ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তি পেলেন শিক্ষিকা

ভিকারুননিসায় অস্থিরতা কাটছে

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

ভিকারুননিসায় অস্থিরতা কাটছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছাত্রীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিদ্যাপীঠ রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় সৃষ্ট অস্থিরতা কাটছে। রবিবার জামিনের পর সোমবার দুপুরে মুক্তি পেয়েছেন গ্রেফতার শিক্ষিকা হাসনা হেনা। ক্লাস ও পরীক্ষায় ফিরেছে সকল শিক্ষার্থী। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্রী অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে নির্বাচিত গবর্নিং বডি ভেঙ্গে দেয়ার সুপারিশসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপত্তি উঠেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। সোমবার দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে শিক্ষিকা হাসনা হেনার জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছায়। পরে তা যাচাই-বাছাই শেষে দুপুর ১২টার দিকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এদিন স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ছিল প্রতিষ্ঠানটিতে। নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম রাতে জনকণ্ঠকে বলেন, খুবই ভালভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে সকলে। ছাত্রীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মেয়েদের ধন্যবাদ তারা আমার অনুরোধ শুনেছে। আমি সকলের সহযোগিতা চাই। অধ্যক্ষ বলেন, সোমবার ক্লাস ছাড়াও বেশ কিছু কাজ করেছেন শিক্ষকদের নিয়ে। তবে শিক্ষা কার্যক্রম সাভাবিক হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্রী অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে নির্বাচিত গবর্নিং বডি ভেঙ্গে দেয়ার সুপারিশসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপত্তি উঠেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। ৪ ডিসেম্বর রাতে তৈরি করে ৫ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিকারুননিসার গবর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার দাম্ভিদকতার সঙ্গে অভিযোগ করেন, শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় তাদের [গবর্নিং বডি] না জানিয়ে কেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন। সভাপতির এহেন আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। এতে প্রতীয়মান যে, সাধারণ অভিভাবককে তারা মানুষ বলেই গ্রাহ্য করেন না। প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে এই পরিস্থিতি বিরাজমান বলেই অরিত্রী ট্র্যাজেডি সংঘটিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গবর্নিং বডি ভেঙ্গে দেয়া প্রয়োজন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত আত্মহত্যার ঘটনাটি তদন্ত করে ওইদিনই প্রতিবেদন তৈরি করে তিন সদস্যের কমিটি। কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফ। অপর দুই সদস্য হলেন, ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস ও ঢাকার জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ বেনজীর আহমদ। তদন্ত কমিটি আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদৌস, শিফট-ইন-চার্জ জিনাত আখতার, পরীক্ষা কক্ষে দায়িত্ব পালনকারী কক্ষ পরিদর্শক লুৎফুন নাহার করিম ও আফসানা আমাতু রাব্বি, গবর্নিং বডির সদস্য ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অভিভাবক রিপন তরফদারের বক্তব্য গ্রহণ করেন। কিন্তু অত্মহত্যার ঘটনার বিষয়ে গবর্নিং বডি ভেঙ্গে দেয়ার চিন্তা ও সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রতিষ্ঠানটি। সভাপতি বলেছেন, আমরা জানতে পেরেছি গবর্নিং বডিরই এক সদস্যের কথা শুনে এ মন্তব্য করেছে তদন্ত কমিটি। আমি এ কথা বলেছি কিনা তাদের যাছাই করা উচিত ছিল। শিক্ষকরা বলছেন, কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে এখানে আমলাদের বসানোর চেষ্টা চলছে। এর আগেও এমন হয়েছে কয়েকবার। পরে দেখা যায়, তারা থাকা অবস্থাও ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ এসেছে। ভিকারুননিসার নাম পরিবর্তনের গুজব ॥ ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের নাম পরিবর্তন করার উদ্যোগের খবরটি নিছকই গুজব। ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নাম পরিবর্তনের উদ্যোগের খবরটি ছড়িয়ে পড়ে ভিকারুননিসা বর্তমান ও সাবেক ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে। এতে উদ্বেগও প্রকাশ করেন তারা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন বলেছেন, কয়েক সাংবাদিক আমার কাছে জানতে চেয়েছেন নাম পরিবর্তনের কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা? এমন কোন উদ্যোগ বা সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় বা সরকার নেয়নি বলে আমি সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, নাম পরিবর্তনের জন্য কোন মহল থেকে দাবি উঠেছে বলেও আমার জানা নেই। এত পুরনো একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করতে অনেকের সম্মতি প্রয়োজন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলে সম্মিলিতভাবে নিতে হবে। তাই আপাতত ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের নাম পরিবর্তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন উদ্যোগ নেই।
×