ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় ‘আধুনিক দাসত্বের’ কবলে বাংলাদেশীরা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

 মালয়েশিয়ায় ‘আধুনিক দাসত্বের’ কবলে বাংলাদেশীরা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ চিকিৎসা সামগ্রী তৈরির দুই মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভয়াবহ দুরবস্থার খবর পাওয়া গেছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, টপ গ্লাভ ও ডব্লিউআরপি নামের দুই প্রতিষ্ঠানের কারখানায় কাজ করা বাংলাদেশী শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ওভারটাইম করানোর পাশাপাশি জোরপূর্বক শ্রমদানে বাধ্য করা হচ্ছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাতকারে ওই শ্রমিকেরা অভিযোগ করেছেন, বেতন বকেয়া রাখা, ঋণের জালে আটকানো ও পাসপোর্ট জব্দ করে রাখার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। গার্ডিয়ান আন্তর্জাতিক শ্রমসংঘের নীতিকে বিবেচনায় নিয়ে একে ‘আধুনিক শ্রমদাসত্ব’র পরিস্থিতি আখ্যা দিয়েছে। তবে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান টপ গ্লাভস বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। দেশটির অন্যতম বৃহৎ শ্রমিক নিয়োগকারী এই প্রতিষ্ঠানের ৪০টি কারখানা থেকে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জন্য রাবার গ্লাভস সরবরাহ করা হয়। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে টপ গ্লাভের ১৬ জন শ্রমিকের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আটজন বাংলাদেশের ও আটজন নেপালের। শ্রমিকরা অভিযোগ করেছে, কারখানায় তীব্র মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাদের। কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয় সপ্তাহের সাত দিনই। পুরো মাসে কেবল একদিন তারা ছুটি হিসেবে পান। অথচ তাদের পরিহিত শার্টে টপ গ্লাভের লোগো রয়েছে যেখানে লেখা-‘সৎ থাকুন এবং কোন প্রতারণা নয়।’ ১৬ জন শ্রমিকের প্রত্যেকেই অভিযোগ করেছেন, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের পাসপোর্ট আটকে রেখেছে এবং অনুরোধ সত্ত্বেও তা ফেরত দেয়নি। গার্ডিয়ানকে সাক্ষাতকার দেয়া সব বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকই দাবি করেছেন, টপ গ্লাভ-এর কারখানায় চাকরি নেয়ার জন্য তাদের নিয়োগ ফি বাবদ ১৮,০০০-২০,০০০ রিঙ্গিত করে দিতে হয়েছে। মাসের পর মাস ধরে, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে শ্রমিকরা অভিযোগ করে আসছে, ঋণের অর্থ চুকাতে গিয়ে তাদের বেতনের বেশিরভাগই শেষ হয়ে যায়। গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে টপ গ্লাভ শ্রমিকদের বেতন রসিদে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিকদের মূল বেতন এক হাজার রিঙ্গিত (মালয়েশীয় মুদ্রা)। অথচ মালয়েশিয়ায় মধ্যমমানের মজুরি দুই হাজার ১৬০ রিঙ্গিত। চুক্তিতে উল্লেখ থাকার পরও কেবল রবিবারের অতিরিক্ত কাজের জন্য তাদের ওভারটাইম দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও অনেক বেশি। গার্ডিয়ানকে সাক্ষাতকার দেয়া শ্রমিকদের একাংশ অভিযোগ করেছে, তাদের প্রতিদিন ১৫ হাজার গ্লাভস মোড়কজাত করতে হয়। আরেক শ্রমিক অভিযোগ করেছে, বিগত বছরের তুলনায় তার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪ গুণ বেড়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করতে পারলে বেতন কাটা হয় তাদের। শ্রমিক নির্যাতনের একই চিত্র দেখা গেছে, টপ গ্লাভসের সহযোগী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডব্লিউআরপিতে। প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের কারখানার ভেতরে আটকে রাখা হয়। কেবল রবিবার তারা বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেপালী শ্রমিক বলেছেন, ‘তিন মাস হয়ে গেছে আমাদের বেতন দেয়া হয়নি, পরিস্থিতিটা খুব ভয়াবহ।
×