ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুরে আজ ২ উইকেট নিতে পারলেই নির্দিষ্ট ভেন্যুতে ওয়াকার ইউনুসকে পেছনে ফেলবেন

সাকিবের সামনে রেকর্ডের হাতছানি

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

সাকিবের সামনে রেকর্ডের হাতছানি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ঘরের মাটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেকোন প্রতিপক্ষের জন্য বড় রকমের আতঙ্ক। বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে টাইগাররা। এর পেছনে কারণ হিসেবে দলে পঞ্চপা-বের উপস্থিতিকেই সবসময় বিবেচনা করা হয়। মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালরা একসঙ্গে খেলছেন অনেক দিন। তবে এর মধ্যে ব্যাটে-বলে ধারাবাহিকভাবে অবদান রেখে নিশ্চিতভাবেই সাকিব অন্যতম পারফর্মার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ঘরের মাটিতেই তার বাঁহাতি স্পিনে ওয়ানডেতে দল পেয়েছে ১৪৭ উইকেট। ঘরের মাটিতে ওয়ানডে ইতিহাসে উইকেট শিকারের ক্ষেত্রে সাকিবের এ নৈপুণ্য ইতিহাসে পঞ্চম। এর মধ্যে দেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ খ্যাত মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামেই তিনি পেয়েছেন ৭৯ ওয়ানডেতে ১১৩ উইকেট। নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সর্বাধিক উইকেট পাকিস্তানী দুই কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম (৭৭ ম্যাচে ১২২) ও ওয়াকার ইউনুসের (৬১ ম্যাচে ১১৪)। উভয়ে শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই কীর্তি গড়েছেন। ওয়াকারকে হটিয়ে দুই নম্বরে উঠে আসার জন্য আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাত্র ২ উইকেট প্রয়োজন। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামার আগে মিরপুরে সাকিবের উইকেট সংখ্যা ছিল ১১২। ওয়াকারকে হটিয়ে দেয়ার সুযোগ ছিল সে ম্যাচেই। কিন্তু পুরো ১০ ওভার বোলিং করে ৩৬ রান দিয়ে মাত্র ১ উইকেট লাভ করেন। পেসাররাই দাপট দেখিয়েছেন বলে স্পিনাররা সুযোগটাই পাননি। তবে আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সাকিবের আরেকটি সুযোগ। সেক্ষেত্রে দুই উইকেট নিতে হবে তাকে। নির্দিষ্ট ভেন্যুতে ওয়ানডেতে সর্বাধিক উইকেট বাঁহাতি পেসার ওয়াসিমের। তিনি শারজায় ৭৭ ম্যাচে ১২২ উইকেট নিয়েছেন। এরপরই তার সতীর্থ ওয়াকার ৬১ ম্যাচে ১১৪ উইকেট নিয়ে। এ তালিকায় স্পিনার হিসেবে শীর্ষে সাকিব আছেন এ দু’জনের পরেই শেরেবাংলায় ৭৯ ওয়ানডেতে ১১৩ উইকেট নিয়ে। স্পিনার হিসেবে তার পরেই অবস্থান শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন। তিনি শারজায় ৪৫ ম্যাচে ৮২ উইকেট নিয়েছেন। সার্বিকভাবে তার অবস্থান পাঁচে। পুরো তালিকায় চার নম্বরে আছেন মাশরাফি। তিনি শেরেবাংলা নিয়েছেন ৬৩ ম্যাচে ৯৩ উইকেট। বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বাধিক উইকেট মাশরাফির, তিনি ২০০ ওয়ানডে খেলে পেয়েছেন ২৫৫ উইকেট। তবে ঘরের মাটিতে তার মোট শিকার ৯৮ ম্যাচে ১৪০। সেদিক থেকে মাশরাফিকে পেছনে ফেলা সাকিবের শিকার ৯৭ ওয়ানডেতে ১৪৭। দেশের মাটিতে ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বাধিক উইকেটের রেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার শন পোলক। নিজ দেশে ১২৭ ম্যাচে তিনি পেয়েছিলেন ১৯৩ উইকেট। এ তালিকায় পরের অবস্থানগুলোয় আছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি ৯৫ ম্যাচে ১৬৯ ও তার স্বদেশী পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা ৯৫ ম্যাচে ১৬০ এবং মুরালিধরন ১০৯ ম্যাচে ১৫৪ উইকেট নিয়ে। এরপরই পাঁচ নম্বরে অবস্থান সাকিবের ১৪৭ উইকেট নিয়ে। অর্থাৎ এ তালিকায়ও ১৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁতে সাকিবের প্রয়োজন মাত্র ৩ উইকেট। এই মুহূর্তে সাকিবের ওয়ানডে ক্রিকেটে মোট উইকেট সংখ্যা ২৪৫। ১৯৩ ওয়ানডে খেলে তিনি এই শিকারগুলো নিজের ঝুলিতে পুরেছেন। তবে সাকিব বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেটের মালিক- মাশরাফির পরেই তার অবস্থান। আর এমন নৈপুণ্যের জন্যই সাকিব এক সময় ওয়ানডে ক্রিকেটেরও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। এই মুহূর্তে অবশ্য তিন নম্বরে নেমে গেছেন তিনি। তবে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগের অন্যতম শক্তি এখন পর্যন্ত এ বাঁহাতি স্পিনারই। বাংলাদেশ দল স্পিনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সাকিব সেটা নিয়মিতই দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছেন। নিজেকে নিয়ে চলেছেন অসামান্য উচ্চতায়। সে কারণেই দলের স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশীও ভূয়সী প্রশংসা করলেন সাকিবের। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় সাকিব শুধু আমাদের জাতীয় মর্যাদা ও মেধাই নয়, আপনি তাকে বলতে পারেন বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে সেরা ক্রিকেটার। তার অবস্থান নিয়ে আমি কিছু বলছি না, আপনি যদি তার গুণাগুণের দিকে লক্ষ্য করেন, আমি তার গুণের দিকে তাকিয়েই বলছি বোলার, ফিল্ডার ও ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি দুর্দান্ত প্রতিভাধর, দক্ষতাসম্পন্ন খেলোয়াড়। এমনকি আমি বলব তার দক্ষতা দেখাতে মাত্র কয়েক সেশনই যথেষ্ট। সময়মতোই তা দেখা যায় এবং একই সঙ্গে সঠিক জায়গায় জ্বলেও ওঠে। আর এটাই আমরা সাকিবের মধ্যে পাই এবং তিনি দলের ভেতর-বাহিরে তিনি প্রচুর কৌশলী সক্ষমতাসহ অনেক অভিজ্ঞতার বয়ে এনেছেন। আর সেটাই দলকে অনেক লাভবান করে তোলে।’
×