ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বড় দুই দলের প্রার্থীরা ব্যস্ত গণসংযোগে, লিফলেট বিতরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

বড় দুই দলের প্রার্থীরা ব্যস্ত গণসংযোগে, লিফলেট বিতরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোটের মাঠে এখন সোচ্চার আওয়ামী লীগ-বিএনপি। রাজধানী ঢাকায় বড় দুই দলের প্রার্থীরা গণসংযোগ করছেন। বাড়ি বাড়ি লিফলেট বিতরণ করছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। বিশাল জনসমাগম ঘটিয়ে মহাজোট প্রার্থী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে নৌকায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী যুবলীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের আয়োজনে রাজধানীর মতিঝিলে এই বিশাল শোডাউন ও সমাবেশ হয়। সমাবেশ থেকে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়, সারাদেশে নৌকার পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার স্বার্থে প্রতিটি ভোট হোক শেখ হাসিনার জন্য। শনিবার বিকেলে মহাজোট প্রার্থী মেননের নির্বাচনী প্রচারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে হাজার হাজার যুবক ও তরুণ উপস্থিত হয়ে বিশাল নির্বাচনী শোডাউন করে। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের সামনের রাস্তায় এই সমাগম ঘটে। রাস্তার একপাশে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ করে এই নির্বাচনী প্রচার সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা-৮ আসনে মহাজোটের প্রার্থী রাশেদ খান মেনন। উল্লেখ্য, এই আসনে নৌকার পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট নিজেও। মহাজোটের প্রার্থী রাশেদ খান মেনন যুবলীগের নেতাকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তার (সম্রাট) আহ্বানে ঢাকা-৮ আসনে নৌকার পক্ষে নির্বাচনী যুব সমাবেশ প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের যুবকরা শেখ হাসিনার উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এই তরুণরাই একদিন ঢাকা অচল করেছিল। এই তরুণদের হাতেই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন হয়েছিল। এই তরুণরাই মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। আজকে সেই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারায় সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের ২২ শতাংশ তরুণ এবার নৌকার পক্ষে ভোট দেবে। আমি বিশ^াস করি, এই ভোট হবে উন্নয়নের পক্ষে, গণতন্ত্রের জন্য, দুর্নীতি ও অসাম্যের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই আহ্বান জানিয়েছেন উল্লেখ করে মেনন বলেন, আপনাদের একটি ভোট, সেই ভোট নির্ধারণ করবে তিনি (শেখ হাসিনা) আবার ক্ষমতায় ফিরে আসবেন কিনা? তাই ঢাকা-৮ আসনে যে ভোট হবে, সেই ভোট আমার জন্য নয়, সেই প্রতিটি ভোট হোক শেখ হাসিনার জন্য। যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, আমরা সবাই মিলে এই আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দেই। আর ওই দুর্নীতিবাজ, দুঃশাসনের নায়ক, সন্ত্রাসের নায়ক, হাওয়া ভবনের নায়কদের চিরতরে প্রতিহত এবং পরাজিত করি। কারণ তাদের সঙ্গে আজ যুক্ত হয়েছে জামায়াত-শিবির আর তাদের পক্ষে লাঠিয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে ড. কামাল, আ স ম রব ও মান্নারা। তাই, আসুন ৩০ তারিখ সারাদিন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ের মাসে অশুভ শক্তিকে আবারও পরাজিত করি। সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে অহঙ্কারী নেতা দাবি করে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বলেন, মেনন ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকা-৮ আসনের লাখ লাখ যুব-জনতা রয়েছে। নির্বাচনের মাঠে প্রতিযোগিতা হবে। নির্বাচনের মাঠে রাশেদ খান মেনন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রমাণ হবে ৩০ তারিখ। আজকে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তরুণ-যুব-ছাত্রসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ নৌকার সঙ্গে এককাতারে এসেছে। সবাই অপেক্ষায় রয়েছে ৩০ তারিখ ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়যুক্ত করব, এই শপথ আজকে নিলাম। বক্তব্য শেষ করে হাজার হাজার যুব-জনতা নৌকার পক্ষে মিছিল বের করে ঢাকা-৮ আসনের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, মাকসুদুর রহমানসহ অনেকে। অন্যদিকে স্ত্রী সালমা হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন ঢাকা-৪ আসনের মহাজোটের প্রার্থী ও জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ৫৪ নং ওয়ার্ডের শাহাদাত হোসেন সড়কে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাপা নেতাদের উদ্যোগে গণসংযোগ করেন বাবলা। এ সময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজি মাসুদ, জাপা নেতা ইব্রাহীম মোল্লাসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিপুল নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে জাতীয় ছাত্রসমাজ দুই শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে লাঙ্গলের পক্ষে প্রচার মিছিল করে। মিছিলটি ধোলাইপাড় থেকে শুরু হয়ে জুরাইন, পোস্তগোলা হয়ে শ্যামপুর বালুরমাঠে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকা-৪ নির্বাচনী এলাকার বিভিন্নস্থানে বাবলার পক্ষে প্রচার মিছিল করে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম শনিবার বেলা ১১টায় কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের বড় মনোহরিয়ায় ছায়ানটের প্রতিষ্ঠিত নবনির্মিত নালন্দা বিদ্যালয়ের পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্বাচনী এলাকায় শনিবার বেলা ১১ টার দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ থেকে জাতীয় পতাকা মিছিল বের হয়। মিছিলটি জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা ঘুরে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। বিজয়ের পতাকা শিরোনামের এই মিছিলে হাজার হাজার নেতাকর্মী জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সাংবাদিকদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, সেটি কোনভাবেই কাম্য নয়। এই আচরণ তাদের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে নতুন করে কোন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেফতার করছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। পুলিশ সেসব তদন্ত করেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-৬ আসনের মহাজোটের প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, বিজয়ের মাসে স্বাধীন এ বাংলাদেশে রাজাকারদের কোন স্থান নেই। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের এ মাসের ১৬ তারিখে স্বাধীন বাংলার পতাকা বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিয়েছিলাম। বিজয়ের এ মাস ৩০ ডিসেম্বরে আরেকটি বিজয়ের পতাকা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেব।
×