ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বাঙালী জাতি কোন দিন ভুলবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

 শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বাঙালী জাতি কোন দিন ভুলবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবীরা বাঙালীদের মাঝে দেশের জন্য আত্মত্যাগের প্রেরণাকে জাগ্রত করতে কাজ করেছিলেন বলেই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা তাদের হত্যা করেছিল। একইসঙ্গে বুদ্ধিজীবীরা তাদের কর্ম, লেখনী ও কথা দিয়েই মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে ও যুদ্ধে বিজয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তাই তারা অমর। বাঙালী জাতি তাদের কখনও ভুলবে না। শুক্রবার শহীদ বুুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে (আইডিইবি ভবনে) সংগঠনটির নিজস্ব উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, বিখ্যাত কলামিস্ট ও দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় এসব কথা বলেন। এর আগে তাকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে আইডিইবির স্মারক বই উপহার প্রদান করা হয়। স্বদেশ রায় বলেন, ১৪ ডিসেম্বরকে কোন শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত শোকের একটি সময়। হাজার বছরের ইতিহাস তৈরিতে ও একটি নতুন জাতি গঠনে ঐ জাতির জন্য ত্যাগ করতে হয়। যা বুদ্ধিজীবীরা করে গেছেন। মনে রাখতে হবে পৃথিবীর প্রতিটি বিজয়ের জন্যই একটি করে রক্তস্রোত রয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর সেই দিন, যেদিন বাঙালী বুদ্ধিজীবীরা তাদের রক্তের ¯্রােত বইয়ে দেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও পরে সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো বুদ্ধিজীবীরা তাদের লেখা দিয়ে বাঙালী জাতিকে ভাষা আন্দোলনের দিকে যেতে প্রেরণা দেয়, যার ভেতর সুপ্ত ছিল মুক্তিযুদ্ধের পথে যাবার আহ্বান। জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে এদেশে কয়েক লাখ বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। যাদের নাম জাতি তালিকায় তোলেনি। তারা হচ্ছেন গ্রামগঞ্জের শিক্ষকরা। যাদের কথা, পরামর্শ ও উৎসাহে লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে যান। এসব বুদ্ধিজীবী শিক্ষককে পাক সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে। ফলে আজ পর্যন্ত তাদের চাহিদা মেটাতে পারেনি বাঙালী জাতি। তাই এখন পর্যন্ত এদেশে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও স্বাধীনতার পরে বিপ্লবীরা যুদ্ধাপরাধ করেনি বা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মেলায়নি। পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রেই স্বাধীনতাবিরোধী কোন শক্তি থাকে না। বাংলাদেশেই কেবল আছে। যা অত্যন্ত দুঃখের। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা ক্ষমতায় আসার কারণে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের একটি শক্তি গড়ে তোলে। তারা তাদের স্বার্থেই ও তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় স্বাধীনতার বিরোধিতা করতে তাদের অনুসারী তৈরি করে। তাই এদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে যেন কোন শক্তি না থাকে সেজন্য শেখ হাসিনা সর্বশেষ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে দূরদর্শী নেত্রী হিসেবে স্বাধীনতা বিরোধীদের ধ্বংস করে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। যার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধী এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের বিচারের কাজ শেষ করে তা কার্যকর করেছেন। জাতি গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি কওমি জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় নিয়ে এসেছেন। ড. কামাল সম্পর্কে স্বদেশ রায় বলেন, সরকার গঠনের জন্য ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ পাওয়ার পর বাসা থেকে তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের সঙ্গে বেরিয়ে গেলেও রায়েরবাজারের কাছে গাড়ি থেকে নেমে পাকিস্তানি জেনারেল মিঠ্ঠা খানের সঙ্গে পরামর্শ করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তান চলে যান। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি কোথায় ছিলেন তার খবর কেউ জানেন না। পরবর্তীতে তিনি বাকশাল গঠনের সময়ও পালিয়ে অক্সফোর্ডে চলে যান। এই হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী ড. কামালের আসল চরিত্র। আজ তারই নেতৃত্বে বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে নির্বাচন করছে। মনে রাখবেন বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারা যে আকাক্সক্ষা নিয়ে জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন তার থেকে কোনক্রমেই পৃথিবীর কোন শক্তি সরাতে পারবে না। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের ধারা অব্যাহত রাখতে আইডিইবি দেশের সকল বিভাগীয় শহরে ও জেলা শহরে কমিটি গঠন করেছে। যাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে ৫ লাখ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী একযোগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখতে নৌকার পক্ষে আগামী নির্বাচনে নিজেরা ভোট দেবেন ও অন্যদের উৎসাহিত করবেন। বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা পরিষদের সভাপতি ও আইডিইবির ঢাকা জেলার সভাপতি খবির আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার সমকক্ষ কোন নেতা এদেশে নেই। তাই উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রাখতে ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য জীবন দেয়া শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের অর্জনকে ধরে রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে আইডিইবির সহ-সভাপতি ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একেএম আব্দুল মোতালেব বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরাই এদেশের স্বাধীনতার অন্যতম মেধাবী শহীদ।
×