ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে প্রচারে এগিয়ে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

 রাজধানীতে প্রচারে এগিয়ে আওয়ামী  লীগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশ এখন নির্বাচনমুখী। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহ বেড়েই চলেছে। সাদা-কালো পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে সারাদেশ। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগেই কোন কোন এলাকায় প্রার্থীদের পক্ষে মিছিলও শুরু হয়েছে। রাজধানীতে রাস্তার মোড়ে গড়ে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারের অফিস। তবে এর সব কিছুই হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের প্রার্থীদের। কোথাও ধানের শীষ বা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের পোস্টার বা তাদের পক্ষে মিছিল-মিটিং করতে দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি একদিকে সংবাদ সম্মেলন করে নানা অভিযোগ করছে। আবার রাস্তায় বিরোধী আওয়ামী লীগ প্রার্থী পেলে শুধু হাতই মেলাচ্ছে না কোলাকুলিও করছে। একই দলের দুই অবস্থানে দুই রকম আচরণে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আসলেই বিএনপি কী শেষ পর্যন্ত ভোট চায়, না ভোট বানচাল করতে চায়; তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে সরকার দলীয় প্রার্থীর অনেকে। ঢাকার তেজগাঁও-নিউ ইস্কাটন এলাকা ছেয়ে গেছে কোদাল মার্কার পোস্টারে। এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পোস্টার সেঁটেছেন জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি। হাজার হাজার পোস্টার লাগানোর পরও সাকি অভিযোগ করেছেন তার কর্মীদের পোস্টার লাগাতে দেয়া হচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি লাগাতে নাই-ই দেয়া হয়, তাহলে এত পোস্টার লাগল কি করে। ঢাকা-১২ আসনের প্রার্থী সাকি বলেছেন দেশে একটা প্রবল স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চলছে। এই শাসন সারা দেশে একটা আতঙ্ক তৈরি করেছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। অবাধে লুটপাটতন্ত্র চলছে। এসবের ন্যূনতম কোন জবাবদিহি নেই। আজকে দেশে গুম-খুন চলছে, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। এ ধরনের নেতিবাচক প্রচার ভোটের মৌসুমে ভোটারকে আকৃষ্ট করে। সঙ্গত কারণে বিরোধীরা এখন সরকারের বিপক্ষে এই প্রচারে নেমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাকির এই কৌশল অবলম্বন করেছে বিএনপি। ঢাকা ৮ এবং ৯-এর প্রার্থী মির্জা আব্বাস এবং আফরোজা আব্বাস। স্বামী-স্ত্রী মিলে এবার দুটি আসনে নির্বাচন করছেন। ভোটের প্রচারে যদি এত ভয় থাকে তাহলে তো একজনের পক্ষেই নির্বাচন করা কঠিন সেখানে দুজন কিভাবে নির্বাচন করেন, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মির্জা আব্বাসও জোনায়েদ সাকির মতোই অভিযোগ করেছেন। তিনি মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারের আগে অভিযোগ করেন, তার বাড়ির চারদিকে প্রত্যেকটি গেটে সাদা পোশাকে লোকজন দাঁড়িয়ে থাকে। এই অবস্থায় তিনি এখন সত্যিকার অর্থে নেতাকর্মী ও পরিবার-পরিজন নিয়ে ভীতিকর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। তিনি এবং তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দাবি করে বলেন, বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ আসতে পারে না। এটা একটা অমানবিক আচরণ। এই বক্তব্য দেয়ার পর পরই তিনি এবং তার স্ত্রী ভোটের প্রচারে নামেন। বিনা বাধায় এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, এটি বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল। এই কৌশলে বিএনপি ভোটারদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে। তৃণমূলে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার কারণে রাজনৈতিক প্রচারে বিএনপিতে কর্মী সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া ভোটের আগে একেকটি আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ায় শেষ পর্যন্ত গুছিয়ে বের হতে পারছে না। রাজধানীর সকল রাস্তার পাশে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পোস্টার থাকলেও বিএনপির পোস্টারের দেখা মিলছে না কোথাও। ভোটের মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের অনাগ্রহ দেখে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে নেতাকর্মীদের মাঠে নামার অনুরোধ করেছেন। ড. কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আসুন, আমরা সবাই উঠেপড়ে এই কাজে ব্যস্ত হয়ে যাই। আজকে থেকেই, এখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে শুরু করুন- আমার ভোট আমি দেব, সংবিধান অনুযায়ী দেব। তিনি বলেন, যেখানেই থাকেন রাস্তাঘাট, পাড়ায়-মহল্লায় নেমে পড়ুন। সকলকে বলব, আসুন বাসায় বাসায়, বাড়িতে বাড়িতে যাই। কিন্তু জোটের শীর্ষ নেতার এই আহ্বানের পরও সেভাবে মাঠে নামছে না বিএনপি। আবার এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। চট্টগ্রামে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কুশল বিনিময় ও কোলাকুলি করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আবদুল্লাহ আল নোমান। মঙ্গলবার নগরীর শাহ আমানত মাজার জিয়ারত করে নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার পথে সাক্ষাত হয় তাদের। দুজনেই হাসি মুখে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছেন। ফলে বিএনপির নয়াপল্টনের অফিসে বসে দিনভর ভোট নিয়ে যে নেতিবাচক প্রচার চালানো হয় নওফেল এবং নোমানের হাসিখুশি কোলাকুলি কিন্তু সেই বক্তব্যকে সমর্থন করে না। বিএনপি নামতে দেরি করলেও বসে নেই অন্যরা। বাংলাদেশ মুসলিম লীগের দলীয় প্রতীক হারিকেন নিয়ে মুসলিম লীগ ও এনডিএমের সমন্বয়ে গণঐক্য জোটের ৫৫টি নির্বাচনী আসনে প্রার্থীদের প্রচারের উদ্বোধন করেন জোটের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা নবাব স্যার সলিমুল্লাহর রাজধানী বেগমবাজারের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে গণঐক্যের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়। মঙ্গলবার মহাজোটের ঢাকা-৬ এর প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদ ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন।
×