ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী ইশতেহারে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প বাণিজ্যের বিকাশ চান ভোটাররা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

 নির্বাচনী ইশতেহারে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প বাণিজ্যের বিকাশ চান ভোটাররা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনী মাঠে নেমে পরেছে। দল ও জোটের নানান সমীকরণের পাশাপাশি দলের মনোনীত প্রার্থীরা আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটগ্রহণকে সামনে রেখে কয়েকদিনের মধ্যেই প্রচার-প্রচারণা আর নানান প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছুটে যাবেন ভোটারদের কাছে। প্রার্থীর ব্যক্তি প্রতিশ্রুতির সঙ্গে থাকবে দলীয় নির্বাচনী ইশতেহার। আর ইশতেহারকে ঘিরে থাকে ভোটার ও প্রার্থীদের নানান জল্পনা-কল্পনা। ভোটাররা চাচ্ছেন ইশতেহারে তাদের চাওয়া-পাওয়ার প্রধান্য দেবে রাজনৈতিক দলগুলো। বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক বলেন, আমরা চাই রাজনীতি স্থিতিশীল হোক। সন্ত্রাস, নৈরাজ্যবাদ বন্ধ হোক। দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ সর্বদা বজায় থাক। বর্তমান সরকার ব্যবসায়ীদের নিরাপদ পরিবেশ দেয়ার জন্য নানান উদ্যোগ নিয়েছে। আগামীতেও ব্যবসার নিরাপদ পরিবেশ থাকবে, এমন প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে থাকবে বলে আশা করছি। বরিশাল কলেজ শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল বলেন, নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থান ব্যবস্থার সঙ্কট রয়েছে। শিল্প-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটনোর মধ্যদিয়েই কর্মসংস্থানের সঙ্কট নিরসন করা সম্ভব। পাশাপাশি শিক্ষায় আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর, কর্মমুখী, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আনা প্রয়োজন। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু হবে না, শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে আমরা চাই, দেশে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট, প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা, খনিজ সম্পদ দেশীয়ভাবে আহরণ করে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, পুরোনো চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা এবং রাষ্ট্রের দায়িত্বে প্রত্যেক নাগরিকের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, সুশাসন নিশ্চিত করা, দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করা। কোন এলাকায় এককভাবে নয়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুসম উন্নয়ন বজায় রাখা, ধনী-গরিবের ব্যবধান কমিয়ে আনা, মনন বিকাশে সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ থাকুক। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে এগুলো সম্ভব হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র জিয়াউল করিম বলেন, ইশতেহার মানেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি। এক সময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলে বর্তমান সরকারের সময়কার নেয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, যা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাটাই ইশতেহারে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতি হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, সরকারী-বেসরকারী চাকরিতে বিশেষ করে সরকারী চাকরিতে আবেদন ফি বেকারদের কাছে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। তাই এটা সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেয়া, সরকারী চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা বৃদ্ধি করার বিষয়গুলোতে নজর দেয়া উচিত। পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, বাল্যবিয়ে, যৌতুক প্রথা, এসিড নিক্ষেপ এবং নারী ও শিশুপাচার রোধে কঠোর কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজবিরোধী কর্মকান্ডামুক্ত একটি দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী মাঠে ভোট চাইতে নামা উচিত। বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টুর মতে, ইশতেহারের আগে সাধারণ ভোটারদের উচিত হবে আগে সৎ-নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিক প্রার্থীকে শনাক্ত করা। যারা নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও দেশের স্বার্থে কাজ করবে। যারা দেশকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম আর্থ সামাজিক মুক্তি, চেয়েছিলাম শৃঙ্খলা এবং সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত দেশ। স্বাধীনতার পর বহু বছরে না পেলেও এখন দেশ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। চাই এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এগিয়ে যাক। বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ আবুল কালাম আজাদ বলেন, যে ইশতেহার বাস্তবে রূপ নেবে, ইশতেহার বাস্তবায়িত হবে-রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সেই ইশতেহার চাই। তিনি বলেন, বরিশাল এক সময় শস্যভান্ডার হিসেবে সমাদৃত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে যাচ্ছে, বরিশালে সেই শস্য ভা-ারে রূপ দেয়ার জন্য এ অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক ইশতেহার প্রয়োজন। পাশাপাশি এ অঞ্চলে শিক্ষার হার বেশি, সেই হিসেবে প্রায় প্রতি ঘরেই বেকার তরুণ রয়েছে। যাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে বরিশাল অঞ্চলে শিল্প-বাণিজ্যের ওপর জোর দেবে রাজনৈতিক দলগুলো এমন ইশতেহারের প্রত্যাশাই করছি।
×