ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেলিব্রেটি ভাস্কর্য গ্যালারি

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

 সেলিব্রেটি ভাস্কর্য গ্যালারি

দরজা দিয়ে ঢুকে প্রথমেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাত। ঠিক তার বিপরীত দিকে দাঁড়ানো এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তিত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেখা পেলাম। বিশ্বের এই দুই ক্ষমতাধর ব্যক্তির ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বিশ্বের আর এক অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব এবং রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাঠক আপনারা হয়ত শুরুটা পড়ে ভবছেন জাতিসংঘ বা অন্য কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্মেলনে এই তিন নেতার সাক্ষাত পেয়েছি। বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। এরকম একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকায় গত ৮ ডিসেম্বর চালু হওয়া সেলিব্রেটি ভাস্কর্য গ্যালারিতে। লন্ডনের মাদাম তুসো মিউজিয়ামের অনুপ্রেরণা নিয়ে খ্যাতিমান ভাস্কর মৃনাল হক রাজধানীর গুলশান-১ এর ২ নং রোডের ৫/এ বাড়িতে চালু করেছেন এমনই এক ব্যতিক্রমী সেলিব্রেটি ভাস্কর্য গ্যালারি। যেখানে এই মুহূর্তে স্থান পেয়েছে দেশী-বিদেশী ৩২ জন বিখ্যাত ব্যক্তির ভাস্কর্য। উপরোক্ত তিন বিশ্ব নেতা ছাড়াও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মাহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসা, চে-গুয়েভারা, বিশ্বখ্যাত পপ তারকা শাকিরা, মাইকেল জ্যাকসন, মি: বিন খ্যাত রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন, চার্লি চাপলিন, লেডি ডায়না, লিওনেল মেসি, সুচিত্রা সেন, শাহরুখ খান, ক্ষুদিরাম, স্পাইডারম্যান, থ্রিস্টুজেস, বব মার্লি, পাইরেটস অব ক্যারাবিয়ান খ্যাত হিরো জ্যাক স্প্যারো ইত্যাদি। ভাস্কর্যগুলো ভাইবার গ্লাসে নির্মাণ করা হয়েছে। আরও বেশ কিছু বিখ্যাত ব্যক্তির ভাস্কর্যের কাজ চলমান রয়েছে যেগুলো শীঘ্রই গ্যালারিতে স্থান পাবে। প্রতিটি ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে প্রায় অবিকল বাস্তবের সেই মানুষটির সামনে দাঁড়ানোর অনুভূতি পাওয়া যায়। যেমন একটি টেবিলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পা-ুলিপি পাঠরত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে দর্শনার্থীরা রাবীন্দ্রিক সাহিত্য সুধার স্বাদ পাবেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সামনে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকরাউন্ডে গান বেজে ওঠে ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট ভেঙ্গে ফেল্ র্ক রে লোপাট রক্ত-জমাট শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী!’। মুহূর্তেই যেন চলে যেতে হয় নজরুলের সৃষ্টি জগতে। আবার মাইকেল জ্যাকসন কিংবা সাকিরার সামনে দাঁড়ালে বেজে ওঠে তাদের বিখ্যাত সুর। মুর্হূতেই দর্শক মনের আয়নায় তাদের সৃষ্টি জগতের রিক্যাপ দেখতে পাবেন। এভাবে প্রতিটি ভাস্কর্য যেন এক একটি সৃষ্টি যুগের কথা বলে। আপনি যার সামনেই দাঁড়াবেন আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে ঐ ব্যক্তির সৃজনশীল ও কর্মবহুল দুনিয়া। দর্শনার্থী হাঁটা-চলার স্থান থেকে প্রায় এক ফুট উঁচু প্লাটফর্মে প্রতিটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে এবং যেখানে যতটুকু আলোর প্রয়োজন ঠিক ততটুকু স্পট লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এক দারুণ নান্দনিক উপস্থাপনা যেটি শিল্পরসিক মানুষের মনে মুগ্ধতার এক অন্য রকম খোরাক জোগাবে। বাংলাদেশের মতো একটি রক্ষণশীল দেশে সম্পূর্ণ রিয়ালিস্টিক ফর্মের ভাস্কর্য গ্যালারি করার মতো উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি দুঃসাহসিক কাজ। কারণ এ দেশে যেমন একদিকে উদারতা ও প্রগতিশীলতার চর্চা করা হয়; ঠিক তেমনি চরমভাবে রক্ষণশীলতার চর্চা হয়। এখানে গোঁড়া ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ভাস্কর্যকে বরাবরই মূর্তি আখ্যা দিয়ে থাকে এবং তার ওপর হামলা করার চেষ্টা করা হয়। অন্যদের কথা নাইবা বললাম, এই মৃনাল হকের ভাস্কর্য শিল্পেই অতীতে অনেকবার হামলা এবং ভাংচুর করা হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে তারই তৈরি শাহজালাল বিমান বন্দরের মোড়ে বাউল ভাস্কর্যের কথা যেটি ধর্মান্ধদের বিক্ষোভের মুখে অপসারণ করা হয়। আবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তৈরি গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী কর্তৃক বিতর্কের কথা। এত বিতর্ক, হামলা, ভাংচুরের মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে যাবার পরেও মৃনাল তাঁর কাজে অবিচল রয়েছেন। তারই বহির্প্রকাশ নব্য চালু হওয়া এই সেলিব্রেটি ভাস্কর্য গ্যালারি। সব বাধা বিপত্তিকে পেরিয়ে এই গ্যালারিটি আমাদের দেশী-বিদেশী শিল্পরসিক দর্শনার্থীদের মননে ভাল লাগার খোরাক যোগাবে সেটিই প্রত্যাশা।
×