ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেমিনারে মার্কিন কংগ্রেসম্যান

জামায়াত নির্বাচনের জন্য হুমকি

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

 জামায়াত নির্বাচনের জন্য  হুমকি

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বিএনপির ও ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের মিত্র জামায়াতকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রভাবশালী মার্কিন কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংকস। জামায়াতের মতো উগ্রপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীগুলো মোকাবেলায় সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেবে বলেও জানিয়েছেন জিম ব্যাংকস। জামায়াত, শিবির ও হেফাজতকে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা এবং অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের জন্য হুমকি উল্লেখ করে কংগ্রেসে প্রস্তাব উত্থাপনের পরপরই নির্বাচনে জামায়াতকে হুমকি বলে উল্লেখ করলেন প্রভাবশালী এই মার্কিন কংগ্রেসম্যান। ওয়াশিংটনে ‘স্ট্যাবিলিটি, ডেমোক্রেসি এ্যান্ড ইসলামিজম’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। হাডসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক রাষ্ট্রদূত হুসাইন হাকানির পরিচালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন লিবার্টি সাউথ এশিয়ার সেথ ওল্ডমিক্সন, মিডলইস্ট ফোরামের স্যাম ওয়েস্ট্রপ ও ইনভেস্টিগেটিভ প্রজেক্ট অন টেররিজমের আভা শংকর। ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নির্বাচিত প্রতিনিধি জিম ব্যাংকস আরও বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দিকে পুরো বিশ্ব তাকিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় যেন একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন হোক এবং সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত হোক। তবে জামায়াতে ইসলামীর মতো গ্রুপ এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার হুমকি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বয়স খুব বেশি নয়। আর ক্ষমতা দখলে কিছু উগ্রবাদী সংগঠন এই গণতান্তিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো খ্রীস্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধদের মতো সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলার শিকার হয়েছেন আধুনিক মুসলিমরাও। জিম ব্যাংকস আরও বলেন, কয়েকদিন আগেও দুইজন রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। গণফোরামের নেতাও বলছিলেন যে, জামায়াত থাকলে তিনি বিএনপিকে জোটে নেবেন না। বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার কথা উল্লেখ করে এ কংগ্রেসম্যান বলেন, মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে খুবই ইতিবাচকভাবে দেখে যুক্তরাষ্ট্র। উগ্রপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীগুলো মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসএআইডি ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরকে বলা হয়েছে যেন এমন উগ্রবাদী গোষ্ঠী সংশ্লিষ্ট কোন সংগঠনকে সহায়তা করা না হয়। বিগত নির্বাচনের সময় এমন গোষ্ঠীগুলো কিভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশ। বিশ্বদরবারে তাদের অবস্থান জানাতে শুরু করে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো এই উন্নয়নের জন্য হুমকি। পিউ রিসার্সের একটি জরিপের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৭৬ শতাংশ মানুষও যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে ইতিবাচক। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক উন্নতি হয়েছে। শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ নেয়া বাংলাদেশী সেনাদের প্রশিক্ষণে ৩৬ লাখ ডলার সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় তিনি জাতিসংঘে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা সহায়তা দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। এর আগে সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও হেফাজতে ইসলামকে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে এসব গোষ্ঠীকে থামাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে এক প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশে ধর্মের নামে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলোর কারণে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সৃষ্ট হুমকির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক উত্থাপিত ওই প্রস্তাবে গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন এবং তাদের সঙ্গে অংশীদারী বন্ধ করতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রস্তাবের চারটি দফার প্রথমটিতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের প্রতি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও হেফাজতে ইসলামের মতো কট্টর গোষ্ঠীগুলোর হুমকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব গোষ্ঠীগুলোকে থামাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তৃতীয় দফায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধকে গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। চতুর্থ দফায় জামায়াত, শিবির ও হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন এবং তাদের সঙ্গে অংশীদারী বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ২০১৩ সালের নবেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। তাদের হামলায় হিন্দুদের ৪৯৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিন্দুদের ৫৮৫ দোকানে হামলা বা লুট হয়েছে। এ ছাড়া ভাংচুর হয়েছে ১৬৯টি মন্দির। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সম্প্রতি হামলার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জড়িত। এ ছাড়া বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ও আহমদিয়া মুসলমানদের ওপর ধর্মীয় উগ্রবাদীরা হামলা চালিয়েছে।
×