ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ মাসেই কাজ শুরু

রাজধানীতে শেষ রাতেও থাকবে ট্রাফিক পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

রাজধানীতে শেষ রাতেও থাকবে ট্রাফিক পুলিশ

আজাদ সুলায়মান ॥ রাত তখন তিনটা। নাইট ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন একটি বহুজাতিক কোম্পানির ক’জন কর্মচারী। তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে দশ মিনিটে মিরপুর গোলচক্কর পৌঁছে দেখেন- সেখানে ভীষণ যানজট। মাত্র গুটিকয়েক গাড়ি চারদিক থেকে এলোপাতাড়ি ছড়ানো। কার আগে কে যাবে- এই মানসিকতায় দেখা দেয় যানজট। সেখানে ট্রাফিকের কোন সার্জেন্ট বা পরিদর্শক না থাকায় চালকরা যে যার মতো গোঁ ধরে বসে থাকে। এমন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঢাকা মহানগর পুলিশ রাজপথে চালু করতে যাচ্ছে শেষ রাতের ট্রাফিক পুলিশ। যা কাজ করবে- রাত আড়াই থেকে ভোর সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত। চলতি মাসের শেষের দিকেই শেষ রাতের ইউনিট রাজপথে চালুর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এখন বিবেচনাধীন রয়েছে মহানগর পুলিশের দফতরে। জানা গেছে, রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশের কর্মক্ষেত্র চারটি অঞ্চলে বিভক্ত- নর্থ, সাউথ, ইস্ট ও ওয়েস্ট। রাজপথে সারারাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের টহল থাকলেও রাত দুটোর পর ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। অথচ এ সময় রাজপথে প্রায়ই যানবাহন চলাচলে নানা অনিয়ম ও অরাজক পরিস্থিতি দেখা দেয়। এসব বিবেচনায় রেখে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ রাত আড়াইটা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বিশেষ শিফট চালু করতে যাচ্ছে। চলতি মাসের শেষ দিকে এই শিফট চালু হবে বলে জানা গেছে। আপাতত ট্রাফিকের নর্থ জোনেই তা চালু হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জোনেও চালু হবে। জানতে চাইলে নর্থ জোনের ডিসি প্রবীর কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত বিবেচনাধীন রয়েছে। নর্থ জোনের আব্দুুল্লাহপুর, এয়ারপোর্ট, নতুনবাজার, কাকলী ও মহাখালীতে শেষ রাতের শিফট চালু করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সর্বত্র এটা চালু করা হবে। পুলিশ জানিয়েছে-বর্তমানে রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশ তিনটি শিফটে ডিউটি করে। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে বেলা আড়াইটা। আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে দশটায় আরেক টিম। এ সময় থেকে রাত দুটো পর্যন্ত আরেক শিফট। কিন্তু এরপর থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত অঞ্চলভেদে কিছু ট্রাফিক সদস্য ডিউটি করলেও গোটা রাজপথে আর কোন ট্রাফিক টিম ডিউটিতে থাকে না। অথচ এ সময়টাতে রাজধানীতে অনেক পেশাজীবীর চলাচল থাকে বেশ সরগরম। এ সময়ে পাবলিক পরিবহনের পাশাপাশি প্রাইভেটকার ও ট্রাকের চলাচল কম থাকলেও শুধু ট্রাফিক না থাকার দরুণ তাতেও দেখা দেয় যানজট। তাছাড়া বেপরোয়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণেরও কোন উপায় থাকে না। বিশেষ করে রাজপথে কোন ট্রাফিক না থাকায় ট্রাক চালক খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। যাতে অন্যান্য চলাচলকারীরাও বেশ আতঙ্কে ভোগে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেই রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত বিশেষ ট্রাফিক টিম রাজপথে সক্রিয় থাকবে। এ সংক্রান্ত একটি উদাহরণ টেনে প্রবীর কুমার রায় বলেন, এতে করে রাজধানীর যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরে আসার পাশাপাশি সাধারণ পথচারীরাও থাকবে নিরাপদে। যেমন বিমানবন্দর এলাকায় সারারাত মানুষের চলাচল থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে মানুষ বিভিন্ন উপায়ে। নর্থ বেঙ্গল, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের মানুষ সাধারণত আব্দুল্লাহপুর হয়ে এয়ারপোর্ট আসেন। রাতের শিফট চালু হলে তাদের নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রবীর কুমার রায় জানান, মগবাজার থেকে মহাখালী বাড্ডা, এয়ারপোর্ট হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ট্রাফিকের নর্থ জোনের আওতাভুক্ত। আপাতত এখানকার ৫টি স্থানে শেষ রাতের শিফট কাজ করবে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও চালু হচ্ছে শেষ রাতের শিফট। পর্যায়ক্রমে তা আরও বিস্তৃৃত করা হবে। তিনি জানান, চলতি শীতে ঘন কুয়াশার দরুণ বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিপর্যয়ের দরুণ যানবাহনের যে যানজট দেখা দেয়- তা নিরসনে এবার আগাম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে এ সমস্যাটি শুধু ট্রাফিকের ওপর চাপানো হয়। অথচ বিমানবন্দরের কারপার্কিংয়ের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় বাইরে যানবাহন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এতে এসব এলাকার আশপাশে সাময়িক সঙ্কট দেখা দেয়। এ নিয়ে সিভিল এ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে বহুতল কারপার্কিং আরও সম্প্রসারণ করার সুপারিশ করেছি। এছাড়া নর্থজোনের ২৫টি স্থানে অন স্ট্রিট পার্কিং তৈরি করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ১২ শতাধিক গাড়ি পার্কিং করতে পারে। একইভাবে ট্রাফিক চলাচলের বিশেষ ক্যাম্প চালু, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেমিনার করে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা, মাইকিং করে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞানদান করা, ও ক্যামেরার মাধ্যমে গোটা এলাকা সার্বক্ষণিক মনিটর করার মতো বহুমূখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতে রাজধানীর অন্যান্য যে কোন এলাকার চেয়ে নর্থ জোনের পরিস্থিতি অনেক নিরাপদ। এ অবস্থায় নাইট শিফট চালু হলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যাবে। বিশেষ করে বিমান বন্দর কেন্দ্রিক যানজট নিরসনে অস্থায়ী দুটো কারপার্কিং তৈরি করার পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর সুফল মিলবে চলতি শীত মৌসুমেই।
×