ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতা মিয়ানমার বাহিনীর গণহত্যা

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

 রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতা মিয়ানমার বাহিনীর গণহত্যা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) মার্কিন কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষ- প্রতিনিধি পরিষদে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’র স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর চাপ জোরালো হয়েছে। নিম্ন কক্ষের পর কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও প্রস্তাবটি পাস হলে সে চাপ আরও জোরালো হবে। রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতাকে তখন আইনগতভাবে গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হবে মার্কিন প্রশাসন। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এ স্বীকৃতি খুব জরুরী। আন্তর্জাতিক আদালতের বিধান অনুযায়ী কেবল জাতিগত নিধনের কারণে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতাকে গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারেরও প্রশংসা করেছেন কংগ্রেস সদস্যরা।-খবর ওয়েবসাইটের। গতবছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা স্যাটেলাইট ইমেজ আর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে হত্যা-ধর্ষণ-ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত তুলে আনলেও মিয়ানমার ওই অভিযোগকে ‘অতিকথন’ কিংবা ‘গুজব’ আখ্যায়িত করে উড়িয়ে দেয়। জাতিসংঘ এরইমধ্যে মিয়ানমারে সংঘটিত রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কমিশন শুরু থেকেই সোচ্চার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে। চীন-রাশিয়ার বিরোধিতা সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিষদও সহিংসতার অবসান ঘটানো এবং রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধের তাগিদ দেয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচসহ বিভিন্ন সংগঠন ও রাষ্ট্রও সোচ্চার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও দেশটি রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতাকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়নি। বরাবরই এ বিষয়ে আইনী সিদ্ধান্ত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতাকে শুধু ‘জাতিগত নিধন’ পর্যন্তই বলতেই রাজি আছেন তিনি। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো কখনও প্রকাশ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে কথাই বলেননি। জাতিসংঘের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় জাতিগত নিধনযজ্ঞকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সমান্তরাল মনে করা হয় না। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এটি কোন স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও জাতিগত নিধনকে গণহত্যা বিবেচনা করে না। এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই শুধুই জাতিগত নিধন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হয় না। সে কারণে রাখাইনের ঘটনায় ‘জাতিগত নিধনে’র অভিযোগ আনলে যুক্তরাষ্ট্রকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোন আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে না। প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন, বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র ওপর চাপ জোরালো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এড রয়েস বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত এসব অপরাধকে গণহত্যা আখ্যা দেয়াটা যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। তা করতে ব্যর্থ হলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে এবং দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে।’ প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় কাজ করা মার্কিন সংগঠন বার্মা টাস্ক ফোর্স। তারা বলেছে, ‘প্রতিনিধি পরিষদ এখন আনুষ্ঠানিকভাবে এ অবস্থান নিয়েছে যে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকার ব্যাপক সহিংসতা ও তাদের বাস্তুচ্যুত করার যে নীতি চালাচ্ছে তা গণহত্যা। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছাকাছি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।’
×