ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ হুঁশিয়ারি দিয়েও কাজ না হওয়ায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এবার ‘কঠোর’ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কুড়িগ্রাম-৩ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণের অভিযোগে উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতি শিউলীকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবারের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে ক্ষমতাসীন দলটি। এ প্রসঙ্গে শনিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এটা দেড় ডজন নয়, আরও অনেক কম। নির্বাচনের মাঠে নিজ দল আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা এখনো রয়েছেন তাদের আগামীকাল সোমবারের মধ্যে সরে দাঁড়াতে হবে। সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি সবাইকে জানাতে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে মহাজোটের এ সব বিদ্রোহী প্রার্থীদের। একইসঙ্গে তাদের অবশ্যই আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থীর সপক্ষে ভোটের মাঠে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। নতুবা আমরা সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেব। সংবাদ সম্মেলনে নানক অভিযোগ করেন, ভরাডুবির আশঙ্কায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ড. কামাল হোসেনরা বিভিন্ন সময় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। দেশের সংকটময় মুহূর্তে কখনই তাদের পাওয়া যায়নি। আসলে ড. কামাল হোসেনরা হচ্ছেন পরগাছা। তিনি এখন সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং ১৯৭৫ সালে ড. কামাল হোসেনের রহস্যাবৃত বিতর্কিত ভূমিকার কথা দেশবাসী জানে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে তাকে কখনো পাওয়া যায়নি বরং তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন ড. কামাল হোসেনের ষড়যন্ত্র রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতারই অংশ। এক প্রশ্নের তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তো তাদের (বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আবার রাষ্ট্রপতির কাছে তারা কী জন্য চিঠি দিয়েছেন, এটা তারাই ভাল বলতে পারবেন। বাস্তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা নানাভাবে মিথ্যাচার করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে চায়। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মহাসচিব বগুড়ায় নিজ দলের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েছিলেন এটা আমরা দেখেছি। লন্ডনে বসে তারেক রহমান আইএসআইয়ের সঙ্গে গোপন বৈঠক করছে। তারা বাংলাদেশকে আবারও বোমা এবং আগুন সন্ত্রাসের দিকে নিয়ে যেতে চায়। তাদের এই ষড়যন্ত্র আর সফল হবে না। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিএনপি আরও সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘রিজভীর (বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব) অসংলগ্ন কথাবার্তা ও নির্লজ্জ মিথ্যাচার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যা শুনলে স্বয়ং ইবলিশও লজ্জা পেতে পারে। আপনারা দেখছেন যে, তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কিভাবে লজ্জাকর মন্তব্য করেছেন। মিথ্যা বলা যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়, তাদের পক্ষে সত্যের পথে ফিরে আসা অত্যন্ত দুরূহ।’ তিনি বলেন, বিএনপি মিথ্যাচার করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিএনপির প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এটা বিএনপির পুরানো অভ্যাস। তারা এই মিথ্যাচার নির্বাচনের দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত করবে। মতি শিউলি বহিষ্কার ॥ এদিকে আওয়ামী লীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম-৩ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণের অভিযোগে এবং সংগঠনের আদর্শ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত থাকায় কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতি শিউলীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে গঠনতন্ত্রের ৪৬ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাকে দল থেকে কেন চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না এই মর্মে কারণ দর্শানো নোটিস পাঠানো হয়েছে। নোটিসের জবাব আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে (বাড়ি-৫১/এ, সড়ক-৩/এ, ধানম-ি আ/এ, ঢাকা) প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুর সবুর, সাবেক ডাকসু ভিপি ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আক্তারুজ্জামান, আনোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার প্রমুখ। উল্লেখ্য, শনিবার নিজের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে যাওয়ার পথে ফেনীর দাগনভূঞায় এ বিদ্রোহী প্রার্থিতার ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও স্পষ্ট বলেছেন, ‘আপনারা অপেক্ষা করুন, দ্রুতই তাদের (বিদ্রোহী) বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×