ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুইজন গ্রেফতার

জঙ্গীবিরোধী ছবি তৈরি করায় পরিচালককে হত্যার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

  জঙ্গীবিরোধী ছবি তৈরি করায় পরিচালককে হত্যার পরিকল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদ বিরোধী চলচ্চিত্র তৈরি করায় চলচ্চিত্রকার খিজির হায়াত খানকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই দুই জঙ্গী পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তাদের তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। সোমবার রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে এমদাদ ওরফে সবুজ ওরফে আবু সালমান ওরফে হুজাইফা ও আবু বক্কর ওরফে ফাহিম ওরফে আব্দুল্লাহ ফাহিম নামের দুই জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার সদস্য। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম খান জানান, খিজির হায়াত খান জঙ্গীবিরোধী একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। এজন্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে জঙ্গীরা। হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছিল তারা। তার আগেই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। দুই জঙ্গীর দেয়া তথ্য মোতাবেক অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, খিজির হায়াত খান ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ নামে একটি সিনেমা তৈরি করেছেন। সেই সিনেমায় জঙ্গীবাদবিরোধী বার্তা প্রচার করেছেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে জঙ্গীরা। এরপর থেকেই খিজির হায়াতকে হত্যার জন্য টার্গেট করে তারা। জঙ্গীদের যোগাযোগ চ্যানেল টেলিগ্রাম এ্যাপসে ‘এসো কাফেলাবদ্ধ হই’ নামে একটি গ্রুপ খিজির হায়াতকে হত্যার বিষয়ে আলোচনা চলতে থাকে। গ্রেফতারকৃত আবু বক্করের দায়িত্ব ছিল খিজির হায়াতকে অনুসরণ করা। তার চলাফেরা এবং ঠিকানা সংগ্রহ করা। এজন্য আবু বক্কর কুমিল্লায় গিয়ে খিজির হায়াতের গ্রামের বাড়ি রেকি করে এসেছিল। জোবায়ের নামে এক সহযোগীসহ আবু বক্কর খিজির হায়াতের কুমিল্লার কাপ্তানবাজারের বাড়িতে গিয়েছিল। তারা ভুয়া পরিচয়ে তার বাবার সঙ্গে কথা বলে আসে। ঢাকায় তার বাসা ও অফিস সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করেছিল। আবু বক্কর এসব তথ্য গত আগস্টে সৌদি আরবে অবস্থানকারী এমদাদকে জানায়। হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে এমদাদ সৌদি থেকে দেশে আসে। পুরো হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সার্বিক দায়িত্বে ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা মাওলানা ওসমান গনি। তার সার্বিক নির্দেশনায় জঙ্গীরা খিজির হায়াতকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। নরসিংদীর বাসিন্দা আনসারুল্লাহ প্রধান মাওলানা ওসমান গনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। পলাতক থেকেই তিনি জঙ্গী সংগঠনটির কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। সূত্র বলছে, গ্রেফতারকৃত জঙ্গী এমদাদ কেরানীগঞ্জে মুফতি মাওলানা ইজাহার পরিচালিত মারকাহুদা আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। ২০১৬ সালে সে কাতার হয়ে সৌদি আরবে যায়। মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায়ই সে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতারকৃত আবু বক্করও যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। তাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা খিজির হায়াত খান সাংবাদিকদের জানান, মাস দুয়েক আগে সিটিটিসি’র পক্ষ থেকে জঙ্গীরা হামলা করতে পারে বলে তাকে সাবধান করে। সিনেমাটি নির্মাণ করার পর তাকে ফেসবুকেও হুমকি দেয়া হয়েছিল। তবে তিনি জঙ্গীবাদ বিরোধী কাজ থামাবেন না।
×