ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পের আলোয় শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

 শিল্পের আলোয়  শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পের আলোয় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হলো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। গানের সুরে জানানো হলো ভালবাসা। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে করা হলো স্মরণ। নৃত্যশিল্পীর নাচের মুদ্রায় কিংবা বিশিষ্টজনদের আলোচনায় জানানো হয়েছে বিনম্র শ্রদ্ধা। প্রদর্শিত হয়েছে একাত্তর চারুশিক্ষার্থীর আঁকা ৭১টি চিত্রকর্ম। এভাবেই নানা আয়োজনে শুক্রবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোড়িত হয়েছেন রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। সকাল থেকে রাত অবধি শহরে নানা মঞ্চে পরিবেশিত হয়েছে বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেসব আয়োজনের কথা তুলে ধরা হলো এ প্রতিবেদনে। হেমন্তের বিকেলে গড়িয়ে নেমে আসে সন্ধ্যা। অন্ধকারকে ভেদ করে চারপাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আলোকরেখা। মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমির বেদনাকে ধারণকৃত মঞ্চ ঘিরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতীকী ভাস্কর্যসহ সবকিছুর মাঝে দৃশ্যমান আলোক প্রজ্বলনের স্নিগ্ধতা। শিল্পীর হাত থেকে দর্শকের হাতে ঘুরেছে প্রজ্বলিত আলোরেখার মোমবাতি। এভাবেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি ভালবাসা জানানো হলো শিল্পকলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আয়োজনে। আলোক প্রজ্বলনের সঙ্গে ছিল মুক্তিযুদ্ধনির্ভর নৃত্য-গীত ও কবিতায় সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। একাডেমির উন্মুক্ত আঙিনায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্যে সংক্ষিপ্ত কথনে অংশ নেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এরপর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন শেষে প্রজ্বলিত আলোকরশ্মি মঞ্চ থেকে ছড়িয়ে দেয়া হয় দর্শকের হাতে হাতে। নাচ-গানের সমন্বিত পরিবেশনায় শুরু সাংস্কৃতিক পর্ব। মঞ্চের পেছনের সারি থেকে সুর ছড়ায় একাডেমির সঙ্গীত দলে শিল্পীরা। তাদের পরিবেশিত ‘মরণ সাগর পারে তোমরা অমর’ গানের বাণীতে সাদা-কালো পোশাকে নাচ করে একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। এরপর ভেসে বেড়ায় বাঁশির সুর। সেই সুরে শ্রোতাকে মোহাবিষ্ট করেন বাঁশরিয়া মোঃ মনিরুজ্জামান। বাঁশির বাদন শেষে মঞ্চে আসেন মোহনা দাস। গেয়ে শোনান ‘নয়ন ছেড়ে চলে গেলে’। এরপর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিবেদিত করে কবিতাপাঠ করেন বাচিকশিল্পী তামান্না তিথি। দোলায়িত ছন্দে এই শিল্পীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- তোমাদের যা বলার ছিল/বলেছে কি তা বাংলাদেশ? পঠিত হয় আসাদ চৌধুরীর কবিতা ‘শহীদদের প্রতি’। কবিতার পর আবারও গীত হয় গান। একাডেমির শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে’। একাডেমির শিল্পীদের গাওয়া ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ গাওয়া গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করে একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। ‘তরুণের হাতে মুক্তির দায়ভার/ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হোক স্বদেশের সুবর্ণ সময়’ প্রতিপাদ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে চলছে সপ্তাহব্যাপী মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস শীর্ষক বিজয় উৎসব। সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের পঞ্চম দিন ছিল শুক্রবার। এদিন সকাল থেকেই আগারগাঁওয়ের জাদুঘর আঙিনায় শুরু হয় উৎসব কার্যক্রম। হৃদয়ের ভালবাসায় স্মরণ করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। দিবসটি স্মরণে তারুণ্যের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা শীর্ষক প্রদর্শনীর সূচনা হয় হেমন্ত সকালে। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের চারুকলা বিভাগের ৭১ চারুশিক্ষার্থীর চিত্রিত ও নির্মিত একাত্তরটি চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যে সজ্জিত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী প্রকৌশলী রশীদউদ্দীনের মেয়ে রোকাইয়া হাসিনা নিলি ও শহীদ সেলিনা পারভীনের পুত্রবধূ কাজী দ্রাকসিন্দা জেবীন এবং পৌত্র শ্রয়ণ জওহর ও সুনন্দন জওহর। প্রদর্শনী চলবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য। বিকেলে ছিল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘এসডিসি এবং শিক্ষার সর্বজনীনতা ও গুণশীলতা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা ও জগজ্জীবন বিশ্বাস। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে স্বরকল্পন। সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করে ছায়ানট ও মাতুয়াইল সঙ্গীত একাডেমির শিল্পীরা। এছাড়াও মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে শুরু হয়েছে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালা। এতে স্মৃতিচারণ করেন জল্লাদখানায় শহীদের সন্তানরা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় ওয়াইডব্লিউসিএ ফ্রি স্কুল, আনন্দলোক, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা), শহীদ আবু তালেব উচ্চ বিদ্যালয়, ঝিনুক শিশু-কিশোর সংঘ, বধ্যভূমির সন্তানদল, ঘাষফুল শিশু-কিশোর সংগঠন, থিয়েটার গেরিলা এবং মিরপুর সাংস্কৃতিক ঐক্য ফোরাম। ‘স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দিন শেষ/মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবেই বাংলাদেশ’ স্লোগানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে রাজধানীর সাত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিজয় উৎসব। শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মঞ্চের আয়োজনে ছিল নৃত্য-গীত, আবৃত্তি, শিশুতোষ পরিবেশনা ও পথনাটক। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন কওে বহ্নিশিখা, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, দৃষ্টি ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। একক কণ্ঠে গান শুনিয়েছেন ফকির সিরাজ, আরিফ রহমান, শান্তা সরকার ও মোহনা দাস। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কথা আবৃত্তিচর্চা কেন্দ্র ও কথাপ্রকাশের শিল্পীরা। একক কণ্ঠে আবৃত্তি পরিবেশন করেন মোঃ আহ্্কাম উল্লাহ্্, ফয়জুল আলম পাপ্পু ও শাহাদাৎ হোসেন নীপু। শিশুতোষ পরিবেশনায় অংশ নেয় মৈত্রী শিশু দল। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজ। সব শেষে মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার আর্ট ইউনিট ও বাতিঘর পরিবেশিত পথনাটক। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবার ও স্মৃতির বিজয়’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ঢাবি চলচ্চিত্র সংসদ। তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয় শুক্রবার। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য স্মৃতিচারণ করেন। সেই সঙ্গে ছিল প্রদীপ প্রজ্বলন। আজ শনিবার আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র প্রাঙ্গণে ফানুস উড্ডয়ন করা হবে। রবিবার বিজয় দিবসের দিনে প্রদর্শিত হবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে এ প্রদর্শনী উন্মুক্ত রাখা হয়েছে দর্শকদের জন্য।
×