ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান সারাবছর স্মরণ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

  শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান সারাবছর স্মরণ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীরা এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। ১৪ ডিসেম্বর এলেই শুধু নয় সারা বছর তাদের স্মরণ করার ও তাদের বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে বিশেষ গবেষণার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসির উদ্দীন আহমেদ। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করলে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বুধবার জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অপরদিকে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার বলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীরা অস্ত্র হাতে নয় নেতৃত্ব দিয়েছেন চিন্তার জগত দিয়ে। জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শিল্পী হাশেম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ রিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর, ডাঃ আব্দুল আলীমের সন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী ও অধ্যাপিকা ফাহমিদা খানম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে অসংখ্য মোমবাতি জ্বালিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করা হয়। জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক আয়োজিত সভায় সংস্কৃতি সচিব বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিতে দেশ আজ আরও এগিয়ে যেত। তারা শুধু এদেশের সন্তানই নন তারাই প্রথম সারির প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাও বটে। বাঙালীরা ইতিহাস ভুলে যাওয়া এক অকৃতজ্ঞ জাতি। যার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করতে পেরেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবীদের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, শুধু নির্দিষ্ট দিন নয় তাদের সারা বছরই অন্তরে ও কর্মে লালন করতে হবে। তবেই কেবল নতুন প্রজন্ম তাদের অবদান জানতে পারবে। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা অস্ত্র হাতে নয় নেতৃত্ব দিয়েছেন চিন্তার জগতে। যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই বুদ্ধিজীবীরা কাজ করে যাচ্ছিলেন। তাই বেছে বেছে এদের হত্যা করা হয়। সঠিক ইতিহাস হচ্ছে ১৪ ডিসেম্বর নয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা শুরু হয়। অসংখ্য বুদ্ধিজীবীদের জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলে হত্যা করা হয়। কোন কোন বুদ্ধিজীবীকে কেটে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়। আর এ কাজে সহায়তা করেছিল কিছু বাঙালী কুলাঙ্গার। আলবদর আল শামস ও রাজাকাররা। এরাই পাক বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি ও ঠিকানা চিনিয়ে দিয়েছিল। তাই কোনক্রমেই শহীদদের স্মৃতি মলিন হতে দেয়া যাবে না। শহীদ মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিক মুনীর বলেন, ৭১ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার কারণে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল তা আজও গবেষণা করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে তাদের লেখনী, বুদ্ধি ও নানা সৃষ্টি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করেছেন। তাই জাতিকে মেধাশূন্য করতেই বুদ্ধিজীবীদের অপরিকল্পিত নয় তালিকা করেই হত্যা করা হয়। তবে আজ পর্যন্ত জাতি আমাদের বাবাদের চিন্তা চেতনাকে কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছে? তাই তাদের কর্মকে লালন করা দরকার। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলীমের সন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শহীদ পরিবারের সন্তানরাও এতিম হয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর আমার কাছে একটি আবেগ। ইনকিলাব পত্রিকার মালিক আব্দুল মান্নান আমার বাবাকে ধরিয়ে দেয়। অথচ তারাই পরে এদেশে দাপিয়ে বেড়ায়। কত বড় দুর্ভাগ্য আমাদের এই জাতির। বর্তমানেও আমরা দেখতে পাই কিছু ছেলেমেয়ে সামান্য স্বার্থের জন্য ও নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য দেশের স্বার্থ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে গিয়ে শুধু একটি চাকরির জন্য নিজের বুকে রাজাকারের বাচ্চা লিখে আন্দোলন করে বেড়ায়। কিন্তু এদের দেখার যেন কেউ নেই। তাই তিনি বর্তমান প্রজন্মকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ফিরে আসার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে শহীদ বৃদ্ধিজীবীর সন্তান অধ্যাপিকা ফাহমিদা খানম বলেন, বুদ্ধিজীবীরা নিজের জীবন দিয়ে মরেও আজও আমাদের মাঝে জ্বলজ্বল করছে। তাদের ইতিহাস সবাইকে জানাতে হবে ও এর সঠিক চর্চা করতে হবে। ৭১ সালে পাক বাহিনী ও এদেশের বিশ্বাসঘাতক আলবদর ও রাজাকাররা দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক মেধাবীদের হত্যা করে। ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমি হচ্ছে অত্যাচারের মডেল। তিনি সারাদেশের বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান একইসঙ্গে আর্থিক অনটন বা সমস্যাগ্রস্ত শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের খোঁজ রাখার জন্য বর্তমান সরকারকে অনুরোধ জানান।
×