ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের দুই আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে প্রাঙ্গণেমোর

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

ভারতের দুই আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে প্রাঙ্গণেমোর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন প্রাঙ্গণেমোর ভারতের দুটি উৎসবে তাদের দুটি প্রযোজনা মঞ্চায়নের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছে। জানা গেছে পশ্চিমবঙ্গের ঋত্বিক নাট্যদল বহরমপুর আয়োজিত ১৭তম দেশ বিদেশের নাট্যমেলায় গতকাল ১৪ ডিসেম্বর প্রাঙ্গণেমোরের দর্শক নন্দিত প্রযোজনা ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকের মঞ্চায়ন করে। এ ছাড়া আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৩৪তম কল্যাণী নাট্যোৎসবের উদ্বোধনী দিনে প্রাঙ্গণেমোরের ‘হাছনজানের রাজা’ নাটক মঞ্চায়ন করবে। এ জন্য প্রাঙ্গণেমোরের ২৬ সদস্যের দল ভারত গেছে। ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নূনা আফরোজ। ‘হাছনজানের রাজা’ নাটকটি রচনা করেছেন শাকুর মজিদ এবং নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হিরা। নাটক দুটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নূনা আফরোজ, অনন্ত হিরা, আওয়াল রেজা, রামিজ রাজু, সরোয়ার সৈকত, মাইনুল তাওহীদ, শুভেচ্ছা রহমান, তৌহিদ বিপ্লব, সবুক্তগীন শুভ, প্রকৃতি শিকদার প্রমুখ। প্রাঙ্গণেমোরের ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, অথৈ একদিন তার বন্ধুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বেড়াতে যায়। কুঠিবাড়ি দেখতে দেখতে এক সময় অথৈ একাই দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়। হঠাৎ অথৈয়ের সামনে এসে হাজির হন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিনি অথৈকে কুঠিবাড়ি ঘুরিয়ে দেখার আহ্বান জানান। অথৈ ভুলে যায় তার বন্ধুসহ পৃথিবীর সবকিছু। সে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কথা বলতে থাকে। অথৈয়ের সামনে পর পর হাজির হয় ২৯ বছর, ৬৯ বছর, ২১ বছর ও ৮০ বছরের ভিন্ন ভিন্ন রবীন্দ্রনাথ। এই চার বছরের রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অথৈয়ের কথা হয় সেই সময়ের রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন ও তাঁর সৃজনশীলতা নিয়ে। আর রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি বয়সের সঙ্গে অথৈও বদলে যেতে থাকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ও বয়সে। বিভিন্ন বয়সী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অথৈয়ের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম ও তাঁর ব্যক্তিজীবনের নানা দিক উঠে এসেছে। অন্যদিকে ‘হাছনজানের রাজা’ নাটকটি সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষ্মণ শ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে পাঁচ লাখ বিঘার বিশাল অঞ্চলের জমিদার ও মরমী কবি হাছন রাজার জীবনী অবলম্বনে নাটকটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। হাছন রাজা (১৮৫৪-১৯২২) বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার একজন সামন্তপ্রভু ছিলেন। কিশোর বয়সে পিতা ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া বিশাল জমিদারির মালিকানা চলে আসে। অর্থ, বেহিসাবী সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। জাগতিক লোভ-লালসা, ক্ষমতায়ন ও জবর দখল করেও তিনি তার প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে প্রবৃত্ত ছিলেন। কিন্তু এক সময় তার ভেতরের ভ্রান্তি ঘুচে যায়। মধ্য পঞ্চাশে এসে তিনি ভিন্ন এক মানুষে পরিণত হয়ে যান। তার বোধহয় যে এ জগত সংসারের সব অনাচারের মূলে আছে অতিরিক্ত সম্পদ। কিছু দিনের জন্য অতিথি হয়ে আসা মানুষেরা আসলে মহাশক্তির কাছে একেবারে নশ্বর। তিনি তার সম্পদ জন কল্যাণের জন্য উইল করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গিনীকে নিয়ে হাওড়ে হাওড়ে ভাসতে থাকেন। আর এর মধ্যে খুঁজতে থাকেন সেই মহাপরাক্রমশীল স্রষ্টাকে। সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে খুঁজতে এক সময় আবিষ্কার করেন, তার নিজের মধ্যেই তার বাস। তার যে পিয়ারিকে সবাই হাছনজান বলে জানে, সেই আসলে হাছন রাজা। জগতের মানুষের কাছে যিনি রাজা বলে চিহ্নিত ছিলেন, হাছন রাজার কাছে সে কেউ নয়, বরং পিয়ারি হাছনজানের ভেতরেই প্রকৃত হাছন রাজা বিরাজমান ছিলেন। হাছন রাজার জীবনের এই দিকগুলো নাটকে তুলে ধরা হচ্ছে।
×