ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্য থেকে সফল তিন তরুণ

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

শূন্য থেকে সফল তিন তরুণ

শোভনের ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। ঘড়িতে তখন সকাল আটটা ত্রিশ বাজে। দশটার মধ্যে অফিস ধরতে হবে। শোভন মনে মনে ভাবছিল কি করি? খিলগাঁও থেকে ধানমণ্ডি সিএনজিতে যেতেও দেড় ঘণ্টার কম সময় লাগবে না। শোভনের হঠাৎ মনে হলো ওর অফিস সহকর্মীদের কাছে প্রায় সময় ‘পাঠাও’ এ্যাপসের কথা অনেক শুনেছি। একবার না হয় সেই এ্যাপস ব্যবহার করি । কারণ আজ হেড অফিসের লোক আসবে তাই সময়মতো অফিসে পৌঁছতেই হবে। আর দেরিীনা করে প্লে স্টোর থেকে ‘পাঠাও’ এ্যাপস নামিয়ে নিলাম। গন্তব্য ঠিক করে রাইড রিকোয়েস্ট দিল শোভন। ১২০ সেকেন্ড সময় চেয়ে নিল। ৬০ সেকেন্ডের মাথায় চালকের ফোন। তিনি আছেন সেগুনবাগিচা। শোভন প্রস্তুত হতে হতেই ‘পাঠাও’ এর চালক শোভনকে পৌঁছে দিতে হাজির। ভাড়া আসল ১১৩ টাকা। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরদ্বিপ মজুমদার। পড়াশোনার পাশাপাশি ‘পাঠাও’ এর খ-কালীন রাইডার হিসেবে কাজ করছেন। এজন্য প্রতি মাসে ৮ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পাচ্ছেন। সঙ্গে কমিশন হিসাবে থাকছে ভাড়ার ৫০ শতাংশ। বাইকের ফুয়েল খরচ বাদ দিয়েও ভাল অঙ্কের কমিশন জমে মাস শেষে। সৌরদ্বিপের কাছে পড়াশোনার পাশাপাশি বাইক রাইড করে অর্থ উপার্জন বেশ রোমাঞ্চকর। সৌরদ্বিপ বাইক চালাতে ভালবাসে। তার ভাললাগার কাজের সঙ্গে উপার্জনও হচ্ছে। এতে সৌরদ্বিপ হাত খরচের পাশাপাশি টাকা জমাতেও পারছে। বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্ম থেকে সবার কাছে যানজটের নগরীতেই হোক বা এর আশপাশের বসবাসকারীর দৈনন্দিন জীবনের চলার পথে এ্যাপের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ইন্টারনেট সংযুক্ত মোবাইলে থাকা পরিবহন জাতীয় এ্যাপ তাদের হাতের নাগালে পৌঁছে দিচ্ছে মোটরসাইকেল, কখনও সিএনজি, কখনও ট্রাক, আবার দূর যাত্রার টিকেটও পাওয়া যাচ্ছে ওইসব এ্যাপের মাধ্যমে। এসব এ্যাপের মধ্যে পাঠাও বেশ জনপ্রিয়। ঢাকা শহরে স্মার্ট ফোনভিত্তিক পরিবহন এ্যাপ ‘পাঠাও’ চালু করে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছেন যাতায়াত ব্যবস্থায়। বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে ‘পাঠাও’। এমন উদ্যোগ রাজধানীবাসীর ভোগান্তি আর দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব করেছে। সময়টি ছিল ২০১৫ সালের মার্চ। এই তিন উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন হলেন, হুসাইন এম ইলিয়াস যিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে সবে মাত্র এমবিএ ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। অপর আরেকজন হলেন, সিফাত আদনান তিনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে থেকে কিছু একটা করার কথা ভাবলেন এই দুই তরুণ। দুই বন্ধু মিলে ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে ছোট পরিসরে শুরু করলেন ডেলিভারি এজেন্টের কাজ। দুই চাকার যান বাইসাইকেল, বাসায় গিয়ে ডকুমেন্ট পৌঁছে দিত। বর্তমানে জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং কোম্পানি ‘পাঠাও’-এর সূচনা লগ্নের গল্পটা ঠিক এমন। এক সময় দুই বন্ধু ভাবলেন, দুই চাকার বাহন মোটরসাইকেল সেবা চালু করার। মোটরবাইক সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেবে যাত্রীদের। এতে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে অন্যদিকে যাত্রীদের গুনতে হবে না বাড়তি টাকা। সেই সময় ‘পাঠাও’ কোম্পানি তে যুক্ত হলেন যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা ফাহিম সালেহ। তিনজন মিলে শুরু করলেন দেশীয় ডেভেলপার দিয়ে এ্যাপস তৈরির কাজ। এ্যাপস তৈরির পর রাজধানীতে প্রথমবারের মতো স্মার্টফোন ভিত্তিক মোটরবাইক সার্ভিস ‘পাঠাও’ চালু করেন তারা। ২০১৬ সালের নবেম্বর মাসে এই সেবা চালু করা হয়। একদম শূন্য অবস্থান থেকে শুরু করা এই তিন তরুণের বর্তমান সম্পদ মূল্য ১০০ মিলিয়ন টঝউ বা বাংলাদেশী টাকায় ৮২০ কোটি টাকা! বাংলাদেশের তরুণদের জন্য যা অনন্য রেকোর্ড। সম্পদ বলতে কেবল তিনটি বাইসাইকেল নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল তারা। নিজেদের সততা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা অল্প সময়েই সফলতা পেতে শুরু করে। তাদের সফলতা দেখে বিভিন্ন বিদেশী ইনভেস্টররা ইনভেস্ট করে তাদের ব্যবসায়। যার ফলাফল, এত কম সময়ে এই তিন তরুণ ১০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক হতে পেরেছে। বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ ‘পাঠাও’ এ্যাপস ব্যবহার করছেন। আর ৫০ হাজারের ও বেশি চালক ‘পাঠাও’ এর রাইডার হিসেবে এ্যাপস ব্যবহার করছেন। এই তরুণদের উদ্যোগী মনোভাবে বহুলোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি লোক ‘পাঠাও’ রাইডের সঙ্গে জড়িত। কোম্পানির স্থায়ী কর্মী রয়েছে একশ’রও বেশি।
×