ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জামাই-শ্বশুর ভোটযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

 জামাই-শ্বশুর ভোটযুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে ভোটের লড়াই হচ্ছে জামাই-শ্বশুরের মধ্যে। শ্বশুর স্বতন্ত্র প্রার্থী। আরা জামাতা দলীয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক জাতীয় পার্টির এমপি জিয়াউল হক মৃধা পেয়েছেন সিংহ প্রতীক। আর জামাই জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া লড়ছেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী নেই। তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন উদ্দিন মঈন ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী রয়েছে। জাপা থেকে দুই নেতা প্রার্থী হওয়ায় ভোটাররা অনেকটাই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। কার পক্ষে রায় দেবেন তারা। জামাই না শ্বশুর? ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মজার বিষয় হলো এই আসনে এবারের দুই প্রার্থীই এক সময়ের জাপা নেতা। এরমধ্যে রেজাউল হক ভূঁইয়া আগে ছিলেন জাপার যুগ্ম মহাসচিব। এবার এরশাদের উপদেষ্টা। তাই নানা কায়দার শ্বশুরকে এরশাদের গুডলিস্ট থেকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। শত চেষ্টা করেও দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারেননি মৃধা। আসনটি মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টিকে কৌশলগত কারণে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মহাজোটকে দেয়া ২৯ আসনের তালিকায় এটি না থাকলেও ৪২ এর তালিকায় রয়েছে। ২৯ এর বাইরে বাকি ১৩ আসনে কৌশলে প্রার্থী দিয়েছে জাপা ও আওয়ামী লীগ। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সর্বশেষ জানানো হয়েছে, ২৬ আসন জাপাকে ছাড় দিয়েছে তারা। এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের যুব বিষয়ক উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া টিপুকে প্রথমে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। পরে ৮ ডিসেম্বর মনোনয়ন দেয়া হয় তার শ্বশুর ও জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধাকে। পরে আবারও পরিবর্তন আসে মনোনয়নে। তবে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন জিয়াউল হক মৃধা। তিনি সিংহ প্রতীকে লড়বেন। প্রথমে মৃধাকে মনোনয়ন না দেয়ায় ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় তার সমর্থকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। বেশ কয়েক ঘণ্টা তারা সড়কে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে মৃধা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সবাইকে বুঝিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃধা দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি। স্থানীয়রা মনে করেন, জামাই-শ্বশুর দ্বন্দ্বে আসনটি মহাজোট এবার হারাতে পারে। জামাইর লাঙ্গল চাষে ভয় হয়ে সরে দাঁড়াবে শ্বশুরের সিংহ? এ কারণে বিএনপির আব্দুস সাত্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈন সুযোগ নিতে পারেন। আওয়ামী লীগ যদি মঈনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে তার পক্ষে জয় ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব হতে পারে। এর আগে রেজাউল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে নির্বাচন করবেন বলে প্রচার চালিয়েছেন। গত সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রথমে মহাজোটের মনোনয়ন পান। পরে নাটকীয়তাশেষে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগ নেতা উবায়দুর মোকতাদির চৌধুরী। কিন্তু জেলার দুই আসনে জাতীয় পার্টির একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে আস্তে আস্তে জনমত হারাতে থাকে দলটি। দলের নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, জনমত আগের মতো না থাকলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে আসনটি তাদেরই থাকবে। তবে এবারের নির্বাচনে সিংহ আর লাঙ্গলের লড়াইয়ে আসনটি জাপার হাতছাড়া হতে পারে। তবে এলাকায় জামাই-শ্বশুরের ভোটযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা বেশ। এ নিয়ে দলের মধ্যেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। শ্বশুরের পক্ষে মাঠে নেমেছেন জাপা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আবার জামাইর পক্ষেও কাজ করছে জাপার একাংশ। জানা গেছে, ভোটের রাজনীতিতে দুই পরিবারের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। তবে ভোটারদের মধ্যে এবার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি করলেও সবাই নিজেদের মতো করে হিসাব নিকাশ কষতে শুরু করেছেন। এলাকা মানুষের কাছে জামাই শ্বশুরের ভোটের লড়াই বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
×