ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার ৫ উইকেটে

শেরেবাংলায় আয়েশি জয় টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

 শেরেবাংলায় আয়েশি জয় টাইগারদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাভার থেকে মিরপুর- গত ৫ বছর ধরে এই পথ পাড়ি দিয়েই নিয়মিত বাংলাদেশ দলের খেলা দেখেছেন ইয়াসিন আরাফাত বাপন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ুয়া ছেলেটি অবশ্য এখন আর ওয়ানডে দেখতে তেমন আগ্রহী নয়। কারণ তার দাবি, ‘এখন বাংলাদেশ নিয়মিতই ওয়ানডে জিতে, হারলেও তেমন খারাপভাবে হারে না। এত জিতলে আর খেলা দেখার উত্তেজনা থাকে না!’ কথাটার প্রমাণ পাওয়া গেছে রবিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে হওয়া সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে গ্যালারির দিকে তাকিয়ে। ‘হোম অব ক্রিকেটে’ বাংলাদেশের ম্যাচে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না, আর এদিন সাধারণ গ্যালারির অনেক আসনই ছিল ফাঁকা। চলতি বছর টাইগারদের নিয়মিত জয় তুলে নেয়ার আরেকটি নিদর্শন দেখা গেল এদিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। টেস্ট সিরিজে অপাংক্তেয় পেসারদের দাপটে ক্যারিবীয়দের ৯ উইকেটে মাত্র ১৯৫ রানে আটকে রেখে ৩৫.১ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৬ রান তুলে কাক্সিক্ষত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বছরের ১৮তম ওয়ানডেতে ১২তম জয় আসার ম্যাচে আরও উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ৪ ওপেনার নিয়ে একাদশ সাজানো এবং ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ মিসের মহড়া। ইনজুরি থেকে ফেরা তামিম ইকবালের সঙ্গে ফর্মে থাকা ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকারের মধ্যে কে ওপেনিং করবেন? এই আলোচনা ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত চারজনকেই একাদশে রেখে ম্যাচে নেমে বাংলাদেশ টস হারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিংয়ে নামে। টেস্ট সিরিজে সফরকারীরা স্বাগতিক স্পিনারদের দাপটে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। দুই টেস্টের ৪০ উইকেট নিয়েছিলেন স্পিনাররা এবং দ্বিতীয় টেস্টে খেলেননি কোন স্বীকৃত পেসার। তবে মাশরাফি আগেই জানিয়েছিলেন ওয়ানডেতে দেখা যাবে ৩ পেসার। সেই রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান ও মাশরাফিই এবার শুরু থেকে ত্রাসোদ্দীপক বোলিংয়ে নাজেহাল করেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের। তবে সফরকারীরাও বেশ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা দেখিয়ে ব্যাট চালিয়েছেন। টেস্ট সিরিজে টি২০ মেজাজে ব্যাট চালিয়ে বাংলাদেশী বোলারদের চিন্তায় রাখা শিমরন হেটমায়ার (১৩ বলে ৬) রানে যখন সাজঘরে তখনই বোঝা গেছে ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং করাটা কতখানি দুষ্কর হয়ে পড়েছিল মিরপুরের ৬ নম্বর উইকেটে। তবে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে বোলিং শুরু করে যখন ফল তেমন আসেনি, তখন মুস্তাফিজ-মাশরাফি এসেই দাপট দেখিয়েছেন। আর সহজ ৫টি ক্যাচ ছেড়ে দেয়া আরিফুল হক, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, রুবেল হোসেন ও সাকিব ক্যারিবীয় ব্যাটিংকে বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে পড়তে দেননি। এরপরও হেটমায়ার বিদায় নেয়ার সময় উইন্ডিজের দলীয় সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ৯৩। তখন ২৯তম ওভার। এর মধ্যেই অবশ্য শাই হোপ ৫৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। আগুন বোলিং করা মাশরাফিকে ঠেকাতে গিয়ে ক্যারিবীয়দের মিডলঅর্ডারে ধস নামে। ১২৭ রানে ৬ উইকেট হারায় তারা। সেই ধস ঠেকিয়ে রোস্টন চেস ও কিমো পল দলের সংগ্রহ কিছুটা ভদ্রস্ত করতে পারলেও মুস্তাফিজ ফিরতি স্পেলে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। কাটার ও স্লোয়ারে টানা ৩ উইকেট তুলে নিলে ৯ উইকেটে ১৯৫ রানের বেশি হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহটা। কিমো ২৮ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ৩৬ ও চেস ৩৮ বলে ৩২ রান করেন। তিন পেসার মাশরাফি ৩০ রানে ৩টি, মুস্তাফিজ ৩৫ রানে ৩টি ও রুবেল ৬১ রানে ১টিসহ- ৭টি শিকার নিজেদের দখলে নিয়েছেন। ৫টি ক্যাচ মিস হলেও তামিম ও মিরাজ দর্শনীয় দুটি ক্যাচ ধরেছেন দুর্দান্ত দক্ষতায়। জবাব দিতে নেমে তামিমের সঙ্গে ডানহাতি লিটন ওপেনিংয়ে তেমন সুবিধা করতে পারছিলেন না। ৩৭ রানের জুটিতে ইনজুরি ফেরত তামিম ১২ রানের অবদান রেখে সাজঘরে ফেরেন। অবশ্য এর আগেই ইনিংসের সপ্তম ওভারে নিশ্চিত আউট থেকে বেঁচে যান ৫ রানে থাকা লিটন। কেমার রোচের বলে তিনি হেটমায়ারকে ক্যাচ দিয়ে হাঁটা দিলেও আম্পায়ার তাকে মাঝপথে আটকে অপেক্ষায় রাখেন। এশিয়া কাপ ফাইনালে বিতর্কিত স্টাম্পিংয়ে আউট হয়েছিলেন, এবার একইরকমভাবে নো-বল পেয়ে ফিরে এসে পরবর্তীতে ৫৭ বলে ৫ চারে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তবে ৮৯ রানে ৩ উইকেট (তামিম, লিটন, ওয়ানডাউনে ইমরুল ৪) হারিয়ে কিছুটা বেকায়দায় চলে যায় বাংলাদেশ দল। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়ে মুশফিক-সাকিব দলের জয় পাওয়াটাকে সহজ করেন। ব্যাটিং অর্ডার বদলে পাঁচে নেমে সাকিব ২৬ বলে ৪ চারে ৩০ রান করার পর সাজঘরে ফেরেন। ছয়ে নেমে টপঅর্ডার সৌম্য ১৩ বলে ২ চার, ১ ছয়ে ১৯ রানে বিদায় নেয়ার পর মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জুটি আর ভুল করেননি। ক্যারিয়ারের ৩১তম ফিফটি হাঁকিয়ে মুশফিক ৭০ বলে ৫ চারে ৫৫ ও মাহমুদুল্লাহ ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ১৪ ওভার ৫ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটে ১৯৬ রান তুলে ৫ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে এখন সিরিজ জেতার স্বপ্নটাও মজবুত করল স্বাগতিকরা।
×