ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

আকাশ আর সমুদ্র মিলেমিশে একাকার

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

 আকাশ আর সমুদ্র  মিলেমিশে একাকার

চলছে শীতকাল। ঋতু বৈচিত্র্যের এদেশে শীত মানেই ভ্রমণপিয়াসী মানুষের কাছে অসাধারণ এক অনুভূতির নাম। শুধু দেশের মানুষ নয় বিদেশীরাও আমাদের দেশের বিভিন্ন সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানগুলো দেখতে ছুটে আসেন। পথ-ঘাট পেরিয়ে মানুষ মিশে যেতে চায় সমুদ্রের বুকে। বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গার মধ্যে অন্যতম হলো সেন্ট মার্টিন। চারদিকে সাগর আর মাঝখানে দ্বীপ। নামটি শুনলেই যেন মন জুড়িয়ে যায়। আকাশ আর সমুদ্রের নীল এখানে মিলেমিশে একাকার। তীরে বাঁধা নৌকা, সারি সারি নারিকেল গাছ আর বেহালার সুরের মতো ঢেউয়ের ছন্দ, কখনও থেমে থেমে, কখনও আবার দমকা হাওয়ার স্পর্শ। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটির সৌন্দর্য লিখে কিংবা বলে শেষ করা যাবে না। তাই তো বছরজুড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন সুন্দরের এ নীলিমাকে উপভোগ করতে। দেশের অনেক পর্যটকই আছেন যারা সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশির মাঝে নিজেকে হারিয়ে দিতে চান তাদের কাছে সেন্ট মার্টিন যেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ। সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেই বেশ পরিচিত। অসংখ্য নারিকেল গাছ দ্বারা বেষ্টিত এক দ্বীপ। দ্বীপটিতে প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে এ নামটি বহুকাল ধরেই মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে আসছে। ভূখন্ডটি এক সময় বাংলাদেশের টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল। আস্তে আস্তে এটি সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যায়। অনুমান করা হয় প্রায় সাড়ে চারশ’ বছর পূর্বে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটির দক্ষিণ পাড়া জেগে উঠে। গবেষকরা বলছেন- এক সময় আরব বণিকরা এ দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিতেন। তখন নাকি এটির নাম ছিল ‘জাজিরা’। দ্বীপটির এতটাই মাধুর্য যে সমুদ্রপ্রেমীরা বার বার ছুটে যান সেখানে। বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ‘দারুচিনি দ্বীপ’ নামের পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মাণের পর এর এই দ্বীপটির পরিচিতি বহুগুণ বেড়ে যায়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপটিতে আসলেই ব্যতিক্রম এক দ্বীপ। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল। দেখা মিলবে শিল কাঁকড়া, রাঙ্গা কই, সুই মাছ, উড়ুক্কু মাছ। দ্বীপটিতে কেওড়া বন ছাড়া প্রাকৃতিক বন বলতে বোঝায় তা নেই। পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ মূল ভূখন্ড থেকে আসা যাওয়া করে। এখন যেহেতু শীত, সুতরাং এ সময়টাতে ভ্রমণপ্রিয়াসী পর্যটকরা ছুটেন যেতে চাইবেন সাগরের নীল আভাকে উপলব্ধি করার জন্য। সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমার- এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। আপনি যখন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য মনস্থির করবেন তখন অবশ্যই মনে রাখবেন সেখানে আরেকটি দ্বীপ রয়েছে ছেঁড়াদ্বীপ নামে। সেখানে একরাত থাকলে আসল মজা উপভোগ করতে পারবেন না। আপনাকে কমপক্ষে দুদিন সময় দিতে হবে সেখানে। তবে অনেকেই বলাবলি করেন পূর্ণিমার সময় নাকি অপূর্ব এক অনূভূতির সৃষ্টি হয় সেখানে গেলে। আপনি একবার সেখানে গেলে বাঁচার ইচ্ছেটা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। উত্তাল সাগরের প্রকৃত রূপ দেখা কিংবা নির্জন দ্বীপে বসে সমুদ্রকে একদম কাছ থেকে দেখা, মনে হবে যেন নীল আকাশ ছিটকে পড়েছে বিশাল জলরাশির ওপর সে লোভ কী সামলানো যায় সহজে? কীভাবে যাবেন সেন্ট মার্টিন : ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার থেকে বাসে করে সোজা টেকনাফ। ঢাকা থেকে বিভিন্ন এসি, ননএসি বাস ছেড়ে যায় এসব গন্তব্যে। এরপর টেকনাফ পৌঁছে জাহাজ ঘাটে গিয়ে আপনাকে সিট্রাকের টিকেট কাটতে হবে। শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকে বলে অনেকেই এই মৌসুমে সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যান।
×