ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে সব ব্যাংকের এমডিদের দাবি

গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতে সাফল্য অনেক

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতে সাফল্য অনেক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক খাত থেকে গত ১০ বছরে ২২ হাজার ৫০২ কোটি লুট হয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এমন তথ্য প্রকাশের ৩ দিন পর বুধবার এক সংবাদ সম্মেলন করেছে ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। এতে ব্যাংকের এমডিরা গত দশ বছরের ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরেন। তারা বলেন, বিজয়ের মাসে স্বাধীনতার ৪৫ বছরের অর্জন সম্পর্কে জানানোর জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে। গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতে অনেক সাফল্য আছে সেগুলো নিয়েও কথা বলা উচিত। ব্যাংকাররা বলছেন, গবেষক ও বিশ্লেষকদের নেতিবাচক বিশ্লেষণ আমাদের পীড়া দেয়। তাদের উচিত আমাদের অর্জন নিয়েও কথা বলা। গত ৮ ডিসেম্বর শনিবার এক সংলাপে গত ১০ বছরে ১৪টি ব্যাংক থেকে ২২ হাজার ৫০২ কোটি লুট হওয়ার তথ্য প্রকাশ করে সিপিডি। এছাড়া খেলাপী ঋণ, লোকসান, মূলধন ঘাটতি, সরকারী ব্যাংকের মূলধন যোগান দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এতে বক্তারা বলেন, ব্যাংকিং খাত যে কোন সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংকিং খাতে এ বিপর্যয় নেমে এসেছে। সংলাপে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন ও ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদসহ বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন। সিপিডি প্রকাশ করা তথ্য নিয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করা হয়নি দাবি করলেও এবিবির নেতারা বলেন, গবেষক ও বিশ্লেষকদের নেতিবাচক বিশ্লেষণ আমাদের পীড়া দেয়। তাদের উচিত আমাদের অর্জন নিয়েও কথা বলা। ব্যাংকের কোন ইস্যুতে সাধারণত এবিবি এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করে না। নির্বাচনের আগে কেন এই সংবাদ সম্মেলন এমন প্রশ্নের জবাবে এবিবি সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এর সঙ্গে নির্বাচনের কোন সম্পর্ক নেই। বিজয়ের মাসে স্বাধীনতার ৪৫ বছরের অর্জন সম্পর্কে জানানোর জন্য এটির আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। দশ বছর আগে ছিল ৮৭ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এই বাজেটের আকার বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতির আকার বহু গুণ বেড়েছে। ব্যাংক খাতসহ সবাই মিলে এ উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সবসময় নেগেটিভ দিক নিয়ে আলোচনা হয়। কাজ করতে গেলে ভুল ভ্রান্তি হতেই পারে। যেসব খবর সংবাদমাধ্যমে আসে সেগুলো একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে। ব্যাংক খাতে অনেক সাফল্য আছে সেগুলো নিয়েও কথা বলা উচিত। ব্যাংক এশিয়ার এমডি মোঃ আরফান আলী বলেন, ব্যাংকের আকার অনেক বড় হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং চালু করার ফলে অনেক মানুষ সেবা পাচ্ছেন। ব্যাংকগুলোর ১০ হাজার শাখা, ৭৫৮টি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান, ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ১৭টি বীমা ও ৮২ হাজার ৩৪৬টি সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে। এর ফলে ব্যাংকিংয়ে সবাই আসছে। ২০১৩ সালে ১ লাখ মানুষের জন্য শাখা ছিল ৮টি এখন বেড়ে হয়েছে ৯টি, এটিএম ছিল ৫টি থেকে বেড়ে হয়েছে ৮টি, মোবাইল আউট ছিল ১৮৬টি এখন বেড়ে হয়েছে ৬৬৭টি। বর্তমানে ৫০ শতাংশ মানুষের এ্যাকাউন্ট আছে যেখানে ২০১৪ সালে ছিল ৩১ শতাংশ। মোট এ্যাকাউন্টের ৩৫ শতাংশ নারীদের। অর্থাৎ সবক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ব্যাংকের হাত ধরে শিল্পায়ন হয়েছে। অনেক কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছে। ভাত খেতে গেলে কিছু ভাত পড়তেই পারে। খেলাপী ঋণ আছে, থাকবে তবে সেটি মাত্রার মধ্যে রাখতে হবে। ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ব্যাংকগুলো অনেক ভাল করছে। আমরা ছোট-মাঝারি ধরনের ধাক্কা মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করেছি। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান বলেন, বিভিন্ন দিক থেকে কমপ্লায়েন্স খাত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা জবাবদিহী করছি। আমাদের ব্যাংকগুলো ভাল করছে বলে বিদেশীরা আসছেন এখানে ব্যবসা করতে। আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ এ সারওয়ার বলেন, দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উলম্ফন হয়েছে। ঐতিহ্যগত বিনাপুঁজি থেকে আমরা পরিশ্রম করে অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নতি করেছি। এর পেছনে ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। কিছু ভুলের কারণে শুধু নেতিবাচক আলোচনা করা উচিত নয়। অগ্রণী ব্যাংকের এমডি শামস উল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতে অকল্পনীয় অগ্রগতি হয়েছে। ব্যাংক খাত শক্তিশালী বলেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ভাল হচ্ছে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করা সম্ভব হচ্ছে। এসব উন্নয়নের চিত্র নিয়ে আমরা বাহাস করতে চাই। যে কেউ আমাদের সঙ্গে বাহাস করতে আসতে পারেন। ইসলামী ব্যাংকের এমডি মাহবুবুর রহমান, ব্যাংকের চেষ্টার ফলে উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ২২ পরিবারের হাতে ছিল। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর পোশাক খাতসহ বড় বড় শিল্প ব্যাংকের হাত ধরে বড় হয়েছে। খেলাপী ঋণ বৃদ্ধি কারণ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আনিস এ খান বলেন, বিভিন্ন কারণে ঋণ খেলাপী হয়ে যাচ্ছে। একসময় ছিল কারখানার জন্য ব্যাংক ঋণ নিয়ে যন্ত্রপাতি বসিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে তা চালু করতে পারেননি উদ্যোক্তারা। নিত্যপণ্য আমদানি করে তার দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়তে হয়েছে। ফলে ঋণগ্রহীতারা খেলাপী হয়ে গেছেন। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। কিন্তু সব সময় সমস্যা বললে কাজ করা যাবে না। পজিটিভ চিন্তা করে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক বছরই চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। তবে ব্যাংক খাতের জন্য সরকার নানাভাবে সহযোগিতা করছে। একটি ব্যাংক সফল হতে সময় লাগে ১০০ থেকে ১৫০ বছর। সুতরাং আমরাও সফল হবো। হলমার্ক ও বেসিক ব্যাংকসহ দুর্নীতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে, হলমার্ক গ্রুপের জমি ছিল, কারখানা ছিল, বিদেশী ক্রেতা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কোন কারণে ‘হায় হায়’ করতে করতে সব চলে গেল। স্বল্প মেয়াদী ঋণগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদে করতে গেলে কিছু সমস্যা হয়।
×