ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার মাঠে প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 ঢাকার মাঠে প্রার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রচার সেই অর্থে জমে না উঠলেও ঢাকার প্রার্থীরা মাঠে নামতে শুরু করেছেন। ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজের আর দলের জন্য ভোট চাইছেন। ভোট চাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের মুক্তির জন্য তাদের এই ভোটের লড়াই বলে প্রচারে তুলে ধরছেন। নির্বাচনে গণসংযোগ, মিটিং মিছিলের পাশাপাশি কোন কোন প্রার্থী ব্যতিক্রম প্রচারে আশ্রয় নিচ্ছেন। ঢাকা-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ব্যতিক্রমী প্রচারে ভোটারদের মন কেড়েছে। বুধবার খেঁজুরবাগ শুভাঢায় নির্বাচনী প্রচারে বিপু আয়োজন করেন ‘আমাদের কথা’ নামের এক অনুষ্ঠানের। বর্তমান সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি তার কাজের মূল্যায়ন করার জন্য সাধারণ ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় সাধারণ ভোটাররা বিপুর গত পাঁচ বছরের সাফল্য ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরেন। উন্নয়নের জন্য যেমন ধন্যবাদ দেন তেমনি অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য কি করণীয় তা তুলে ধরেন। এভাবে সাধারণ ভোটাররা ভোটের আগে নিজেদের মতামত রাখার সুযোগ খুব কমই পান। সরাসারি জনপ্রতিনিধিদের ভুল ধরিয়ে দেয়ার সুযোগ বাস্তবে নেই বললেই চলে। ঢাকা-৩ এর মতো অন্য প্রার্থীরা নিজের এলাকায় ভোটাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানার জন্য এমন আয়োজন করতে পারেন। এতে ভোটারদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্ক আরও নিবিড় হতে পারে। অনুষ্ঠানে নসরুল হামিদ বলেন, কেরানীগঞ্জে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এই এলাকার মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। ভবিষ্যত ঢাকার ফুসফুস হয়ে উঠবে কেরানীগঞ্জ। পরিচ্ছন্ন আর স্বাস্থ্যকর এক নতুন নগরী গড়ে তুলতে তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চান। তিনি বলেন, এক সময়ের সন্ত্রাস কবলিত এলাকা এখন শান্ত। ভতিষ্যতে এই নগরীর শান্তি বজায় রাখতে আবার শেখ হাসিনার পক্ষে গণ রায় দিতে সাধারণ ভোটারদের আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মুজিবুর রহমান, হাজী ইকবাল হোসেন, হাজী রাসেল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে জয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। আজিমপুর কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের এক নির্বাচনী ও কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। খোকন বলেন, ‘আজ ঢাকা শহরের ৯৫ ভাগ রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছি। বাকি যে কয়টি রাস্তা বাকি আছে সেগুলো এই শুষ্ক মৌসুমে করে দেব। আজিমপুর কবরস্থানে একটি অত্যাধুনিক মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছি। আজ ঢাকার প্রতিটি রাস্তা এলইডি বাতিতে আলোকিত। আমরা যে কথা বলি অক্ষরে অক্ষরে সেটা পালন করি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি বলেছে তারা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবে। তারা পাহারা দেবে না, অগ্নিসংযোগ করবে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। পরে হাজী সেলিমের হাতে নৌকা তুলে দেন মেয়র সাঈদ খোকন। পাশাপাশি তিনি ডিজিটাল প্রচারও উদ্বোধন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজের নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১২ আসনে দুপুরে প্রচারে নামেন। রাজধানীর কাওরানবাজারে ব্যবসায়ী পেশাজীবীদের সমাবেশে তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চান। এসময় নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে বলেন, হত্যার রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না। যারা হত্যার রাজনীতি করে তারা অতীতেও ২০১৪ সালে জ্বালাও-পোড়াও করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। তারাই আজ এসব হামলা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ। তারা যেকোন হামলা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। এসব হামলার ঘটনায় যারাই দায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি জনগণ। আর জনগণই সন্ত্রাসীদের রুখে দেবে। ক্ষমতা বদল হয় জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে। আমরা ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। আগে দেশে কী ছিল, আর এখন কী আছে সেটি আপনারাই ভাল জানেন, ভাল বলতে পারবেন। কাওরানবাজার একসময় ছিল সন্ত্রাসের দখলে, হত্যা ও চাঁদাবাজিও ছিল। গত ১০ বছরে আমরা এটি নির্মূল করেছি। অনেক সন্ত্রাসীকে আমরা আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করেছি। আর কিছু কিছু সন্ত্রাসী ভয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে। এখন কাওরানবাজারে কোন সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নেই।’ তিনি বলেন, এখানে ব্যবসায়ীরা যারা আছেন, তাদের উপযুক্ত জায়গায় স্থানান্তর করা হবে। এর আগে কেউ এখান থেকে যাবেন না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও যদি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হতে পারি, তবে যথাযোগ্যভাবে কাওরানবাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা একটা আলোকিত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি, এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। এর জন্য দেশের জনগণের ম্যান্ডেট প্রয়োজন। ঢাকা-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সমর্থনে বুধবার কদমতলী বালুর মাঠে শ্যামপুর-কদমতলী থানা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির বর্ধিতসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নির্বাচনী প্রচার ও বাবলার পক্ষে গণসংযোগ করার জন্য আওয়ামী লীগ-জাপার সমন্বয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিট ও কেন্দ্র কমিটি করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ ও জাপার মহানগর এবং স্থানীয় নেতাদের নিয়ে শ্যামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে লাঙ্গলের পক্ষে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। ঢাকা-৬ এর মহাজোটগত প্রার্থী ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বুধবার লাঙ্গলের সমর্থনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ আয়োজিত এক ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশের পর পুরান ঢাকার কলতাবাজারে গণসংযোগ করেন তিনি। দুপুরে কাজী ফিরোজ গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত দয়াগঞ্জ মোড়ে এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। সেখান থেকে তিনি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ গেন্ডারিয়া স্কট মন্দিরে আসেন। সেখানে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে লাঙ্গলে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শাসনামলেই হিন্দু সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি নিরাপদে ছিল। আজ আবার নৌকা লাঙ্গল এক হয়েছে। শেখ হাসিনার মার্কাও লাঙ্গল, পাশাপাশি এরশাদের মার্কাও নৌকা। ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাস গণসংযোগ করেছেন। রাজধানীর বৌদ্ধ মন্দির, মাদারটেক এলাকায় তিনি সাধারণ ভোটারদের কাছে ধারের শীষের পক্ষে ভোট চান। এছাড়া মির্জা আব্বাস ঢাকা-৮, আব্দুস সালাম ঢাকা-১৩ তে বিএনপির পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন।
×