না, ব্যান্ড, ব্যাগ অথবা অলঙ্কারে থাকা চাই তার ছোঁয়া। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে বাঙালী তরুণ-তরুণীরা সেজে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। নিজেকে তুলে ধরে লাল-সবুজ পোশাকে। বিশেষ কোন দিবসে নারীর সাজের মূল উপকরণ হয়ে ওঠে শাড়ি। তাছাড়া বাঙালী নারীর সাজের সঙ্গে জাতীয় পোশাক শাড়ির ঐতিহ্য অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই দিনে মেয়েদের প্রধান সঙ্গী হতে পারে শাড়ি। সেটি একরঙা বা প্রিন্টেড হতে পারে। আবার ব্লক, এ্যাপ্লিক অথবা সুতার কাজের হতে পারে। বাঙালীয়ানার যে কোন উৎসবে প্রাধান্য থাকে সুতি শাড়ির। তাও যদি হয় তাঁতের তাহলে ষোলোকলা পূর্ণ। এবারের স্বাধীনতা দিবসে নারীর সঙ্গী হতে পারে এমন কোন একটি সুতির শাড়ি। এর সঙ্গে পরতে পারেন বাহারি ডিজাইনের ব্লাউজ। হাতায় গলায় লেস বসানো, অথবা ভিন্ন রঙের পাইপিন বেশ মানিয়ে যায়। লাল-সবুজ শাড়ি পরতে না চাইলেও একরঙা শাড়ির সঙ্গে লাল-সবুজের সংমিশ্রণে ব্লাউজ বেশ মানাবে। এক্ষেত্রে সাদা, ঘিয়া কিংবা কালো শাড়ির সঙ্গে মানানসই লাল কিংবা সবুজ ব্লাউজের হাতায় লেস বসানো হলে দেখতে আরও সুন্দর লাগবে। এছাড়া এক কালারের লাল শাড়ি এবং সবুজ ব্লাউজ পরতে পারেন। এছাড়া বেছে নিতে পারেন আরামদায়ক সালোয়ার-কামিজ অথবা লম্বা কুর্তা। এসব পোশাকেও থাকবে লাল সবুজের ছোঁয়া। এক্ষেত্রেও উঁচু গলা ও লম্বা হাতা মানানসই হবে। ফ্যাশনে ফ্লোরাল প্রিন্টের চাহিদাই বেশি। স্বাধীনতার লাল রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পরে নেয়া যায় লং কামিজ বা ফতুয়া। সঙ্গে গাঢ় সবুজ রঙের সালোয়ার, ওড়না থাকতে পারে। পোশাকে লাল-সবুজ রাখতে না চাইলেও রাখুন ওড়না, স্কার্ফ ও গহনায়। আর যদি আলাদাভাবে পোশাক কেনা না হয়ে থাকে, তাহলে একটি বড় পতাকা কিনে গায়ে জড়িয়ে নিতে পারেন। মেকআপের ক্ষেত্রেও ধরে রাখতে পারেন স্বাধীনতার রং। কপালে পরতে পারেন বড় লাল টিপ। ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারেন লাল লিপস্টিক। হাতে থাকতে পারে লাল-সবুজ চুড়ি। তাছাড়া চুলের ব্যান্ডটিও হতে পারে লাল-সবুজ রঙের। খোঁপায় পরতে পারেন লাল ফুল। যেহেতু আপনি বাহিরেই দিনটি কাটাবেন, তাই খেয়াল রাখুন আপনার মেকআপ যেন বিরক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। এমন দিনে একদমই হালকা মেকআপ করুন। শুধু চোখটাকে একটু বেশি প্রাধান্য দিন। মোটা করে কাজল লাগাতে পারেন। অথবা চোখে দিতে পারেন স্মোকি লুক। গলায় পরতে পারেন পুঁথি, মাটি, কাঠ বা সুতার মালা। সঙ্গে মিল রেখে কানের দুল, ও অন্যান্য গহনা। জাতীয় এসব উৎসবে মেয়েদের পায়ে গাঢ় আলতা আনে অন্যরকম আবহ। এ যেন বাঙালী সাজের সবটুকু হাজির করা। দিনজুড়ে প্রোগ্রাম থাকলে অবশ্যই আরামদায়ক জুতা বা স্যান্ডেল পরবেন। যদি হিলে অভ্যাস না থাকে তাহলে হিল জুতা না পরাই ভাল। রোদে বের হলে সানগ্লাস, ছাতা, পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। আপনি যেখানেই যান, আপনার উৎসব আনন্দ যেন অটুট থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ছেলেদের ক্ষেত্রে যাদের পাঞ্জাবি পছন্দ তারা খাদি কাপড়ের পাঞ্জাবি বেছে নিতে পারেন। কেননা এখন শীতকাল। লাল-সবুজের সংমিশ্রণের পাঞ্জাবি কিনে নিতে পারবেন বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস থেকে। ছেলেদের পোশাকের ক্ষেত্রেও সুতিকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। যে কোন দিনে সুতি অনেক বেশি আরামদায়ক। লাল-সবুজ সংগ্রহে না থাকলে শুধু লাল কিংবা সবুজও পরে নিতে পারেন। সঙ্গে একটি পতাকা বেঁধে নিতে পারেন কপালে বা হাতে। আকাশি রঙের জিন্স কিংবা সাদা পাজামা মানিয়ে যাবে। সবুজ পাঞ্জাবিতে লালের উপস্থিতি আপনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে অনেক বেশি। এদিন ইচ্ছা করলে একটি পতাকাও আঁকিয়ে নিতে পারেন নিজের গালে। ছবি : কে-ক্রাফট
×