ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমাদের দু’একজন সরকারের কোলে বসে আছে ॥ নজরুল

আইএসআই-তারেক বৈঠকের কথা ফখরুলের অস্বীকার

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

আইএসআই-তারেক বৈঠকের কথা ফখরুলের অস্বীকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়নি বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। তিনি বলেন, আইএসআইয়ের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের খবর জঘন্য মিথ্যাচার। শুধু বিএনপিকে হেয় করার জন্য এমন প্রচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এর আগে দুপুরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন এখনও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না। অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের দু’একজন সরকারের কোলে বসে আছে। ফখরুল বলেন, বিএনপির বিদেশী কোন সংস্থা ও দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ক্ষমতায় আসে না। বিএনপি বরাবরই নিজেদের যোগ্যতায় জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা নাকি পাকিস্তানী দূতাবাসের সঙ্গে বসেছি। আবদুর রহমানকে না হয় বাদ দিলাম। তিনি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। ওবায়দুল কাদের সাহেবের মতো দায়িত্বশীল নেতার মুখ দিয়ে এমন চরম জঘন্য মিথ্যাচার শুধু অপ্রত্যাশিতই নয়, এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দৃঢ়ভাবে বলতে চাই এ ধরনের কোন বৈঠক লন্ডনেও হয়নি, দেশেও হয়নি। এখনও নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, বিএনপির শত শত নেতাকর্মীকে এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বেশ কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম বন্ধ করার সুপারিশ করেছিল। এখন সেই গণমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ফখরুল বলেন, গণমাধ্যম যখন সেলফ সেন্সরশিপ শুরু করে তখন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝোঁকে। কিন্তু আজ সেগুলোও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সোস্যাল মিডিয়ার উপরে ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা একটা অসমতল ভূমিতে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুচিন্তিভাবে জঘন্য রকমের অপপ্রচার চালাচ্ছে। ফখরুল বলেন, নির্বাচনে যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হয় সেজন্য বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সোস্যাল মিডিয়ার ওপর ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হচ্ছে । অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ডিজিটালের কথা বলে তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট ও ৫৭ ধারা করেছে। এর মাধ্যমে মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তার মানুষদের আটক করা হচ্ছে। ভেরিফাইড পেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে কার্টুন দিয়েছেন অভিযোগ করে ফখরুল বলেন কার্টুন দিতেই পারে। কিন্তু আমরা কার্টুন দিলেই মামলা দেয়া হচ্ছে। সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, আমরা এখন মামলা শুরু করব, আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা দেখব সরকার কি ব্যবস্থা নেয়। ফখরুল বলেন, নির্বাচনের প্রচার আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে পারিনি। আমাদের নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। এজন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেব। খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়া সত্ত্বেও মুক্তি দেয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, দেশকে যদি রক্ষা করতে চান তাহলে প্রচার প্রচারণার সুযোগ দিন অন্যথায় দেশ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না –রিজভী ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সোমবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, নির্বাচনী জাহাজ একপাশে হেলানো রাখা হয়েছে যাতে সরকারবিরোধীরা সাগরে পড়ে যায়। কিন্তু এই নির্বাচনী জাহাজের সারেংকে দক্ষ হতে হবে। নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গেলেও এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নিদর্শন দেখতে পাচ্ছি না। বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন ভয়ঙ্কর গোপন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসক তথা রিটার্নিং অফিসাররা। পরিকল্পিত নীলনক্সার মাধ্যমে সরকার দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য লোক দেখানো নির্বাচন আয়োজনের ফন্দি-ফিকির করছে। ক্ষমতাসীনদের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রহসনমূলক নির্বাচনী ছক তৈরি করে এগিয়ে চলছে। রিজভী বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পাকিস্তানী দূতাবাসে গিয়ে নাকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গোপন বৈঠক করেছেন। এই অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে পাকিস্তান হাইকমিশন রবিবার সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে। লিখিত বিবৃতিতে এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে তা ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে। পাকিস্তানের কোন কূটনীতিকের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়নি। তিনি বলেন, বিটিভি এখন আওয়ামী লীগের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের দু’একজন সরকারের কোলে বসে আছে- নজরুল ॥ এবার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে দু’একজন আছেন যারা সরকারের বিরুদ্ধে কড়া কড়া কথা বলেছেন, এখন দেখলাম তারা সরকারের কোলে বসে আছে। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শ্রমিক দল আয়োজিত ‘সর্বজনীন ন্যায়বিচার, বাক স্বাধীনতা, অবাধ গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলে। সরকারের সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, একজন রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যজনকে কারাগারে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় মানবাধিকার সনদের সঙ্গে কোনভাবে সামঞ্জস্য হয় না। সব মানুষের সমান অধিকার এটা হচ্ছে মানবাধিকারের মূল কথা। কিন্তু এই সরকার মানুষকে সমান অধিকার দিচ্ছে না। বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহী নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে নজরুল ইসলাম বলেন, তাদের এমপি হওয়ার এতই শখ যে, তার জন্য এত দিনের কথা সব বদলাতে হলো। তাতে আমাদের কিছুই আসবে-যাবে না। কারণ সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক দেশের জনগণ এবং আসল সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক আল্লাহতায়ালা। তিনি বলেন, দেশের জনগণ স্থির করে ফেলেছে তারা ভোট দিতে যাবে এবং তাদের পছন্দের ধানের শীষে ভোট দেবে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে জনগণ খুন, গুম, হত্যা, মামলার জবাব দেবে। আর এতে আমরা আশা করি, ধানের শীষের জয় হবে। নজরুল বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে হাজারো যুক্তি থাকা সত্ত্বেও নি¤œ আদালত তার মুক্তি অসম্ভব করে তুলেছে। উচ্চ আদালতে জামিন হওয়া সত্ত্বেও নি¤œ আদালত জামিন দিচ্ছে না। কারণ, নি¤œ আদালত সরকারের অধীনে। সরকার খালেদা জিয়াকে বের হতে দিচ্ছে না। কারণ তারা খালেদা জিয়াকে ভয় পায়, ভয় পায় তার জনপ্রিয়তাকে। তিনি বলেন, সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত যদি জামিনও দেয় তাতে সরকার পক্ষ সন্তুষ্ট হয় না। আমাদের নেতাকর্মীদের জেলেই পাঠাতে হবে। কারণ নির্বাচন সামনে। নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার ভেবেছিল, খালেদা জিয়াকে জেলে নিলে বিএনপি ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু না বিএনপি এখন আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা এক জোটে সংঘবদ্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নজরুল বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পরও সরকার সমানভাবে কাজ করতে দেবে না এমন আশঙ্কা আছে। কারণ, সরকার এই সুযোগ সৃষ্টিতে বাধা দেবে কারণ, তারা জানে তাহলে তাদের জেতার কোন সুযোগ নেই। ভোটের মাধ্যমে খুন, গুম, হত্যা, মামলার জবাব দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এতে বক্তব্য রাখেন।
×