ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রত্যাশী শিশুর মৃত্যুতে ক্ষোভ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

 যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রত্যাশী শিশুর মৃত্যুতে ক্ষোভ বাড়ছে

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের এক প্রত্যন্ত এলাকা পাড়ি দেয়ার পর সাত বছর বয়সের জ্যাকেলিন কাল ম্যাকুইনকে ৬ ডিসেম্বর তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত কর্মকর্তারা। জ্যাকেলিন তার বাবা ও অন্য ১শ’ ৬১ আশ্রয়প্রত্যাশীর সঙ্গে স্বদেশ গুয়েতেমালা ত্যাগ করে এ সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারলেও মৃত্যুর শীতল স্পর্শে ঢলে পড়েছে কয়েক ঘণ্টা পর। খবর গার্ডিয়ান। জ্যাকেলিনের বাবা পরে কর্মকর্তাদের বলেছেন যে, জ্যাকেলিনকে নিয়ে যখন ফরওয়ার্ড অপারেটিং বেইস বাউন্ডস নামের একটি ক্ষুদ্র ঘাঁটিতে পৌঁছেন তখন তার প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়ে থাকবে। সম্ভবত তখন তার গায়ে জ্বর ছিল। তারা বেশ কয়েকদিন ধরে প্রায় কিছুই খেতে পাননি এবং তাদের সঙ্গে ছিল না পানীয় জল। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস এ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিপিবি) কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন যে সুস্থ আছে এবং তাকেও তার বাবা নেরি কালকে প্রায় ৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে একটি বড় অভিবাসন প্রত্যাশী কেন্দ্রে যাওয়ার বাসের জন্য। তারা খুব ভোরে বাসে ওঠার আগে তার বাবা কর্মকর্তাদের বলেন, তার মেয়ে অসুস্থ এবং বমি করছে। এর মধ্যে তারা পৌঁছে গেছেন। এর দেড় ঘণ্টা পর জ্যাকেলিনের শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। তখন নিউ মেক্সিকো থেকে একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয় টেক্সাসের এলপাসোতে এক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে বিলম্ব হয়ে গেছে অনেক। সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ২৭ ঘণ্টা পর। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রভিডেন্স হসপিটালের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী সংক্রমণজনিত কষ্টে জ্যাকেলিনের মৃত্যু হয়েছে। আটকাবস্থায় এ ধরনের একটি শিশুর মৃত্যুতে জাতীয় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং ডেমোক্র্যাটরা জ্যাকেলিনের মৃত্যুর তদন্ত দাবি করেছেন। সিনেটে সংখ্যালঘু দলের নেতা চাক শুমার বলেছেন, ৭ বছর বয়সের একটি মেয়ের কাস্টমস এ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশনের তত্ত্বাবধানে থাকা একটি মেয়ের জলশূন্যতা ও সংক্রমণজনিত কারণে মারা যাওয়া উচিত নয়। তিনি দাবি করেন, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও এর নেতা কার্টসজেন নিলসেনকে জবাবদিহি করতে হবে। প্রতিনিধি কক্ষের আগামী স্পীকার ন্যানসি পেলোসি বলেন, একটি শিশু মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুতে সকল আমেরিকান দুঃখিত এবং এ মেয়েটির পরিবার আমাদের দেশে একটি স্বাধীন ভবিষ্যত ও নিরাপত্তা চেয়েছিল। নিউ মেক্সিকো ও পার্শ্ববর্তী টেক্সাসের সিনেটর এবং ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস সদস্যরাও এক খোলা চিঠিতে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তারা এ বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন যে, সিপিবি কমিশনার কেভিন ম্যাকআলিনান মঙ্গলবার সিনেট জুডিসিয়ারি কমিটিতে সাক্ষ্য প্রদানকালে যখন বলেছেন, সীমান্ত অতিক্রমকারী বিপুলসংখ্যক পরিবার ও শিশুর ব্যবস্থা করতে সংস্থা জোর চেষ্টা চালাচ্ছে তখন তিনি জ্যাকেলিনের মৃত্যুর সংবাদ কেন উল্লেখ করেননি? জ্যাকেলিনের মৃত্যুর প্রায় এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্টের তদন্তের দাবি মুখে সিপিবি কেবল নিশ্চিত করেছে যে, একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হোয়াইট হাউস, সিপিবি ও ডিএইচএম বলেছে, সীমান্ত সংস্থার সদস্যরা জ্যাকেলিনকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছে। ম্যাকআলিনান এক বিবৃতিতে বলেছেন, যখন জানা গেল যে, জ্যাকেলিন সুস্থ নয় তখন তারা সাধ্যানুযায়ী সবকিছু করেছেন। তার বাবা তার কষ্টের কথা সীমান্ত সংস্থার সদস্যদের কাছে বলার পরপরই তার জরুরী চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোগ্যান গিডলে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমে বিপজ্জনক পরিস্থিতির কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, আশ্রয়-প্রার্থীকে ২ হাজার মাইলব্যাপী সীমান্তের বিভিন্ন স্থানের পরিবর্তে চিহ্নিত বন্দরে প্রবেশ পথ দিয়ে আসা উচিত। এ প্রবেশ পথ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা, পাচার, চরম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও বন্যপ্রাণীসহ অসংখ্য ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু অভিবাসী অধিকার গ্রুপগুলো বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসন আশ্রয় প্রার্থীদের সংখ্যা সীমিত করে ওই বিপদকে বাড়িয়ে তুলেছেন। এসিএলইউ সীমান্ত অধিকার কেন্দ্র এসিএলইউয়ের এ্যাডভোকেসি ম্যানেজার সিনথিয়া পম্প বলেছেন, গতবছর অভিবাসন প্রত্যাশীদের মৃত্যু সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদিও সীমান্ত অতিক্রমকারীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল।
×