ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতিবিদ পিকেটির নেতৃত্বে ৫০ জন বিশেষজ্ঞের উদ্যোগ

নয়া ইউরোপের পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

নয়া ইউরোপের পরিকল্পনা

একটি উন্নত ইউরোপ গড়ার লক্ষ্যে অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটির নেতৃত্বে ৫০ জন বিশেষজ্ঞ একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। পিকেটি একজন ফরাসী অর্থনীতিবিদ। তিনি আয় ও বৈষম্য নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছেন। তাদের পরিকল্পনায় আয় বৈষম্য, হতাশা, পপুলিজম ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দিকগুলো উঠে এসেছে। গার্ডিয়ান। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ইউরোপ এখন নানা ধরনের সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। এ থেকে মহাদেশকে বের করে আনার জন্য বিভিন্ন দেশের ৫০ জন অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ ও সাবেক রাজনীতিকরা একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। জলবায়ু প্রসঙ্গটি এতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কার্বন নিঃসরণকারী বহুজাতিক কোম্পানি ও ধনী ব্যক্তিদের ওপর বেশি হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অতি মাত্রায় কার্বন নির্গমনের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ করার জন্য ওই অর্থ প্রয়োজন হবে। এছাড়া দারিদ্র্য, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইইউর তথাকথিত গণতান্ত্রিক ঘাটতি পূরণের জন্যও প্রয়োজন হবে এ অর্থ। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যখন ব্রেক্সিটের ওপর ভোটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এরকম এক সময় ‘মেনিফেস্টো ফর ডেমোক্র্যাটাইজেশন অব ইউরোপ’ শীর্ষক পরিকল্পনাটি প্রকাশিত হলো। এতে বলা হয়েছে ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিমাত্রায় ‘টেকনোক্র্যাটিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, যা কেবল ধনীদের স্বার্থই রক্ষা করছে’। আরও বলা হয়, ‘ব্রেক্সিট এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেমন ইউরোপ বিরোধীরা নির্বাচিত ক্ষমতায় আসছে, এরকম অবস্থা আগে কখনও তৈরি হয়নি।’ গবেষকরা বলেন, নীরব দর্শকের মতো না থেকে পরিবর্তনেগুলোর জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। আগামী বছর মে মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনে। এর আগে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যেও বের হয়ে যাওয়া বা ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ইউরোপে ইইউপন্থী সরকারগুলোর আশঙ্কা ওই নির্বাচনে ইউরোপ বিরোধীরা সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পারে। পরিকল্পনায় স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন স্পেনের ব্যয় সংকোচন নীতি বিরোধী পোডেমস পার্টির নেতা পাবলো ইগলেসিয়াস, ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাসিমো ডি’আলেমা এবং বেলজিয়ামের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সোশ্যালিস্ট মেয়র পল ম্যাগনেটি, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের উপদেষ্টা মাইকেল জ্যাকবস। পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ যেসব লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে আছে ইইউর বার্ষিক বাজেট ৮শ’ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত করা। এই উদ্দেশ্যে একটি ইউরোপীয় অধিবেশন আহ্বানের কথা এতে বলা হয়েছে। কর্পোরেট মুনাফার ওপর আরও কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে এ অর্থ সংস্থান হতে পারে। ইইউর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় গুগল, এ্যাপল বা আমাজনের মতো বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি রোধে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে পারছে না। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ইউরোপের যেসব দেশে কর হার কম সেখানে তাদের মুনাফা সরিয়ে নিচ্ছে। পরিকল্পনায় প্রস্তাব করা হয়েছে, বাজেটের অন্তত ৪ শতাংশ ইইউ জিডিপির থেকে আসা উচিত। অতিরিক্ত অর্থ সংস্থানের জন্য চারটি উৎসের প্রস্তাব করা হয়েছে এতে। কর্পোরেট মুনাফার ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ কর। ব্যক্তিগত আয়ের ওপর করের পরিমাণ ১ লাখ ইউরো পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। ১০ লাখ মিলিয়ন বা তার ওপর উপার্জনকারীদের সম্পদের ওপর করারোপ এবং কার্বন নির্গমনের জন্য করারোপের প্রস্তাব এতে করা হয়েছে। নতুন একটি ইউরোপীয় এ্যাসেম্বলি এই তহবিল তত্ত্বাবধান করবে। ইইউ চুক্তির বাইরে এই এ্যাসেম্বলি স্বাধীনভাবে কাজ করবে।
×