ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে থাকবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের রোডম্যাপ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে থাকবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের রোডম্যাপ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী ১৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হবে। ওইদিন সকাল দশটায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে এ ইশতেহার প্রকাশ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব এবং দলের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জনকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে সমৃদ্ধিশীল বাংলাদেশের রোডম্যাপ তুলে ধরা হবে। একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপরেখাও তুলে ধরা হবে এতে। ২০০৮ সালের ‘দিন বদলের সনদ’, ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’-এর ধারাবাহিকতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারের মূল সেøাগান হচ্ছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।’ আওয়ামী লীগের ইশতেহারে এবারও থাকছে নানা চমক। বিশেষ করে দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তাদের নিয়ে থাকছে বিশেষ পরিকল্পনার কথা। ইশতেহার প্রকাশের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবী, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, দেশী-বিদেশী সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রায় এক হাজার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দলীয় ইশতেহার জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় মাল্টিমিডিয়া প্রজেকশনের পাশাপাশি একটি ছোট ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করা হবে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইশতেহার উপস্থাপনের আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বক্তব্য রাখবেন। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সঙ্গে জড়িত একাধিক নেতা জানান, ২০০৮ সালের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জনমনে যে উন্মাদনা ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছিল, এবারের ইশতেহারে তার থেকেও ব্যাপক আকারে সাড়া পড়বে। আওয়ামী লীগ এবার নতুন ভোটারদের গুরুত্ব দিচ্ছে। সূত্র জানায়, বরাবরের মতো এবারের ইশতেহারেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। সে অনুযায়ী ১৯৯৬-২০০১, ২০০৯-২০১৩ এবং ২০১৪-২০১৮ মেয়াদের সাফল্য উল্লেখ থাকবে। থাকবে ২০১৯-২০২৩ মেয়াদে নির্বাচিত হলে এ সময়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা। ‘রূপকল্প ২০৪১’-এর সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় থাকবে আগামী এক শ’ বছরের জন্য ব-দ্বীপ বা ডেল্টা পরিকল্পনা। এছাড়া ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত সরকারের দুঃশাসনের চিত্রও তুলে ধরা হবে ইশতেহারে। এবার নতুন করে ‘বিশেষ অঙ্গীকার’ হিসেবে কিছু বিষয়কে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে। মেগাপ্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, ব্লু ইকোনমি, ব-দ্বীপ বা ডেল্টা পরিকল্পনা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিদ্যুত-জ্বালানি, সার্বিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন, টেকসই উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ, নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গীবাদ ও মাদক নির্মূল, নিরাপদ সড়ক ও দারিদ্র্য নির্মূল উল্লেখ থাকবে ‘বিশেষ অগ্রাধিকার’ হিসেবে। পাশাপাশি গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা, দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ শিরোনামে গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন তথা গ্রামে আধুনিক সুবিধার উপস্থিতি, শিল্প উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সুরক্ষা, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য খাতে থাকবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। প্রতিটি খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের অতীত পদক্ষেপ তুলে ধরে সেগুলোর অগ্রগতি উল্লেখ করে ভবিষ্যতের করণীয় থাকবে। জানা গেছে, এবারের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিশ্বজনীন স্বীকৃতির বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে। এতে ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ শিরোনামে থাকবে তরুণদের নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা। যাতে শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য একটি এবং গ্রামের তরুণদের জন্য আরেকটি আলাদা পরিকল্পনা থাকবে। এছাড়া ইশতেহারে থাকছে বিনিয়োগবান্ধব বাংলাদেশ গড়ে তোলার বিস্তারিত পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা। এতে ২০৩০ সাল, ২০৪০ সাল, স্বাধীনতার ১০০ বছরপূর্তিতে ২০৭১ সালে দেশকে আওয়ামী লীগ কোথায় নিয়ে যেতে চায়, তারও উল্লেখ থাকবে। ডেল্টা প্ল্যানে সন্নিবেশিত থাকবে ২১০০ সালের বাংলাদেশের অবয়ব। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এতে। সূত্র জানায়, ডেল্টা প্ল্যানে আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। ১০০ বছরের কয়েকটি ধাপ উল্লেখ করে কোন সময়ে কী করা হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকছে ইশতেহারে। ১০০ বছর পর অর্থাৎ আগামী ২১০০ সালে দেশ কোথায় থাকবে তা নিয়ে রয়েছে সুনির্দ্দিষ্ট একটি লক্ষ্য। আর ব্লু ইকোনমিতে সমুদ্রসীমা জয়ের পর সেখানকার সম্পদ কিভাবে ব্যবহার করা হবে, কিভাবে সমুদ্র সুরক্ষা করা হবে, এসবের দিকনির্দেশনাও থাকছে এবারের ইশতেহারে। প্রকৃতি ও পরিবেশ ঠিক রেখে সমুদ্রসম্পদকে কিভাবে কাজে লাগানো যাবে, তার বিস্তারিত থাকছে ইশতেহারে। এছাড়াও ইশতেহারে থাকতে পারে ‘মুজিববর্ষ’ পালন নিয়ে একটি অধ্যায়। এছাড়া ভবিষ্যত দিকদর্শন এবং যথারীতি পরিশেষে দেশবাসীর প্রতি থাকবে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তিকে বিজয়ী করতে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার উদাত্ত আহ্বান।
×