ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পপি দেবী থাপা

কর্পোরেট নারীর মুখ এম্মা ওয়াল্মস্লে

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

 কর্পোরেট নারীর মুখ এম্মা ওয়াল্মস্লে

বিশ্বখ্যাত ফরচুন ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী কর্পোরেট বিশ্বে শীর্ষ ক্ষমতাবান নারীর স্থানটি দখল করেছেন এম্মা ওয়াল্মস্লে। ৪৯ বছর বয়সী এই নারী বর্তমানে সিইও গ্লাক্সোস্মিথক্লেইন। ২০১৭ এর এপ্রিলে স্যার এন্ড্রু উইটির পরিবর্তে দায়িত্ব গ্রহণের পর কর্পোরেট জগতে তার এ উত্থান বিস্ময়কর। ৩৮.৯ বিলিয়ন ডলারের ৩০০ বছরের পুরনো এই ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির শীর্ষ পদে তিনিই প্রথম নারী। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে কোন নারীর নিয়োগকে যারা চমক বলেছিলেন নিজের যোগ্যতা দিয়ে উল্টো তাদেরই চমকে দিয়েছেন এম্মা। নোভারটিসের ৩৬ শতাংশ স্টেক ক্রয় থেকে শুরু করে গত বছরে ৯.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রয়, এ বছরের জুলাইয়ে টুয়েন্টিথ্রিএন্ডমি এর সঙ্গে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সাহসী চুক্তি তাকে এনেছে আলোচনায়। শুধু তাই নয় অনেক পরিচিত ওষুধ বাজারজাতকরণ এবং গবেষণার রাশ যেমন টেনে ধরেছেন শক্ত হাতে। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বাজারে সদ্য অনুমতি পাওয়া ওষুধের ওপর তার আরোপিত নিয়ন্ত্রণ কর্পোরেট দুনিয়ায় প-িতদের অবাক করলেও আখেরে লাভবান হয়েছে তার কোম্পানি। কোম্পানি পরিচালনায় তিনি যে কেবল এ্যাস্ট্রাজেনেকা, নোভারটিস, ফাইজার থেকে শীর্ষ নির্বাহীদের দলে টানছেন তা নয়, ফার্মাসিউটিক্যাল দুনিয়ার বাইরে ওয়ালমার্ট অথবা এইচএসবিসির মতো প্রতিষ্ঠান থেকেও লোক টানছেন নিজের দলে। এখানে একটি কথা না বললেই নয় এম্মা কিন্তু কোন বিজ্ঞানী নন তাকে বলা হয় ফার্মাল্যান্ডে একজন বহিরাগত। জিএসকের মতো প্রতিষ্ঠানে তার পথ চলা খুব সহজ ছিল না। ২০১০ এম্মা যখন কোম্পানির কনজুমার হেলথ কেয়ার বিজনেসের দায়িত্ব নেন তখনও তার পরিচয় একজন সাধারণ মার্কেটিং বিশেষজ্ঞÑ যিনি ১৭ বছর কাটিয়েছেন ল’রিয়েলে। ২০১৭ এর এপ্রিলে দায়িত্ব নেবার পর কেবল যে কোম্পানির গবেষণা বা পণ্য বাজারজাতকরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছেন তা নয় নিয়োগের পর পরই কোম্পানির শীর্ষ পদেও অন্তত ৪০ শতাংশকে সরিয়ে দিয়েছেন। এম্মা এমনই, সব কিছুতেই নিজের ছাপ রাখতে পছন্দ করেন। আর এভাবেই কোম্পানিতে এনেছেন রীতিমতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন। গালগল্পে বিশ্বাসী নন। সিইও নির্বাচিত হওয়ার পর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, যে কোন সভার শুরুতে আমি জানতে চাই; আমরা কী কারনে এখানে এসেছি? ইঙ্গিতটা পরিষ্কারÑ সরাসরি কাজের কথায় আসুন। আর বিজ্ঞানীদের মনে করিয়ে দেন কোম্পানির অর্থে সৌখিন গবেষণার দিন শেষ। জিএসকে বোর্ড মেম্বার গ্লীমচার এম্মা সম্বন্ধে বলেন, ‘সে যেন এক প্রাকৃতিক শক্তি। তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অসাধারণ।’ মোশেফ স্লাউ বলেন, ‘এম্মা এমন একজন নেতা যিনি সাহসী, সহযোগিতাপরায়ণ এবং এটা জানেন কীভাবে কাজ আদায় করে নিতে হয়। এম্মা একজন ভাল শ্রোতা এবং সব সময়ই কিছু না কিছু শিখছেন।’ এম্মার জন্ম ১৯৬৯ এর জুন, ইংল্যান্ডের ক্যাম্ব্রিয়াতে। বাবা ব্রিটিশ নেভীর ভাইস এ্যাডমিরাল স্যার রবার্ট ওয়াল্মসলে, মা লেডি ক্রিস্টিনা ওয়াল্মসলে। বোর্ডিং স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু। শুরু থেকেই ছিলেন ভাল বক্তা। গানও গাইতেন ভাল। এমনকি অপেরাতেও অভিনয় করেছেন নিয়মিত। সাহিত্য এবং ভাষা নিয়ে উচ্চ শিক্ষা অক্সফোর্ডে। এরপর যোগ দেন কোবা গ্রুপে। সফি ম্যাশান এম্মার সহপাঠি এবং পরবর্তীতে সহকর্মী তাকে নিয়ে বলেন ‘শুরু থেকেই এম্মার ছিল অসাধারণ ক্যারিশমা আর নেতৃত্বগুন।’ ১৯৯৪ এম্মা যোগ দেন ল’রিয়েলে। প্রথমে কাজ করেন যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে। ফরাসী প্রভাবিত পুরুষশাসিত কোম্পানি ল’রিয়েলে নিজে ফরাসী না হয়েও দাপটের সঙ্গেই ছিল তার অবস্থান। এরপর কিছুদিন কাজ করেছেন ল’রিয়েলের যুক্তরাষ্ট্র শাখায়। ২০০৭ এ যোগ দেন সাংহাইয়ে। কার্যক্ষেত্রে রীতিমতো সামরিক নিয়ম মেনে চলতেন। ২০১০ এ ৪০ বছর বয়সী এম্মা স্বামী ডেভিড ও চার সন্তানসহ অবস্থান করছিলেন চয়নাতে। সেখানেই প্রথম প্রস্তাব পান জিএসকেতে যোগ দেয়ার। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে সময় নিয়েছিলেন ১ সপ্তাহ। সবচেয়ে বেশি বিবেচনায় নিতে হয়েছে একজন বহিরাগত হয়ে তিনি নতুন একটা ক্ষেত্রে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন তো? সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে গ্রহণ করেন নতুন চ্যালেঞ্জ। তার সে সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, ফরচুনের তালিকায় শীর্ষ স্থান আজ সে কথাই বলছে। তিনি হয়ে উঠেছেন কর্পোরেট নারীর মুখ।
×