ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তির পর বন্দীকে সাধারণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে ॥ আইজি প্রিজন

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

মুক্তির পর বন্দীকে সাধারণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে ॥ আইজি প্রিজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাগারকে সংশোধনাগারে রুপান্তর করতে হলে মুক্তির পর বন্দীকে অপরাধী নয় সমাজের সাধারণ মানুষ হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে সরকার ও সমাজের সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। যাতে ওই ব্যক্তি নতুন করে পুনঃঅপরাধে জড়িয়ে না পরে। এছাড়া কারাগারেই তাদের দক্ষ করে কর্মোপযোগী করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দিতে হবে বলে মতামত দিয়েছেন বিদায়ী কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। সোমবার রাজধানীর উমেশ দত্ত রোডে কারা অধিদফতরে টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইনসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে বিদায়ী স্বাক্ষাতকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সৈয়দ ইফতেখার গত ৫ বছর কারা মহাপরিদর্শক পদে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাক্ষাত শেষে নতুন যোগ দেয়া কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা এনডিসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ইফতেখার বলেন, অন্য সকল ডিপার্টমেন্ট থেকে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা এই কারা বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সহযোগিতায় বিগত ৫ বছরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অনেক বিষয়ে সাংবাদিকরাও বিশেষ অবদান রেখেছেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কারা বিভাগের উন্নয়নে কাজ করতে। তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছরে যে অসমাপ্ত কাজগুলো রয়ে গেছে, সেগুলো নতুন কর্মকর্তাকে গত তিনদিন যাবত সবকিছুই ব্রিফ করা হয়েছে। উনি খুবই মেধাবী কর্মকর্তা, আশাকরি সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে জানান, কোন আসামি দীর্ঘদিন কারা ভোগের পরে যখন বেরিয়ে যায়। তখন সে যেন আবার অপরাধে না জড়িয়ে যায় সেই বিষয়েও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, আমরা দেখেছি কিছু আসামি দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায়, তাদের পরিবারের সঙ্গে কোন যোগাযোগ থাকে না। হতাশায় ভুগতে থাকে। কারাগার থেকে বেরিয়ে সর্বপ্রথম সমাজ ও তার পরিবারকে সহযোগিতা করতে হবে। সে যেন পরবর্তীতে আর কোন অপকর্মে না জড়িয়ে যায়। তিনি বলেন, অপরাধীদের সংশোধনে প্রথমত সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামাজিক এই ধরনের মেকানিজম গড়ে উঠলেও আমাদের দেশে এখনও এই অবস্থা গড়ে ওঠেনি। প্রিজন্স এ্যান্ড কারেকশনাল এ্যাক্ট নামক আইনটি পাস হলে সমাজসেবা অধিদফতর ও যুব অধিদফতর মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা সম্ভব হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে মাদক নিরাময় সম্ভব নয়। এর জন্য সবার ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে। কারও একার পক্ষে মাদক নিরাময় সম্ভব নয়। এর সঙ্গে স্টেট হোল্ডার কাজ করে। তবে মাদক সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশ দিয়েছেন, সে অনুযায়ী কাজ করলে মাদক পুরোপুরি নির্মূল করা না গেলেও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছরে এই কারা মহাপরিদর্শকের আমলে বন্দীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলা চালু করা, কারাবন্দীকে ঘুমানোর জন্য কম্বলের পরিবর্তে বালিশ প্রদান করা, নিম্নশ্রেণীর কর্মচারীদের ২৫ থেকে ২৮ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত প্রায় ৩ হাজারে কর্মচারীকে পদোন্নতি প্রদান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ স্থানান্তর করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করা, নতুন কমপক্ষে ১৫টি কারাগার নির্মাণ ও পুনঃসংস্কার করা, কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ কাজ শুরু করা, কারাগারে বন্দীর নিরাপত্তা রক্ষায় বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করা, কারা কর্মকর্তাদের জাতিসংঘ মিশনে পাঠানো, জাতীয় প্যারেডে অংশগ্রহণ করা, বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করা, নতুন কারা ডাক্তার ও ৫২ জন ডেপুটি জেলার নিয়োগ করা হয়েছে।
×