ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ এদের না বলুন...

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

অভিমত ॥ এদের না বলুন...

বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নের মূল লক্ষ্যই ছিল জামায়াতকে সন্তুষ্ট রাখা। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এটা স্পষ্ট যে, এটি যথারীতি নির্ধারণ করা একটা তালিকা। বলা যায়, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামকে কীভাবে ছাড় দেয়া যায় সেই চেষ্টা তাদের দীর্ঘদিনের। প্রতীক বরাদ্দ নিয়েও বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে লোক-দেখানো টানাপোড়েন ছিল। সম্প্রতি জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, এতদিন ওনারাই (বিএনপি) উদ্বুদ্ধ করেছিলেন আমরা যেন ধানের শীষ প্রতীক নেই। আমাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকলে শেষপর্যন্ত সম্মত হই।’ (প্রথম আলো ২৮ নবেম্বর, ২০১৮) স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, সহিংসতা, ধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলে বিএনপি সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। তারা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারপুত্র বা তাদের সহযোগীদের মনোনয়ন দিল। বিএনপির একজন বড় নেতার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য ছিল, এবারের নির্বাচনে কোন যুদ্ধাপরাধী ধানের শীষ প্রতীক পাবে না। বাড়তি যোগ করেছেন, জামায়াতে নাকি মুক্তিযোদ্ধাও আছে। কি হাস্যকর! যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা, ঘরবাড়ি জ্বালানো, সম্পদ লুট, সহিংসতা, ধর্ষণ-হত্যা করার অভিযোগে দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে ফাঁসিতে ঝুলেছেন তাদের বংশধররা এখন একই আদর্শ নিয়ে রাজনীতিতে আসছেন বিএনপি ও ড. কামাল-রব-মান্নাদের হাত ধরে। সত্যি সেলুকাস! পাঠক এরকম একটি তালিকা আমাদের কাছে এসেছে। তালিকাটি এই লেখায় তুলে ধরছি- যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ধানের শীষের প্রার্থীরা ১. মওলানা আবদুল হাকিম (ঠাকুরগাঁও-২) এর ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। সে ১৯৭১ সালে আলবদর বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করে। তখন সে ছাত্রসংঘের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ২. গাজী নজরুল ইসলাম (সাতক্ষীরা-৪) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী। সে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রসংঘের রাজনীতির করত এবং আলবদর বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। ৩. আ .ন. ম শামসুল আলম (চট্টগ্রাম-১৫) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াতের প্রার্থী। সে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। মুক্তিযুদ্ধের সময় আল বদরের সক্রিয় কর্মী ছিল। বর্তমানে জামায়াতের অর্থদাতা। ৪. বগুড়া-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাসুদা মোমিন তালুকদার। সে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আব্দুল মোমিন তালুকদারের স্ত্রী। আব্দুল মোমিন মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকায় রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। ৫. পিরোজপুর-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী যুদ্ধাপরাধের অপরাধে যাবজ্জীবন দণ্ডিত আসামি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র শামীম বিন সাঈদী। জঙ্গী মদদদাতা হিসেবে পরিচিত যারা ১. আলমগীর কবির (নওগাঁ-৬)-উত্তরবঙ্গে জঙ্গীবাদ বিস্তারে প্রত্যক্ষ মদদ দেন। শায়ক রহমান এবং বাংলাভাইদের সহযোগিতা করতেন। ২. নাদিম মোস্তফা (রাজশাহী-৫)- রাজশাহীতে জঙ্গীবাদের বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ৩. রুহুল কুদ্দুস দুলু (নাটোর-১)- নাটোরসহ উত্তরবঙ্গে জঙ্গীবাদ বিস্তারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ৪. ব্যারিস্টার আমিনুল হক (রাজশাহী-১)- তার প্রত্যক্ষ মদদে রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটে। ৫. মিজানুর রহমান মিনু (রাজশাহী-২)-তার প্রত্যক্ষ মদদে রাজশাহীতে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটে। ৬. সুলতান সালাউদ্দীন টুকু (টাঙ্গাইল-২)। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। সে নিজেও জঙ্গী মদদদাতা। বিতর্কিত ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রার্থী ১. ইসহাক চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৪) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী। তিনি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভারতে বসে মোসাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করা বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বড় ভাই। ২. রিটা রহমান (রংপুর-৩) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী। তিনি বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানের স্ত্রী। ৩. ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লুৎফরজামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান নেত্রকোনা-৪ থেকে ধানের শীষের প্রার্থী। যারা দেশটাই চায়নি, স্বাধীনতা চায়নি, যারা দেশবিরোধী অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত তারা এবং তাদের সন্তানরা এখন নির্বাচনে। শুধু বাংলাদেশই নয়, পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি সাঈদীর চরমপন্থী মতবাদের জন্য ২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেরোরিস্ট স্ক্রিনিং সেন্টার (টিএসসি) সাঈদীকে তাদের নো ফ্লাই তালিকায় যুক্ত করে অর্থাৎ এই তালিকার নাগরিকেরা কোন দেশ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না। গণতন্ত্র বলতে আমরা কি বুঝি? গণতন্ত্র মানে কি জঙ্গী সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক দলগুলোকে নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া? গণতন্ত্র মানে রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রিত্ব দেয়া? যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের গাড়িতে পতাকা যা আমরা দেখেছি বিএনপি-জামায়াতের সরকার আমলে। এবারও কি সেই স্বপ্ন তারা দেখে! আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ৩২টি মামলায় ৫৯ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে। নিজামী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা চৌধুরী, আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ গ্লানিমুক্ত হয়েছে। আর জাতি দেখল কোন কিছুই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে পারেনি আপন প্রতিজ্ঞা থেকে। এরা নির্বাচিত হলে জনপ্রতিনিধির গুণগতমান কতটা জঘন্য হয়ে উঠবে তা কী বলার অপেক্ষা রাখে? এদের না বলুন। রাজাকার যুদ্ধাপরাধীমুক্ত নির্বাচন করা সময়ের দাবি। -সায়েম খান, গোলাম বাকী চৌধুরী, আদেলী এদিব খান, রেজা এনায়েত ও আহমেদ কৌশিক
×