ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিলেটে শেষ ওয়ানডে জিততে মরিয়া দু’দলই

বাংলাদেশ-উইন্ডিজ সিরিজ নির্ধারণী লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ-উইন্ডিজ সিরিজ নির্ধারণী লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ ॥ এ বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর প্রতিশোধের মুখে এবার উল্টো পড়েছে বাংলাদেশ। সিরিজ নিজেদের করে নিতে হলে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। না জিতলেই সিরিজ হার হবে। সিরিজ হার হলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রতিশোধ নিয়ে নেবে। সিরিজ জয় না হার হবে সেই ফয়সালা আজই হয়ে যাবে। জুলাইয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল। বাংলাদেশকেই পাত্তাই দেয়নি। এবার দেশের মাটিতে সেই টেস্ট সিরিজের প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়েছে। জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশ সেই তোপে যেন পড়ে গেছে। সিরিজ এখনই ১-১ সমতা হয়েছে। প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় ওয়ানডে যে জিতবে তাদেরই হয়ে যাবে সিরিজ। তৃতীয় ওয়ানডেটি হবে সিলেটে। আর এখানেই আছে ভয়। এই স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেকের ম্যাচটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের কাছে হেরেছে। এবার স্টেডিয়ামটির ওয়ানডে অভিষেক হবে। টেস্টের মতো উইকেট বুঝে ওঠা না গেলে ওয়ানডেতেও হার হয়ে যেতে পারে। আর তা হলেই বিপদ ঘনিয়ে আসবে। সিরিজ হার হবে বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে শুরু থেকেই ভয় ছিল। সেই ভয় দেখিয়েছিলেনও ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওয়ানডেতে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অন্যরকম দল। ওভারের পরিধি যত কমে আসে, ততই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভয়ঙ্কর দল হয়ে ওঠে। মাশরাফি তা বুঝিয়েছিলেনও। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তা দেখারও মিলে। প্রথম ওয়ানডেতে উইকেট বুঝতে না পারায় হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিজেদের মেলে ধরে। সাই হোপতো ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দেন। এক হোপের কাছেই হার হয় বাংলাদেশের। সঙ্গে ক্যাচ মিস আর ফিল্ডিং মিসতো আছেই। তিন-চারটি ক্যাচ মিস, রান আউট মিস হয়েছে। তা না হলে হয়তো জয় সম্ভব ছিল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা এতটাই বুঝে খেলেছে যে প্রশংসার দাবি রাখে। এমন খেলা যদি শুক্রবারও দেখিয়ে দেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা, তাহলে বাংলাদেশের খবরই আছে। নয় বছর আগের ২০০৯ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারল না বাংলাদেশ। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার তা করতে পারল না বাংলাদেশ। কত আশা ছিল, দ্বিতীয় ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সিরিজ জয় করে নেবে বাংলাদেশ। এরপর তৃতীয় ওয়ানডেতে জিতে হোয়াইটওয়াশ করবে। ২০০৯ সালের পর আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার সুখস্মৃতি মিলবে। কিন্তু তা হয়নি। এখন উল্টো বাংলাদেশের ঘাড়েই বিপদ দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তামিম, মুশফিক, সাকিব দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু বাকিরা নিজেদের মেলে ধরতে না পারায় রান ২৭০-এ যাওয়া যায়নি। তাতে হারও হয়েছে। তৃতীয় ওয়ানডেতে এমন ভুল হলে সিরিজ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। বাংলাদেশ ১৯৮৬ সাল থেকে ওয়ানডে খেলে। ২০০০ সাল থেকে টেস্ট খেলে। কিন্তু ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কখনই টেস্ট কিংবা ওয়ানডেতে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সাল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে শুরু করে বাংলাদেশ। ১০ বছর ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট কিংবা ওয়ানডেতে হারাতে পারেনি। ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একটি ম্যাচে হারানো যায়। ২০০৯ সাল থেকেই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। এই বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায় বাংলাদেশ দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে তখন তুলকালাম অবস্থা। পারিশ্রমিক নিয়ে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের সেইরকম দ্বন্দ্ব চলছে। বোর্ডও বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে সব তারকা ক্রিকেটারদের দলের বাইরে রেখে দেয়। বাংলাদেশ সুযোগ পেয়ে যায়। সেই সুযোগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্টে ও ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করে দেয় বাংলাদেশ। শুরুতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে। এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে কোন টেস্ট খেলুড়ে দলকে এমন হারের মুখে ফেলা যায়। প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশও করে বাংলাদেশ। সেই জয়গুলো নিয়ে তর্ক থেকে যায়। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যে হারানো যায়, সেই বিশ্বাস ক্রিকেটারদের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। এরপর ২০১২ সালে যখন বাংলাদেশের মাটিতে সর্বশেষ পাঁচ ওয়ানডের সিরিজ খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেইবারও ক্যারিবীয়দের সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকেও যে হারানোর ক্ষমতা রাখে বাংলাদেশ, তা বিশ্ব ক্রিকেটে বুঝিয়ে দেয়া হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৯ সালে ওয়ানডে সিরিজ জয় নিয়ে যে তর্ক ছিল তা দূর হয়ে যায়। কিন্তু টেস্ট সিরিজ নিয়ে সেই ধারণা পুষেই থাকে। বাংলাদেশ যে ২০০৯ সালের পর আর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারেনি। এবার সেই ধারণাও পাল্টে দেয়া হয়। টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে দেয় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো কোন দলকে ইনিংস ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। এবার ওয়ানডে সিরিজেও সেই ফল আনার কাছাকাছি ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হার হয়ে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। তবে এখনও সিরিজের জেতার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য শুক্রবারের ম্যাচটিতে জিততে হবে। চাপ না নিয়ে খেলতে হবে। তাহলেই শান্তিমতো খেলে সিরিজ জেতার সুযোগ থাকবে। তা না হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজ দেশে হারের প্রতিশোধ নিয়ে নিতে পারে।
×