ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিশ্বাস নিতে পারছি না ॥ খাশোগির শেষ কথা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

নিশ্বাস নিতে পারছি না ॥ খাশোগির শেষ কথা

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন রবিবার জানিয়েছে, সৌদি বংশোদ্ভূত ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগির শেষ কথা ছিল, আমি শ্বাস নিতে পারছি না। খাশোগিকে হত্যার আগে চূড়ান্ত মুহূর্তের একটি অডিও টেপের প্রতিলিপি পড়েছেন এমন একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে সিএনএন এসব কথা জানিয়েছে। খবর এএফপির। সূত্রটি মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, প্রতিলিপিটিতে এটি স্পষ্ট যে হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত এবং এর অগ্রগতির বিষয়ে ব্রিফিং দেয়ার জন্য কয়েকটি ফোন কল করা হয়েছে। সর্বশেষ তিনটি ফোন মুতরেব করেছেন। হত্যার ঘটনাটি ঘটাতে কোন ভুল করা হয়নি। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যে হত্যাকারীদের কণ্ঠ চিহ্নিত করা গেছে তার মধ্যে মাহের আব্দুলাজিজ মুতরেবও রয়েছেন। তিনি খাশোগিকে বলছেন, আপনি তাহলে ফিরে এসেছেন। তখন খাশোগি বলেছে, আপনারা এটা করতে পারেন না। বাইরে অনেক লোক অপেক্ষা করছে। এর পর আর কোন কথা হয়নি। তবে অনেক শব্দ শোনা গেছে। যাতে বোঝা যায় খাশোগিকে হত্যাকারীদের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। একটা সময় তিনি বলছেন, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। সিএনএন বলেছে, তুর্কী কর্মকর্তাদের বিশ্বাস ফোন কলগুলো রিয়াদের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে করা হয়েছে। ভয়াবহ রেকর্ডিংয়ের প্রতিলিপিতে খাশোগি তার খুনীদের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করছেন তার বর্ণনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সাংবাদিকের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তার মৃতদেহ করাত দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করার শব্দও শোনা গেছে। যিনি করাত দিয়ে খাশোগির দেহ কাটার কাজটি করছেন তিনি অন্যদের ওই কাজ করার সময় শব্দ যাতে কানে না শোনা যায় সেজন্য গান শোনার পরামর্শ দেন। আসল প্রতিলিপিটি তুর্কী গোয়েন্দা সংস্থা প্রস্তুত করেছে। সিএনএনের সূত্র প্রতিলিপির অনুবাদ পড়েছেন এবং তাকে সাংবাদিকের মৃত্যু সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। কিভাবে রেকর্ডিংটি পাওয়া গেছে তা জানায়নি তুরস্ক। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার সৌদি কন্ট্রিবিউটর খাশোগিকে দুই অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেটে প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পরই হত্যা করা হয়। রবিবার সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাশোগি হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যার্পণ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান সন্দেহভাজনদের তাদের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এরদোগান প্রতিনিয়ত হত্যার সঙ্গে জড়িতদের যেন সৌদি আরব হস্তান্তর করে সেজন্য আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। তুরস্কের মতে, ১৫ সদস্যের একটি সৌদি দলকে ইস্তানবুলে পাঠানো হয়েছিল খাশোগিকে হত্যা করার জন্য। আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সৌদি আরব পরে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, এটি একটি দুর্বৃত্তসুলভ অভিযান ছিল, যা ভুলভাবে পরিচালিত হয়েছে। নিজের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হত্যাকা- ঘটানোর নির্দেশ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দিয়েছেন এমন দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকেন। এমনকি তিনি সিআইএর মূল্যায়ন প্রতিবেদনে যে বলা হয়েছে, যুবরাজ হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন তার সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করেন। খাশোগি হত্যার ঘটনার প্রেক্ষিতে রিয়াদের আন্তর্জাতিক সুনাম ও পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও কানাডা ২০ সৌদি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
×