ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়ব’

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

 ‘আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়ব’

আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়ব- এ ব্যতিক্রমী স্লোগানকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিতকরণসহ আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থী আগ্রহী হয়ে উঠছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান ও পরিবেশ নিয়ে। উপবৃত্তি ও মিডডে মিল চালু করায় কমে এসেছে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা। বেড়েছে লেখাপড়ার মান। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জেলায় এক হাজার ছয়শত তেইশটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। স্কুল ম্যনেজিং কমিটি, স্থানীয় শিক্ষানুরাগী, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রতিটা স্কুলের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে স্কুল ভবনগুলোকে সুন্দর আকর্ষণীয় ছবি, বাণী, বর্ণমালা দিয়ে সাজানো হয়েছে। স্কুলের সামনে রয়েছে ফুলের বাগান। শতভাগ শিক্ষার্থীর স্কুল ইউনিফরম রয়েছে, স্কুলে রয়েছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দের আইডি কার্ড ও শিক্ষক ইউনিফর্ম। প্রতিটি বিদ্যালয়ে রয়েছে সক্রিয় কাব কার্যক্রম, সুসজ্জিত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীকক্ষ, ক্ষুদে ডাক্তার টিম, ডিজিটাল ক্লাসরুম, প্রোগ্রেসিভ রিপোর্ট। শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ও স্মাটনেসের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে লাগানো হয়েছে লূকিং গ্লাস, শিশুদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায় হতে সততার চর্চার জন্য বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে সততা স্টোর। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিটি বিদ্যালয়েই শিশুদের দেয়া হচ্ছে মেধা পুরস্কার ও মায়েদের দেয়া হচ্ছে সেরা মা সম্মাননা। স্থানীয় জনগণ, অভিভাবক ও দাতাশীল ব্যক্তিদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে দেয়া হচ্ছে সেরা দাতা সম্মাননা। এছাড়াও বিদ্যালয়ে রয়েছে অভিভাবক ছাউনি, মিনি পার্ক, মিনি পাঠাগার, মুক্তিযোদ্ধা কর্নার। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত সমাবেশ, শপথবাক্য পাঠ ও জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করা হয়। প্রতিটি স্কুলে মিড ডে মিল কার্যক্রম চালু হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেলদুয়ার জাঙ্গালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তনিমা আহমেদ সুপ্তি জানায়, তারা বিদ্যালয়ে এসে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে পারে। স্কুলে বাগানসহ সুন্দর করে সাজানোর ফলে বাড়ির চেয়ে স্কুল তার কাছে বেশি ভাল লাগে। বেড়াবুচনা গ্রামের আসলাম মিয়া জানান, বিদ্যালয় সুন্দর করে সজ্জিত করার ফলে তার মেয়ে আগের তুলনায় বিদ্যালয়ের প্রতি এখন বেশি আগ্রহী হয়েই স্কুলে যায়। লেখাপড়ার মান অনেকটা বেড়েছে। সদর উপজেলায় ভাল্লুককান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকিয়া সুলতানা জানান, দূর্বল শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে শিক্ষকগণ বিশেষভাবে পাঠদান করে নিরাময়ের ব্যবস্থা করেছেন। পৌরসভাতেও শতভাগ উপবৃত্তি দেওয়ার কারণে বর্তমানে ঝরে পড়ার হার অনেক কমে গিয়েছে। তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের ইংরেজী ভাষায় শব্দভা-ার সমৃদ্ধকরণে ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। বেড়াবুচনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরজুমান্দ কবরী জানান, সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শ্রেণীর পাঠদান চালু করায় শিক্ষার্থীদের শ্রেণী পাঠে আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাল্লুককান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক (ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৯নং ওয়ার্ড) জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি আগের চেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সভাপতি হিসেবে তিনি সর্বদা বিদ্যালয়ের খবর রাখেন এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা করেন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মেরিনা আক্তার জানান, আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়ব এই ইনোভেশন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিদ্যালয়ে আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি, শিশুদের উপস্থিতি বৃদ্ধি, শিক্ষকদের আন্তরিকতা বেড়েছে, অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের প্রতি আগের চেয়ে অধিক মনোযোগী হচ্ছে। আর এটা করার জন্য বিদ্যালয়ের প্রতি ক্লোজ মনিটরিং এর পাশাপাশি লোকাল কমিউনিটিকে উদ্বুদ্ধকরণ করে তাদের অংশীদারিত্ব ও মালিকানাবোধ তৈরি হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমি মনে করি এ পদক্ষেপ যদি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে তবে আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিশুরা গড়ে উঠবে সুনাগরিক হিসেবে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুন্নাহার জানান, আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়ব এই ইনোভেশনটির মাধ্যমে আমরা স্থানীয় জনগণ, অভিভাবকসহ সকল অংশীজনের মধ্যে বিদ্যালয়ের মালিক যে তারাই এই অনুভূতি জাগ্রত করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে তারা বিদ্যালয়কে সুন্দর করে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করছে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল আজিজ জানান, আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়ব এ স্লোগান সামনে রেখে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অংশীজনরা এগিয়ে এসেছেন। সরকারী বরাদ্দ (স্লিপ) ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার মাধ্যমে বিদ্যালয়কে দৃষ্টিনন্দন করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদেরকে বিদ্যালয়টি তাদের নিজেদের এ ধারণা দেয়ায় তারা অংশীদারিত্ব অনুভব করছে। ফলে এলাকাবাসী নিজেদের প্রতিষ্ঠান মনে করে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে নিজেদের আগের তুলনায় অনেক বেশি সম্পৃক্ত করেছেন। এতে বিদ্যালয়ের বাহ্যিক দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ও শিক্ষকদের আন্তরিকতায়ও পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে। আর সে সঙ্গে নিশ্চিত হচ্ছে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা। -ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল থেকে
×