স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ শেষ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সেই সুখ না পেলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করেছে মাশরাফিবাহিনী। এবার সামনে টি২০ সিরিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ আছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি২০ সিরিজে হারানোর মিশনে সোমবারই নামবে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার প্রথম টি২০ অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ২টায় ম্যাচটি শুরু হবে। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ ম্যাচ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হবে। ২০ ও ২২ ডিসেম্বর যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ ম্যাচ বিকেল ৫টায় শুরু হবে।
সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে এ সিরিজে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর আছে। মানসিকভাবেও আছে চাঙ্গা। প্রথম টেস্টে ৬৪ রানে জেতার পর দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১৮৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাত্তাই দেয়নি। প্রথমবারের মতো কোন দলকে ইনিংসে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও সহজেই ৫ উইকেটে জিতেছে। মনে করা হয়েছিল ২০০৯ সালের পর আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে দেবে বাংলাদেশ। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। সাই হোপের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেটি তাই সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে পরিণত হয়। অঘোষিত ‘ফাইনালে’ রূপ নেয় ম্যাচটি। যে দল জিতবে, ওয়ানডে সিরিজের শিরোপা যে তাদেরই হয়ে যাবে। খেলাটি আবার হয় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেক ম্যাচটিতে জিম্বাবুইয়ের কাছে হেরেছে। তাই শঙ্কাও ছিল। সিলেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডে অভিষেকে না আবার একই দশা হয়। যেভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে বিপদমুক্ত থাকার উপায় ছিল না। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় ওয়ানডেতে পাত্তাই পায়নি। ৮ উইকেটে হেরে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে। এ বছর জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। পাঁচ মাস না যেতেই আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজে হারাল বাংলাদেশ।
এবার টি২০ সিরিজের মিশন সামনে। এই মিশনেই সাফল্য কিভাবে পাওয়া যায় তা নিয়েই ভাবছে বাংলাদেশ। টি২০তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনেক শক্তিশালী দল। দলটি টি২০ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল। টি২০ ক্রিকেট র্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশের (১০তম) ওপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সপ্তম)। দলটির ক্রিকেটাররাও বিশ্বজুড়ে যে টি২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগগুলো হয় তা দাপিয়ে বেড়ান। সেখানে বাংলাদেশের টি২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আছেন টি২০ ফেরিওয়ালা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীমও টি২০ লীগগুলো খেলেন। তবে সেটি নিয়মিত নয়। এক সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের আর কেউ নিয়মিত টি২০ লীগগুলো খেলেন না। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটাররা পারদর্শী। টি২০ তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের নখদর্পণে। তবে এ বছর জুলাই-আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে বাংলাদেশই টি২০ সিরিজে জিতে। প্রথম টি২০ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে হয়। তাতে বৃষ্টি আইনে হারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ হয় মার্কিন মুল্লুকে। সেখানে টানা দুই টি২০ জিতে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ। সেই সিরিজ জয়ই বাংলাদেশকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। আবার এবার খেলা দেশের মাটিতে। টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ জেতায় টি২০ সিরিজেও আত্মবিশ্বাস থাকছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এই সুযোগ নিয়ে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি২০ সিরিজেও হারিয়ে দেয়া গেলে হয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এর আগে ৫টি দ্বিপক্ষীয় টি২০ সিরিজে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। দুটিতে জিতে। দুটিতে হারে। একটি হয় ড্র। এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ হয়। দুই দলের মধ্যকার প্রথমবার একাধিক ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়। তাতে জিতে বাংলাদেশ। এর বাইরে যখন সফরে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অথবা সফরে যায় বাংলাদেশ, একটি করে টি২০ ম্যাচের সিরিজ হয়।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথমবার এক ম্যাচের সিরিজে হারে বাংলাদেশ। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে এক ম্যাচের সিরিজে পাল্টা জবাব দেয় বাংলাদেশ। ২০১২ সালে দেশের মাটিতে হারে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের একমাত্র টি২০ ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। দেশের মাটিতে দুইবার হওয়া সিরিজে একবার হারে। একবার জিতে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় তিন সিরিজের একটিতে জিতে। একটিতে হারে। একটিতে হয় ড্র। তার মানে এবার যে দল সিরিজ জিতবে, তারাই সিরিজ জয়ের দিক দিয়ে এগিয়ে যাবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবমিলিয়ে ৯টি টি২০ খেলে বাংলাদেশ। চারটিতে জিতে। চারটিতে হারে। একটি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। এখানেও দুই দল সমানে সমান। তবে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশই এগিয়ে আছে। সর্বশেষ দুই ম্যাচেই জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি২০ যতই ভাল দল হোক বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে নয়। পরিসংখ্যান তাই বলছে। এবার সেই পরিসংখ্যানে বাংলাদেশই এগিয়ে যাক, এটিই সবার চাওয়া।
ওয়ানডে সিরিজ শেষে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘আমি আশা করছি, টি২০তে ভাল করবে দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি২০’র বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। টি২০তে অনেক শক্তিশালী দলও। তবে বাংলাদেশ ভাল করবে আশা করছি।’ মাশরাফির এই আশা এখন পূরণ হলেই হয়।
