ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

দেশপ্রেমের গান-কবিতায় দীপ্ত বিজয়ের অনুষ্ঠানমালা

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

দেশপ্রেমের গান-কবিতায় দীপ্ত বিজয়ের অনুষ্ঠানমালা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহরজুড়ে ভেসে বেড়ালো স্বদেশের গান। কবিতার দোলায়িত ছন্দে উচ্চারিত হলো দেশপ্রেমের কথা। নৃত্যশিল্পীর নাচের মুদ্রায় উপস্থাপিত হলো যুদ্ধদিনের স্মৃতিকাতরতা। সবকিছুর মাঝেই ছিল বাঙালীর বীরত্বগাথা রণাঙ্গনের শাণিত সময়ের কথা। অহঙ্কারে উচ্চারিত হয়েছে ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’। এভাবেই মহান বিজয় দিবসের আগের দিন শনিবার শহর ঢাকা যেন পরিণত হলো বিজয় উৎসবের শহরে। পৌষের প্রথম দিনে নগরের নানা প্রান্তজুড়ে সুর ও ছন্দে দীপ্ত হলো বিজয় দিবস কেন্দ্রিক অনুষ্ঠানমালা। পৌষের সন্ধ্যায় রঙিন হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চ। একাত্তরের চেতনাদায়ী গান-কবিতায় বয়ে যায় প্রাণের স্পন্দন। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি দর্শক-শ্রোতাদের জন্য হয়ে ওঠে দারুণ উপভোগ্য। স্বদেশের প্রতি অনুরাগের বাণীতে ভেসে বেড়ায় ‘হায়রে আমার মন মাতানো দেশ’ গানের সুর। তামান্না রহমানের পরিচালনায় সেই সুরের তালে মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে নাচ করে একঝাঁক নৃত্যশিল্পী। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সংক্ষিপ্ত স্বাগত কথন শেষে সমবেত নৃত্য পরিবেশনায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার/ সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার...। এই গানের তালে দীপা খন্দকারের পরিচালনায় পরিবেশিত হয় বৃন্দ নাচ। সুলতানা হায়দারের পরিচালনায় ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় আরেকটি সমবেত নৃত্য। এরপর শারীরিক কৌশলের উপস্থাপনায় একাডেমির শিল্পীদের এ্যাক্রেবেটিক প্রদর্শনী মুগ্ধতা ছড়ায় দর্শকের নয়নে। ঢাকা সাংস্কৃতিক দল পরিবেশিত দুটি সম্মেলক সঙ্গীতের শিরোনাম ছিল ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ ও ‘জয় বাংলা জয় বাংলা বইলারে’। আবিদা রহমান সেতুর কণ্ঠে উঠে লড়াই-সংগ্রামের অর্জিত বাংলার স্বাধীনতার কথা। গেয়ে শোনান ‘আমি পেলাম একটি পতাকা’। স্বরচিত কবিতাপাঠ করেন কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ। ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করে তামান্না রহমান পরিচালিত নৃত্যদল। অন্তর দেওয়ানের পরিচালনায় পরিবেশিত হয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর দেশাত্মবোধক নাচ। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম পরিবেশন করে ‘মুজিব মানে যুদ্ধ জয়গান’ ও ‘আরে আমার বাংলাদেশের মাঝি ভাই’ শিরোনামের গান। রোকসানা আক্তার রূপসার কণ্ঠে গীত হয় ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না’। সুচিত্রা রাণী সূত্রধর গেয়েছেন ‘সেই রেললাইনের ধারে/মধ্যবয়সী এক নারী রয়েছে দাঁড়িয়ে’। হিরক সরদার পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘ও আমার জন্মভূমি অপরূপা বাংলাদেশ’। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শোনান ইয়াসমিন আলী ও বাপ্পা মজুমদার। একাডেমির বাউলশিল্পীরা শুনিয়েছেন ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’ ও ‘আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে’ শিরোনামের সঙ্গীত। কবিতার দোলায়িত ছন্দের আবৃত্তি পরিবেশন করেন কৃষ্টি হেফাজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী তামান্না তিথি। ‘স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দিন শেষ/ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবেই বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে রাজধানীর সাত মঞ্চে চলছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসব। রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মঞ্চে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও উজান। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফকির আলমগীর, সমর বড়ুয়া, অলক দাশ গুপ্ত ও শেখ মিলন। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র, স্বর ব্যঞ্জন ও বাকশিল্পাঙ্গন। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন রেজীনা ওয়ালী লীনা, মাহিদুল ইসলাম, আহসান উল্লাহ তমাল, সুপ্রভা সেবতি। শিশুতোষ পরিবেশনায় ছিল কল্পরেখা, রঙ্গপীঠ শিশুদল ও সন্ধান লিটন থিয়েটার। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন ভোরের পাখী ও বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস। পথনাটক পরিবেশন করে সময় ও নাট্যযোদ্ধা। আজ রবিবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের হবে।
×